সিয়েম রিয়েপে পয়লা বৈশাখে এক টুকরো বাংলাদেশ

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

প্রবাসে কোনো দোকানে থাকে না বাংলার পোশাকের সমাহার। পথে থাকে না ফেরিওয়ালা। যারা বিক্রি করবেন ডুগডুগি, বাঁশ-বেতের ঝুড়ি-মোড়া-বাঁশি। তারপরও প্রবাসে আমরা যারা থাকি তাদের মন জুড়ে থাকে বাঙালি উৎসবের জীবনের রং। আর আমরা যেখানে থাকি সত্যি বলতে কি সেখানে কোনো বাঙালি নেই। আমার স্বামী মাহবুব সিয়েম রিয়েপের লা মেরিডিয়ান হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার। আন্তর্জাতিক এই হোটেলের অবস্থান সিয়েম রিয়েপের অ্যাঙ্করে।

আমি ও আমার স্বামী দুজনই উৎসবপ্রিয় ও সংগীতপাগল মানুষ। গত বছরই আমরা থাইল্যান্ড থেকে এখানে এসেছি। এখানে যেহেতু আর কোনো বাংলাদেশি নেই তাই গতবার প্রথমবারের মতো আমি, আমার স্বামী আর দুই ছেলেমেয়ে স্বপ্নিল ও সামিহাকে নিয়ে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করেছিলাম। কেমন যে লেগেছিল বোঝাতে পারব না। এই সব দিনগুলোতে মন পড়ে থাকে দেশে।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

এ বছর আমাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে। কারণ এবার পয়লা বৈশাখে আমাদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ থকে আগত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সালাহউদ্দীন ও আইইউবির ড. শামসুন্নাহার। থাইল্যান্ড থেকে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুয়ালিটির টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ড. লাজিনা মুনা, এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (এশিয়া রিজিয়ন) কিম ম্যাক কুয়াই ও এফএওর সিরিরাজ দাসগুপ্তা। আরও ছিলেন আইওএমের রুদাশি ইসলাম, ব্যাংককের একামায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক সেহনীলা শাহরিন, সুবহা তাবাসসুম, লা মেরিডিয়ান হোটেলের চিফ অব অপারেশন বং লিমা, চিফ অব ইঞ্জিনিয়ারিং বং শুখম, সিয়েম রিয়েপের চিফ অব ইমিগ্রেশন ওম কাকরোনা ও তার চিকিৎসক স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তান।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম সিয়েম রিয়েপের সারাসাং-এর প্রায় দুই শ বছরের পুরোনো একটা ভবন খেমার হাউসে। আমাদের সবার পরনে ছিল রঙিন পোশাক। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমার স্বামী মাহবুব অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি তার বক্তব্যে পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে বলেন। তারপর আমরা সবাই মিলে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানটি পরিবেশন করি। এরপর একে একে পরিবেশিত হয় ‘আইলো আইলোরে রঙ্গে ভরা বৈশাখ আইলো’, ‘স্বাদের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা, কেন এই মৌনতা’। সবশেষে ‘আবার এল যে সন্ধ্যা শুধু দুজনে’ গান পরিবেশনের পর সবাইকে খাবারের আমন্ত্রণ এবং সবার সুস্বাস্থ্য, সুখ ও শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

দুপুরের খাবারে ছিল বৈশাখের খাবার পান্তা ভাত, বিভিন্ন রকমের ভর্তা, খিচুড়ি, ডাল, মুরগি ও গরুর মাংস, সালাদ, আচার, সবজি, চটপটি, ফিরনি, জিলাপি ও নানা ধরনের পানীয়। মূলত প্রাণের টানেই আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। স্বল্পপরিসরে বিদেশের মাটিতে দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরায় ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। হয়তো আমরা সংখ্যায় কম ছিলাম কিন্তু আমাদের উৎসাহ আর আনন্দের কোনো ঘাটতি ছিল না। সবাই মিলে সত্যি সুন্দর একটা দিন কাটিয়েছি।