সবুজের দেশে বৈশাখের রঙে
ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত তাঞ্জানিয়া। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় ছয় গুন। চারদিকে সবুজের চোখ জুড়ানো সমারোহ। সাগর, পাহাড়, সুউচ্চ পর্বত, লেক আর অবশ্যই জঙ্গল। সেই জঙ্গলে কি নেই? সে গল্প আরেক দিন হবে। আমরা অধিকাংশ বাঙালিরা থাকি সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা শান্তির শহর দারুস সালামে। বাংলাদেশ থেকে হাজারো মাইল দূরের এ শহরে প্রায় এক শ বাংলাদেশির বাস। বরাবরের মতোই এবারও আমরা মিলিত হয়েছিলাম বৈশাখের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিতে।
দারুস সালামের আবহাওয়া পাল্টে গিয়ে কয়েক দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছিল। সব আশঙ্কা মুছে দিয়ে সকলেই পৌঁছে গিয়েছিলাম যথাসময়ে। রোদবৃষ্টির লুকোচুরিতে সাগর সেজেছিল মোহনীয় রূপে।
সবাই মিলে যখন জাতীয় সংগীতে গলা মিলাচ্ছিলাম বুকে হাত দিয়ে দেশের কথাও ভাবছিলাম। চোখ চলে যায় কোন সুদূরে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির ও তাঞ্জানিয়ায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জনাব সদরুদ্দিন শরিফ।
এবার পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ ও উত্তেজনা উঠেছিল তুঙ্গে। নকশি পিঠা, ফিরনি, ভাপা কুলি, নারকেল নাড়ু, দুধ পুলি, ঝাল পুলি, রসমালাইয়ের মধ্যে সেরা খাবার নির্বাচন বিচারকদের জন্যও বড় পরীক্ষা ছিল। পাশাপাশি ছিল পয়লা বৈশাখের সেরা পোশাক নির্বাচন।
দুপরের খাবারে ছিল বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। পান্তা-ইলিশের অভাব বোধ করলেও রসগোল্লার রসে আহার শেষ করলাম তৃপ্তি সহকারে। আরও ছিল খেলার আয়োজন। বাচ্চাদের চকলেট দৌড়, মার্বেল দৌড়, মেয়েদের জন্য বালিশ খেলা ও ছেলেদের উল্টো দৌড়। চকলেট দৌড়ে প্রথম হওয়ার চেয়ে অনেকেই আগ্রহী ছিল চকলেট খাওয়ার জন্য। সে জন্য দৌড়ের মাঝখানেই চকলেট খেয়ে ফেলে অনেকেই। তাই সেরা নির্বাচন করতে বিচারকদের খানিকটা বেগ পেতে হয়েছিল। সবচেয়ে মজার দৃশ্য উপহার দেয় ছেলেদের উল্টো দৌড়। বাঁশি দেওয়ার আগেই দৌড় দিয়ে অনেকেই প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়া বা উল্টে পড়া অনুমিতভাবেই সকলকে মজা দিয়েছে।
আয়োজনের শেষভাগে ছিল র্যাফেল ড্র। সকলের অংশগ্রহণে উত্তেজনার মাঝেও ছিল আনন্দের খোরাক। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষ পর্দাটুকু টানতেই হয়েছিল। একে একে সবাই বিদায় নিতে থাকে, পেছনে পড়ে থাকে সব গ্লানি আর ক্লান্তি। আর নিয়ে যায় নব বছরের অনুপ্রেরণা ও শুভকামনা। সত্যি দূর প্রবাসে সকলের অংশগ্রহণে পুরো আয়োজনটি দূরে ফেলে আসা দেশের কথাই বারবার মনে করিয়ে দেবে।
অনুষ্ঠানে দারুস সালামে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের ইউএনএফপিএ-এর ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক, আশা ও স্কয়ারের কর্মকর্তারা।