বিভ্রান্ত পথিক

কোজি বিচ। প্রতীকী ছবি
কোজি বিচ। প্রতীকী ছবি

কোজি বিচের উত্তর দিকে পাথরের ঢালে অনিল অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। আনমনা। কী যেন ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটি বড় পাথর নিয়ে-নিজের ডান হাতটাকে ছেঁচে ফেলতে উদ্যত হলো।

এরপর ভগ্ন কণ্ঠে পাগলের মতো বারবার বলতে লাগল, আমার কি হয়েছিল তখন? এ আমি কি করলাম। কেন করলাম?
বেশ কিছুক্ষণ আগলে রেখে একসময় পাথরটা ছুড়ে ফেলে আবার সাগরের পানে চেয়ে থাকে অনিল। স্নিগ্ধ কোমল একটা মুখ যেন ভেসে ওঠে সাগরের নীল জলে। যা হবার তা হয়ে গেছে। ওই দিন আর ফিরে আসবে না। তবে কেন আর ওসব নিয়ে ভাবা। ক্ষুদ্র এ জীবনের সুন্দর সুন্দর বছরগুলো তো চলেই যাচ্ছে। বাকি জীবনটা কী করে সুন্দর হবে ওই চেষ্টা করাই কী ভালো নয়। এত পরিশ্রমে গড়া এ জীবন। বাকি জীবনটা সুন্দর করে বাঁচতে না পারলে তবে কীসের সার্থকতা।
দেশে যাওয়ার আগে আশা-নিরাশার মাঝে সময়টা ছিল একরকম। গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এসে এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না তার। পৃথিবীটাকেই পর মনে হচ্ছে। মনে মনে সে বলে, অর্জনের ভেতরই যে এত বড় বিসর্জন লুকিয়ে আছে, ঘুণাক্ষরেও যদি জানতাম, জীবনে কখনো আমি অস্ট্রেলিয়ায় আসতাম না।
নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি সমাপ্ত করে ক্লান্ত অনিল চাকরি থেকে দুই মাসের ছুটি নিয়ে দেশে যায়। চাকরি বলতে তেমন কিছু নয়। সপ্তাহে তিন দিন বিকেল চারটা থেকে নয়টা পর্যন্ত কাজ করত সে। বিভিন্ন খরচ মেটাতে গিয়ে এ পর্যন্ত একটা টাকাও জমা করতে পারেনি। তাই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে দেশে যেতে হয় তাকে।
সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা হলেও স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ইনকাম শুরু করলে কয়েক বছরের মধ্যেই জীবনটা সহজ হয়ে আসবে। এই আশায় বেশ আগে থেকেই দুলাভাই আর ভাবিকে মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা ব্যক্ত করেছিল। দেশে যাওয়ার পর দেখা গেল পরিস্থিতি তার অনুকূলে নেই। সবাই মিলে পরিকল্পনা করে রেখেছে যার মর্মার্থ এই—বাবা-মা এখন জীবনের শেষ পর্যায়ে। অনিল দেশে আসছে ভালো কথা। বাবা মাকে দেখে যাক। তবে বিয়ে শাদি এখনই নয়। সেই দাদার আমলের জীর্ণ বাড়ি ঘর। অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি করা একজন ছেলে। মানসম্মান বলে তো একটা কথা আছে। মাঝে মাঝে দেশে এলে, এমন পুরোনো নোনা ধরা বাড়িতে সে নিজেই বা থাকবে কোথায়। আর নতুন বউ নিয়ে এসে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। তাই এবার অনিল চলে যাবে। জীর্ণ বাড়িটা ভেঙে আঙিনাসহ সবটুকু জায়গা নিয়ে আধুনিক ডিজাইনের কমপক্ষে তিনতলা একটা বিল্ডিং করতে হবে। তারপর কোনো পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া যাবে। নইলে অতিথিরা এলে ওদের বসতে দেওয়া হবে কোথায়?
দুই বছরের ব্যবধানে এ বাড়িতেই সরকারি কলেজের লেকচারার বড় দুই ভাইবোনের বিয়ে হয়। তখন কেউ ওরকম চিন্তাও করেনি। অথচ তার বেলায় বিষয়টা জোরালোভাবেই সামনে চলে এল। এয়ারপোর্ট থেকে অনিলকে রিসিভ করে বাড়িতে এসে পরদিনই তার বড়বোন আর ভাই কর্মস্থলে চলে যায়। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি আর দেশে এসে বাবা-মায়ের এই একা অসহায় অবস্থা দেখে অনিল বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিল। বিশেষ করে মা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। চোখে দেখেন না তেমন। কণ্ঠ শুনে অতি পরিচিত লোকজনকে চিনতে চেষ্টা করেন।

কোজি বিচ। প্রতীকী ছবি
কোজি বিচ। প্রতীকী ছবি

ভাইবোন তো তাদের পরিকল্পনা অনিলকে সরল ভাষায় জানিয়ে দিয়ে চলে গেল। এদিকে অনিল কিছুক্ষণ বাবা-মায়ের সঙ্গে গল্প করে দোতলায় তার অনেক স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল পড়ার ঘরটিতে এসে বসে।
তাদের দোতলা বাড়িটা অনেক পুরোনো। সেকেলে ধরনের। তারপরও এই বাড়িতেই তো তার কৈশোরের সেই অনেক স্বপ্ন খেয়ালে ভরপুর দিনগুলো কেটেছে। বাড়িটা দাদা-দাদুর। ঘরের দেয়ালে টাঙানো আছে দাদা-দাদুর বাঁধানো সাদাকালো ছবিটা। পাশাপাশি দাদা আর দাদু। আজ তারা নেই। তবুও আদর আর মায়াটুকু যেন ঘুরে ফিরে এই বাড়িটিকে ঘিরে। দাদার হাতে লাগানো নারকেল আর সুপারি গাছগুলো। বাবার হাতে লাগানো দুটো জাম গাছ।
শহরের পরিধি ক্রমে বেড়েই চলে। কী এক দানবের নির্দয় দলনে মিশে যাচ্ছে শৈশবের খেলাঘর। এ এলাকার জায়গা-জমির দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই ডেভলপারেরা যখন-তখন ঢুঁ মারছে। মনের অজান্তেই মনটা হারিয়ে গেছে। জীর্ণ দোতলা বিল্ডিংটা ঘিরে এই সব গাছপালা। আজ না হোক কোনো একদিন সবই কেটে ফেলতে হবে। এই জামগাছগুলোতে শালিকের ওড়াগওড়িতে পাকা জাম পড়ত। কলের পানিতে ধুয়ে সেই জাম এনে অনিল দাদা দাদুকে দিত।
দাদা বলতেন, আমার ভাই। কত মায়া। নাও ভাই তুমিও খাও। বলে দাদা নিজেই তার মুখে তুলে দিত পাকা জাম। জাম খেতে খেতে দাদু বলতেন, দেখতে হবে না ভাইটা কার।
দাদার হাত ধরে বাজারে যাওয়া। আদরের ঘ্রাণ বাতাসে খেলা করে আজও। জানালা খুলেই চোখে পড়ে খেলার মাঠটি ক্রমে অনেক ছোট হয়ে গেছে। মনোরম ওই ঘাস আর নেই। শুধু বালু আর ধুল। স্মৃতিরা তখনো খেলা করে জীবনের চারপাশে।
অনিলের মা সর্বক্ষণই সতর্ক খেয়াল রাখতেন তার দাদা দাদুর প্রতি। অবশেষে বুকভরা আশীর্বাদ শেষে অনিল হাইস্কুল শুরুর বছরে চার মাসের ব্যবধানে মহাকালের ভেতর হারিয়ে গেলেন তারা দুজন।
নারকেল গাছগুলোতে নারকেল ঝুনা হতে হতে এক সময় মাটিতে পড়ে। আজ আর দেখার কেউ নেই। একবার এক নীরব বিকেলে একটা নারকেল মাটিতে পড়লে অনিল হাতে নিতেই দেখে অদূরে পাশের বাড়ির মিলন চেয়ে আছে। মিলনকে দিয়ে দেয় সে নারকেলটা। কত খুশি হয়েছিল সেদিন মিলন। আজ সে আছে ইতালিতে।
এই স্মৃতির ভেতর ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ অনিলের খেয়াল হলো, আমরা কেউ তো বাড়িতে থাকি না। সে রকম সম্ভাবনাও নাই। বার্ধক্যের এই পড়ন্তবেলায় অসহায় বাবা-মা। নির্জন এই বাড়িতে একা একা। তাদের দেখভালের জন্য রাবেয়া নামের এক বিধবা মেয়েটি আছে সারাক্ষণ।
আপা থাকেন শ্বশুর বাড়ি। মাঝে মধ্যে বাবা মাকে দেখতে আসেন। মাস দুই পরপর আসেন ভাই। আর ভাবি তো একেবারেই আসেন না। তাও বাবা-মা আছেন বলে সবাই একটু আধটু আসা যাওয়া করে এখনো। তবে? বাড়িতে অত্যাধুনিক বিল্ডিং করার এত বড় পরিকল্পনা কার জন্য?
একটা নীরব নিশ্বাস ফেলে অনিল মনে মনে বলল, আহা, এই পরবাস, এই উচ্চশিক্ষা, আমার আর আমার পরিবারের মাঝে এক কঠিন দেয়াল তৈরি করেছে। আজ আমার অবস্থাটা কাউকে বোঝাতে পারছি না। কেউ বুঝতে চাইছেও না।
শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বাবা-মা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এখন কী বললেন পরক্ষণেই আর মনে থাকে না। তাই এখন তাদের কথা কেউ আর শোনেও না। বাবা-মায়ের পাশে থাকতেই তার ভালো লাগে। তাই কোথাও তেমন যাওয়া হয় না। এভাবেই কী করে যে দুই মাস সময় কেটে গেল। টেরই পাওয়া গেল না। সেকেলে টিভি-ফ্রিজ-ফ্যান-খাট-বিছানা বাদ দিয়ে নতুন কেনা হয় সব। কেনা হয় আরও কিছু প্রয়োজনীয় আসবাব। দেয়ালের খসে পড়া আস্তরণ ফেলে নতুন প্লাস্টারসহ এমন আরও নানান খরচ মেটাতে গিয়ে সঙ্গে করে আনা টাকাগুলোও শেষ হয়ে এল।
বড় দুই ভাইবোনকে আপ্রাণ চেষ্টা করেও আর বাড়িতে আনতে পারল না সে। কখনো ফোনে নানান কথাবার্তা শেষে বিয়ে শাদির ইঙ্গিত করতেই আগের প্রসঙ্গ ফিরে আসে। দুলাভাইও একই কথা বলেন। যাওয়ার আগে আরেকবার দেখা করতে চাইলে অনিলকে গিয়েই দেখা করতে হবে। কেউ বাড়িতে আসবে না। সময় নেই কারও। আর দুই সপ্তাহ পরেই অনিলের ফ্লাইট। ফিরে যাওয়ার তারিখ হয়তো পেছানো যায়। কিন্তু কি হবে পিছিয়ে?
কী আর হবে। তিনতলা বিল্ডিং করে দিতে না পারলে সবাইকে বাদ দিয়ে তার নিজের বিয়ে নিজেই করতে হবে। এতে হাজার রকমের বিপত্তি হয়তো দেখা দেবে। জীবনের স্বার্থে সব পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। আজ এই দেশের বাড়িতে সে কী খায়, না খায়, কয়েক দিনের উপবাসী অনিল যদি আধমরা হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত যায়, তাতেও কারও কিছু যায় আসে না। সময়ের অপ্রতিরোধ্য প্রবাহ কেড়ে নিয়ে গেছে হৃদয়ের সব মায়া। আজ তার নিজের বিয়ে যদি নিজেই করতে হয়, তবে? কি অন্যায় করেছিল জেরিন? কথাটা ভাবতেই মনটা তার কেমন করে ওঠে।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তার পড়ার ঘরে শেলফে আড়ালে লুকানো ‘জীবনানন্দের কবিতা সমগ্র’ বইটা আজও আছে। বইটার ভেতর রূপসী বাংলার কবিতাগুলো শুরুর আগের খালি পাতাটাতে অনিল জেরিনের একটা ছবি এঁটে রেখেছিল। ছবিটা কারও চোখে পড়ে এই ভয়ে সে বইটা কারও হাতে দিত না। অন্য রকম এক যত্ন ছিল তার এই বইটার প্রতি। বইটা খুলতেই চোখে পড়ল ছবিটা। পুরোনো এই বইটাতে কেমন মমতার ঘ্রাণ।
অনিল বলে, সে কাউকে ভালোবাসে না। জীবন গড়ার পথে প্রেম-ভালোবাসা বিরাট এক বিপদ। তদুপরি এই নোংরা দেশটাই তার অপছন্দ। এখানে ইউনিভার্সিটির লেকচারার হলেই কি বা উচ্চপদস্থ সরকারি কোনো কর্মকর্তা হলেই বা কি। দুর্নীতির বিষদাঁত থেকে কেইবা মুক্ত। ধুলা-দুর্গন্ধ-ভেজাল আর ফরমালিন মাখা খাবার থেকে কারইবা রেহাই আছে। তাই যদি হয়, তবে? অতি সাধারণ ঘরের এই মেয়ের ছবিটা এখনো কেন তার এই প্রিয় বইটার ভেতর। হৃদয়ের নিভৃত ঘরে কেন এই ছবির এত আবেদন আজ?
মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগে এক দিন রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। হঠাৎ করে শীতও পড়েছে খুব। অনিল লেপ মুড়ি দিয়ে বসে পড়ছে। চারদিক নীরব। ঠিক এ সময় দরজায় কার যেন মৃদু টোকা।
—কে? অনিল বলে।
—আমি জেরিন।
—আরে তুমি! এত রাতে?
অনিল ভেবেছিল, হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ল নাকি। হয়তো এখুনি ছুটতে হবে ডাক্তারের কাছে। না, তেমন কিছুই না।
জরিন বলল, তোমাকে দেখতে এসেছি।
—আমাকে দেখতে আসছ! কি বলছ এসব। এত রাতে? ঠাট্টা করছ না তো। আমি যে কিছুই বুঝতে পারছি না।
—না। ওরকম কিছু না। তোমাকে দেখতেই আসছি।
—আচ্ছা দেখ। বলেই অনিল পড়ায় মন দেয়। সময় নীরবেই বয়ে চলে। বইয়ে চোখ রেখেই এক সময় বলে, বুঝলে জেরিন। এভাবে আমার সামনে মায়া মাখা চোখে চেয়ে থাকলেই আমি দেবদাস হয়ে যাব না। জীবনে কোনো অর্জনই বিসর্জন ছাড়া আসে না। লটারি জিতে রাতারাতি বিরাট ধনী হওয়া যায়। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অনেক সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েটাকে ভাগিয়ে বিয়ে করা যায়। তবে এমন কোনো উপায়ে শিক্ষিত হওয়া যায় না। সংক্ষিপ্ত পথে কখনো সাধনা হয় না।
অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে কণ্ঠ স্বাভাবিক করে জেরিন বলল, আমি বক্তৃতা শুনতে আসিনি। জানি তুমি দেবদাস নও।
—তবে তুমি যে পার্বতী হয়ে পড়েছ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
—আমি পার্বতী কী চন্দ্রমুখী তাতে আর কার কী আসে যায়। বলেই জেরিন দ্রুত বের হয়ে গেল।
খুব কাছাকাছি এই শেষ দেখা। তারপর আর যোগাযোগও হয়নি। বাড়ি থেকে বিদায়ের দিন অনেক আত্মীয়স্বজনের মাঝে অনিলের অস্থির চোখ তখন কারে যেন খুঁজছিল কেবল। গেটের সামনে পার্ক করা গাড়িতে ওঠার সময় দেখা গেল জেরিন ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে গাড়িটার দিকে চেয়ে আছে। অনিলের চোখে চোখ পড়তেই ওই চোখ ঘুরে গেল অন্যদিকে। ছায়ার মতো মিলিয়ে গেল সে দৃশ্যান্তরে। এভাবেই অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছার দুই দিন পর অনিল বেশ বড় একটা ইমেইল করে জানিয়ে দেয় কত বড় রকমের অসম্ভব ভাবনা যে ভাবছে জেরিন। তারপরই বেঁকে গেল জীবনের পথ।
অনিল দেশে থাকাকালে একদিন বাবার নম্বরে ফোন দিয়েছিল জেরিন। সে অনেক খোঁজ খবর নেয় বাবা-মায়ের। জেরিনই নাকি রাবেয়াকে নিয়োগ করে গেছে। তাই রাবেয়ার সঙ্গেও কথা বলে সে। অনিল পাশেই বসা জানতে পেরে কথা বলতে চায়। প্রায় আধঘণ্টা কথা হয়।
জেরিনের প্রতিটা কথায় কেমন আপন আপন ঘ্রাণ। ফোনটা রেখে অনিলের মনে হলো, পৃথিবীতে তাকে বুঝতে পারে এমন একটা মাত্র মানুষ আছে, সে অনেক অবহেলায় জীবন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া এই জেরিন। যে মেয়ে পার্বতীর মতো আজও কেবল তাকেই ভালোবাসে। এত অপমান অবহেলা অথচ আশ্চর্য, কিছুই সে মনে রাখেনি। উপরন্তু ফোন রাখার আগে বলে, অনিল ভাই, অনেক দিন পর তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে পেরে আজ তপ্ত বুকটা শীতল হয়ে গেছে।
বিভিন্ন ডটকমে পত্রিকায় পাত্রী চাই বিজ্ঞপ্তি দেখে কিংবা ঘটকের বগলের তলা থেকে বের করা অ্যালবাম অথবা ল্যাপটপ দেখে কোনো একটা সুন্দরী মেয়ে কি আর বিয়ে করা যায় না? অবশ্যই করা যায়। ডটকমের বিজ্ঞপ্তি কিংবা ঘটকের অ্যালবামে খুঁজে পাওয়া যাবে না জেরিনকে। পাওয়া যাবে না কৈশোরের ওই দুরন্ত সময়গুলো। অনেক পাওয়া না পাওয়ার মাঝে আরও কিছু না বলা কথা বা না মেটা সাধ। কী যেন নেই।
এসবই ভাবতে ভাবতে সময় বয়ে যায়। অনেক দূরের ওই বড় বড় ঢেউয়েরা এসে মিশে যায় পাথরের গায়ে। আজ এই সন্ধ্যায় মারোবরার নীল জল, পাথরের গায়ে আছড়ে পড়া ঢেউ, শুভ্র বাষ্প, ভেজা দুটো চোখ।
অনিল আপন মনেই বলে, জেরিন, তোকে অনেক ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। পিএইচডির দুর্বার বাসনায় বুকের ভেতর লুকানো দেবদাসটাকে তখন গলা টিপে মেরে কী এক প্রবল আকর্ষণে ছুটেই চলেছি কেবল। গন্তব্যে পৌঁছে দেখি ওখানে কিছুই নেই।

ইসহাক হাফিজ: অস্ট্রেলিয়ার সিডনিপ্রবাসী। ইমেইল: <[email protected]>