মর্ত্যলোকের স্বর্গ!

কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন
কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন

স্বর্গোদ্যান দেখতে চান? এ পৃথিবীতেই? ছোটবেলা থেকেই শুনতাম, কাশ্মীর নাকি ভূস্বর্গ। কাশ্মীর যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কখনো। হবে কিনা জানি না। তবে ভূস্বর্গ না দেখলেও স্বর্গোদ্যান দেখতে পেলাম নেদারল্যান্ডসের লিস–এ। দক্ষিণ হল্যান্ডের ছোট্ট শহর লিসে সৌন্দর্যপ্রেমী ডাচরা বিংশ শতকের মাঝামাঝি কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন গড়ে তোলেন। ইংরেজিতে ‘কেওকেনহফ্’ শব্দের আভিধানিক অর্থ কিচেন গার্ডেন।

মূলত সতেরো শ শতকে গোড়াপত্তন হওয়া কেওকেনহফ্ ক্যাসেলের চারপাশ ঘিরে প্রায় দুই শ একর জমিতে একটি রাজকীয় এস্টেট গড়ে তোলা হয়। ইয়ার ডেভিড জোকার আর তাঁর ছেলে লুইস পল জোকার ১৮৫৭ সাল পুরো প্রসাদের বাগানটি অনেকটা ইংরেজিদের ধাঁচে নতুনকরে ‍ডিজাইন করেন। ১৯৪৯ সালে একদল ফুল রপ্তানিকারকের ভাবনায় আসে কীভাবে এই উদ্যানটাকে স্থায়ীভাবে বসন্তকালীন ফুল সম্ভার প্রদর্শনী হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন
কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন

তাঁদের ভাবনা বৃথা যায়নি। ১৯৫০ সালে প্রথমবারের মতো কেওকেনহফের টিউলিপ বাগানটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাড়াও আসে ব্যাপক। প্রথম বছরেই সৌন্দর্যপিপাসু ২ লাখ ৩৬ হাজার পর্যটক বাগানটি দেখতে আসেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ৬৭ বছর ধরে পৃথিবীব্যাপী কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন পর্যটকদের জন্য একটি আকাঙ্ক্ষিত দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
এত সুন্দর বাগান, কিন্তু খোলা থাকে মাত্র দুই মাসের মতো। মার্চের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে মের মাঝামাঝি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দেখার জন্য এপ্রিলের ১৫ থেকে ৩০ সবচেয়ে ভালো। এ সময় ইউরোপের হাড়কাঁপানো শীতও ‍কিছুটা কমে আসে। কিন্তু মনে রাখবেন, ডাচ আবহাওয়া নারীর মনের মতোই। বদলে যেতে সময় নেয় না।

কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন
কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন

বাগানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই হাজার রঙের টিউলিপ আপনাকে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো জগতের কথা মনে করিয়ে দেবে। প্রায় ৭০ লাখ টিউলিপ, নানা রং, নানা বর্ণ, নানান সাজে সাজানো। কখনো স্বচ্ছ সলিল লেকের পাড়ে, কখনো গহিন বনের মাঝে, আবার কখনোবা উজ্জ্বল সূর্যস্নানে। প্রায় এক শর মতো রাজকীয় সরবরাহকারী বাগানটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্দিষ্ট রং, বর্ণ ও উচ্চতা, বিশেষ করে ফুল ফোটার সময়কে মাথায় রেখে প্রতিবছর টিউলিপ বাল্ব সরবরাহ করে থাকে। নিয়মিত আয়োজন ছাড়াও প্রতিবছর বিশেষ দিনে ফ্লাওয়ার প্যারেড, ফ্যাশন উৎসব, কিডস ডে আয়োজন করা হয়।
টিউলিপ গার্ডেনে প্রবেশের জন্য ১৬ ইউরো গুনতে হবে। বাচ্চাদের জন্য ৮ ইউরো। তবে পাবেন কয়েক হাজারে গুন। টিউলিপ বাগান দেখে মন না ভরলে উপায় আছে। কয়েক মাইল গেলেই দেখতে পাবেন দিগন্ত জোড়া টিউলিপ বাগান। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় সেখানে।

কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন
কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন

ওহ, আসল কথা বলা হয়নি। আমরা অনেকেই কিন্তু এ বিখ্যাত বাগান অনেক আগেই দেখেছি, মনে আছে সিলসিলা ছবির সেই গান? অমিতাভ-রেখার—‘এ কাহা আগায়া হাম, ইহু সাথ চালতে চালতে।’
যদি কখনো বসন্তে ইউরোপ আসার সুযোগ হয়, কেওকেনহফ্ টিউলিপ গার্ডেন দেখতে ভুল করবেন না যেন। বলা তো যায় না স্বর্গ কপালে লেখা আছে কিনা!