নতুন ধারায় শহুরে সাইক্লিং

সিঙ্গাপুরে নতুন ধারা শহুরে সাইকেল
সিঙ্গাপুরে নতুন ধারা শহুরে সাইকেল

গত কয়েক মাসে সিঙ্গাপুরের রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, তস্য-গলি হলুদ-কমলা রঙের নানা সাইকেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা যাচ্ছে।

আনন্দের বিষয়, যে কেউ যখন-তখন যেকোনো সাইকেল নিয়ে, যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুরে, তারপর যেখানে ইচ্ছা ফেলে রেখে যেতে পারেন।
বাংলাদেশের মতো রিকশার চল এখানে খুব একটা না থাকায়, অল্প দূরত্বের চলাফেরা পায়ে হেঁটেই করতে হয়। এখন পথে-ঘাটে পড়ে থাকা এই সাইকেলগুলো থাকায় সবাই ব্যাপক খুশি। ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সী শুধু অল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্যই নয়, কেউ চালান শখে, কেউ আবার ব্যায়ামের জন্যও চালিয়ে যাচ্ছেন এই সাইকেল।
আমার নিজের ইলেকট্রিক সাইকেল থাকলেও পার্কিংয়ের ঝামেলা কিংবা বাসা থেকে ১০-১৫ কিলোমিটারের দূরত্বের জন্য খুব একটা বের করা হয় না। হলুদ-কমলা এই সাইকেলগুলো থাকাতে এখন সুবিধা হয়েছে।
অফিস থেকে আগে বের হলে কিছুক্ষণ হাঁটলেই এমন সাইকেল পেয়ে যাই। খুশি মনে ইচ্ছা মতো চালিয়ে কোনো এক জায়গায় রেখে ট্রেন স্টেশনে ঢুকে যাই বাসা ফেরার পথে। কী মজা!
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই সাইকেলগুলো কি ফ্রি? কিংবা চুরি হয় না এগুলো?
দুটোর উত্তরই হচ্ছে, না।
সাইকেলগুলো চালানো ফ্রি না। প্রতিটা পড়ে থাকা সাইকেল লক করা থাকে। সংশ্লিষ্ট মোবাইল অ্যাপে টাকা ভরে সেটা দিয়ে সাইকেলগুলো আনলক করা যায়। এরপর যতক্ষণ চালানো হয়, সে অনুযায়ী ভাড়া অ্যাপ কেটে রাখে। এটাকে সাইকেল রেন্টিং না বলে ওরা বলে রাইড শেয়ারিং।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কীভাবে সফটওয়্যার ধীরে ধীরে আরও গভীরে ভূমিকা রাখছে, উবারের কার রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের কনসেপ্ট তার একটা নতুন উদাহরণ। আগের মতো কার বা সাইকেল রেন্টের ধারণা আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। বরং তার জায়গায় আসছে বুদ্ধিমান সফটওয়্যার সমৃদ্ধ ব্যবসা। যেখানে কম বাহনেই বেশি বেশি লোকের কাজে লাগানো যাবে কম পুঁজিতে।

লেখক
লেখক

প্রথম দিন অ্যাপ দিয়ে একটা সাইকেল আনলক করতে গিয়ে বেশ সংকোচই লাগছিল। নতুন অভিজ্ঞতা বলে মনে হচ্ছিল কারও পড়ে থাকা সাইকেল, তার অনুমতি না নিয়েই চালাতে নিয়ে যাচ্ছি। এই বুঝি কেউ খ্যাঁক করে ওঠেন, এই মিয়া, আমার সাইকেল নিয়ে কই যাও?
নিজে যন্ত্রের জন্য প্রোগ্রাম লিখলেও, যন্ত্রের অনুমতিতে হাতে ধরা যায় এমন কোনো বাস্তব কিছুর দখল নেওয়ায় এখনো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি হয়তো।
সাইকেলগুলোর সঙ্গে জিপিএস ট্র্যাকার থাকে বলে চোর চুরি করে সুবিধা করতে পারবে না বেশি। বরং ট্র্যাকারের কারণে যে কেউ তার আশপাশে কোথায়, কয়টা সাইকেল আছে সহজে খুঁজে বের করতে পারে।
তবে ঘুরে-টুরে ঠিকমতো সাইকেল লক না করলে কিন্তু বিপদ। অ্যাপ কিন্তু মিনিট হিসাবে ঠিকই টাকা কাটতে থাকবে।
একবার আমার সামনে আনলক করা এমন একটা সাইকেল পড়ে ছিল। হঠাৎ করে একজন বালক এসে খুব কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা তুমি চালাচ্ছ? আমি না বলতেই সে মহা উৎসাহে সেটাতে চেপে উধাও হয়ে গেলেন। আমি কৌতুক নয়ে তাকিয়ে থাকলাম বিনি পয়সায় সাইকেল চালাতে পারার আহ্লাদ নিয়ে চলে যাওয়া সেই বালকের পথের দিকে।

লেখক সফটওয়্যার স্থপতি। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। ফেসবুক <fb.com/ashraful.alam>