প্রবাসে স্বজনহীন ঈদ
ঈদের ঠিক আগের দিন থেকে মন খারাপ হতে শুরু করে। রাত পেরিয়ে সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর আশপাশে যখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে যায় চিরচেনা গ্রামে ঈদ উদ্যাপনের স্মৃতিগুলো। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য মায়ের বকুনি, মা-বাবাসহ বয়োজ্যেষ্ঠদের সালাম করে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়া, পশু কোরবানি করা, বাড়ি-বাড়ি সেমাই-পায়েস-চটপটি খাওয়া, তারপর দিনভর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এসব স্মৃতি মনে করে চোখের কোণ ভিজে আসে।
আমি মালয়েশিয়াপ্রবাসী। আজ মালয়েশিয়ায় ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপিত হচ্ছে। এ নিয়ে প্রায় দশটি ঈদ বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে করতে হলো। আজ সকালবেলা নামাজে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে কথা বলে দোয়া নিয়েছি। নামাজ শেষে প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি নিজের কষ্টগুলো। একেকজন প্রবাসীর একেক রকম কষ্ট। কেউ পাঁচ বছর, কেউ দশ বছর দেশে যান না। ভিসা জটিলতা, আর্থিক সমস্যাসহ নানা কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই দেশে যেতে পারেন না। এমন লাখো প্রবাসী রয়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, যারা বছরের পর বছর দেশের স্মৃতি নিয়ে প্রবাসে ঈদ উদ্যাপন করছেন। প্রতিনিয়ত কষ্টে থেকেও স্বজনদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে যাচ্ছেন।
মিরাজ নামে এক প্রবাসী কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। বললেন, আমরা প্রবাসীরা শুধু দিতে জানি, নিতে জানি না। বছরের পর বছর এই কাজটি আমরা হাসিমুখে করে যাচ্ছি। দেশ থেকে স্বজনেরা একটু হাসিমুখে কথা বললেই আমরা ভুলে যাই প্রবাসের সব কষ্ট।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের অলিগলিতে বাংলাদেশিদের আনাগোনা। ঈদের দিন আর একটু বেশি। নামাজ শেষে বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়ায় কিছু সময় কাটালাম দেশীয় আমেজ নেওয়ার জন্যই। দুর-দুরান্ত থেকে এখানে অনেক প্রবাসীরা এসেছেন একই উদ্দেশ্যে। দেশীয় পোশাকে বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত কোতারায়ায় ঈদের আগে পরে বেশ কয়েক দিন এমন চিত্র থাকবে।
মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় প্রবাসীরা বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপন করে থাকেন। শুধু কুয়ালালামপুর নয় জোহর, পেনাং, পাহাং, সাবাহ-সারওয়াক সব রাজ্যগুলোতে নামাজ আদায় ও পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্যাপন করা হয়।
আলো ঝলমলে শহরগুলোতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয় ঈদ। তবে প্রবাসে স্বজনহীন ঈদ কষ্টের তা সে যতই জাঁকজমকপূর্ণ হোক না কেন।
মোস্তফা ইমরান: মালয়েশিয়া।