প্রবাসীর ঈদ

লেখক
লেখক

আমি গ্রামে বেড়ে ওঠা একজন। ছোটবেলায় গ্রামের আকাশে যখন হেলিকপ্টার মাথার ওপর দিয়ে শব্দ করে চলে যেত, যতক্ষণ সেটি আমাদের নজরে থাকত ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতাম! আর মনে মনে আফসোস করতাম, ইস, হেলিকপ্টারটি এ ভাবে মাথার ওপর দিয়ে খুব কাছ দিয়ে চলে যাচ্ছে, অথচ আমি কপ্টারের ভেতরে নেই!
ওপরের কথাটির প্রাসঙ্গিকতা হচ্ছে এই—আমরা যারা প্রবাসী তাদের জন্য ঈদটা আসলে ছোটবেলায় মাথার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া ওই হেলিকপ্টারের মতো! ঈদ আমাদের মাথার ওপর দিয়ে এ রকম ভাবে চলে যায়। ওপরের দিকে তাকিয়ে মাথাটাকে বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘুরিয়ে দেখতে থাকি খুব কাছে দিয়ে একটা আস্ত ঈদের চলে যাওয়া। আমরা ঈদের কোনো আমেজেই টের পাই না।
ঈদের দিন বুক ফাটানো আর্তনাদ উন্মাতাল হয়ে প্রচণ্ড গতিতে কণ্ঠনালি ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। আর্তনাদগুলোকে শব্দে আর পরিণত হতে দিই না। ভ্রূণ হত্যার মতোই বুকের ভেতরেই আর্তনাদগুলোর টুঁটি চেপে ধরি শুধু সুন্দর স্বর্ণরঙা আগামীর জন্য। চাঁদরাতে চাঁদ দেখার পর আমাদের মনে আনন্দের আস্ফালন হয় না, বরং বুকের ভেতর ডানা ঝাপটে ওঠে ডানা ভাঙা কষ্টের কবুতরটি।
ঈদের দিন ছোটাছুটি করে দলবেঁধে পুকুরে গোসল শেষে সামান্য মিষ্টি মুখ করে নতুন জামা কাপড় পরে ঈদগার মাঠে যাওয়াটা এখন শুধুই স্মৃতি। এখানে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ নতুন টাকার কচকচে নোট হাতে গুঁজিয়ে দিয়ে দরদ মাখানো কণ্ঠে বলে না সেমাই খেয়ে যা। এ সবের একটাই কারণ আর তা হলো আমরা এখন প্রবাসী।

টাকা, সুখ, স্টাইলিস্ট যাপিত জীবন সব আছে আমাদের। এরপরও মনে হয় আসলে কিছুই নেই আমাদের! একজন প্রবাসীই শুধু বুঝতে পারে প্রবাস ঈদের কষ্টটা। আমাদের প্রিয়জনদের বলছি, আমরা এখন আর কাঁদি না। কারণ আমাদের চোখে জল আসতে নেই। তারপরও সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আগাম ঈদ মোবারক।