হজ নিয়ে কিছু কথা

লেখক
লেখক

আমি অনেক বছর ধরে সৌদি আরবে থাকি। বেশ কয়েকবার মক্কায় গিয়েছি। কিন্তু এবারের রোজার ঈদে ওমরাহ করতে গিয়ে যে পরিশ্রম হয়েছে, কয়েক বছর আগে হজব্রত পালন করতে গিয়েও তেমন হয়নি। এ ছাড়া হেরেম শরিফ এখন বেশ বিস্মৃত পরিসরে বিনির্মাণ করা হয়েছে। এই পরিসর ধাঁধা লাগার মতো। একবার পথভ্রষ্ট হলে বের হয়ে আসতে কষ্ট হয়।

অতি পরিচিত জায়গা সত্ত্বেও এবার দোতলায় উঠে আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা পর অকুস্থলে পৌঁছেছি। ভেবেছিলাম আমিই বোধ হয় বোকা। পথ হারিয়ে ফেলি। সঙ্গে ছিল আমার এক কাজিন। ওই এলাকায়ই তার বসবাস। তাকে নিয়ে পুনরায় দোতলা ও তিনতলায় বিশেষ প্রয়োজনে উঠলাম। একই ঘটনার পুনরাবৃতি ঘটল। সিঁড়ি খুঁজে সঠিক জায়গায় ফিরে আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা।
আমরা যারা এখানে থাকি তারাই পথ হারিয়ে ফেলি। নতুন যারা হজব্রত পালন করতে আসেন তাদের কেউ যদি একবার হারিয়ে ফেলেন তাহলে তাদের কী অবস্থা হবে সহজে অনুমেয়! তারা হয়তো নিখোঁজ যাবেন না। কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান হয়ে পড়বেন। এই বিষয়টা ভবিষ্যতে যারা হজ করতে আসবেন তাদের বিবেচনায় রাখা উচিত। অবশ্য বাংলাদেশ থেকে যারা হজব্রত পালন করতে আসেন তারা দলগতভাবে সবাই একজন মুয়াল্লিমের অধীনে থাকেন। তারা জুটি বেঁধে ভাগে ভাগে নামাজে বা তাওয়াফ করেন। তাই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তারপরও একটা নির্দিষ্ট গেট বা জায়গা নির্ধারণ করা থাকলে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে আসা যায়।
আমাদের দেশের লোকজন হজ করতে আসেন বেশি বয়সে। অনেকে এতই বয়স্ক যে, একা একা চলার মতো শক্তি তাদের থাকে না। তার পেছনেই পাকাপোক্তভাবে একজন লেগে থাকতে হয়। হজের নিয়মকানুন পালনের ক্ষেত্রেও তাদের ব্যাঘাত ঘটে। মক্কার পরিবেশ আমাদের দেশের মতো নয়। এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি ভিন্ন। আবহাওয়া ভিন্ন। খাওয়া-দাওয়ায় কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। প্রচণ্ড গরম। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেশি। হজের সময় মানুষের ভিড়ে গরমটা থাকে অস্বাভাবিক। এই গরমে অনেকে মারাও যান।
অনেকের খাওয়া হজম হয় না। এতে পেটের পীড়া হয়। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গরমের মাঝেও অনেকে ঠান্ডা পানি হরদম পান করেন। জমজমের ঠান্ডা পানি কেউ কেউ গায়ে ঢালতে শুরু করেন। ফলে জ্বর-সর্দি বাঁধিয়ে বসেন। এখানে একবার জ্বর-সর্দি হলে ভালো হতে সপ্তাহ লেগে যায়।

লেখক
লেখক

হজ পালনের মধ্যেও অনেককে বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায়। অনেকে আছেন যানবাহন থাকা সত্ত্বেও পায়ে হেঁটে মক্কা থেকে মিনা আট কিলোমিটার কিংবা আরাফাত থেকে মুজদালিফা ১৪ কিলোমিটার হেঁটে যান। তারা বলেন, হেঁটে যাওয়াই নিয়ম। আগে মানুষ হেঁটে যেত। হেঁটে যাওয়ার মাঝে ফজিলত বেশি। এ সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আগে যাতায়াতের এমন সুব্যবস্থা ছিল না। জায়গাগুলো ছিল অনেকটাই দুর্গম। মানুষগুলোও ছিল পরিশ্রমী ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। বাধ্য হয়ে তারা তখন হেঁটে গিয়েছিলেন। হেঁটে যাওয়া কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এটা অনেকে মানতে চান না। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
আবার অনেকে আছেন পাহাড়ে ঠেলে উঠে যান। এটাও বাধ্যতামূলক নয়। আরাফাতে গিয়ে শখ হলে রহমতের পাহাড়ে শক্তি-সামর্থ্য থাকলে উঠতে পারেন। এক পাশে নিচ থেকে ওপরে ফিলার পর্যন্ত সিঁড়ি করা আছে। শখটা হয়তো পূরণ হবে, কিন্তু বাড়তি কোনো ফজিলত নেই।
প্রতি বছর হজব্রত পালনের জন্য সৌদি আরবে মানুষের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে হজব্রত পালন করার মতো সুযোগ এখন আর নেই। ভবিষ্যতে আরও জটিল হবে। এখনকার পরিস্থিতিই বলে দেয় কেন যৌবনে হজ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যা হোক, জীবন-মৃত্যুর নিয়ন্ত্রক একমাত্র আল্লাহ। তবুও নিজেকে নিরাপদে রাখা ও নিজের সুযোগ-সুবিধা বজায় থাকা উচিত।

আইয়ুব আহমেদ দুলাল: সৌদি আরবপ্রবাসী। ইমেইল: <[email protected]>