প্রবাসে অন্যরকম ঈদ আনন্দ উদ্যাপন

ঈদ আনন্দে সমবেতরা
ঈদ আনন্দে সমবেতরা

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ। দলে দলে ঈদগাহে যাওয়া। সেলামির নতুন টাকা। নাড়ির টানে অনেক কষ্ট করে হলেও প্রিয়জনের কাছে ছুটে যাওয়া। ঈদ এলেই ঈদকে ঘিরে ছোট বড় সবার ভেতর হৃদয় জুড়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।

আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের কাছে ঈদ মানেই খুশি নয়। বরং অন্যান্য দিনের চেয়ে এই বিশেষ দিনে কষ্ট লাগে বেশি। আমরা আমাদের মতো আনন্দে কাটালেও দেশে ঈদ করার যে আনন্দ, তা পাই না। ঈদ মানে হলো পরিবারের সবাই একসঙ্গে হওয়া। আর এই একসঙ্গে হওয়া মানেই আনন্দ। কিন্তু আমরা যারা বিদেশে থাকি তারা তো আর একসঙ্গে হতে পারি না। তাই মনের ভেতর কোথায় যেন কষ্ট থাকে। বারবার মনে হয় দেশের কথা, বাবা মায়ের কথা, ভাইবোন, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের কথা।
মনের ভেতর কোথায় যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। এই অপূর্ণতা, কষ্টের কথা কাউকে বলে বোঝানো যায় না।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিন সরকারি ছুটি থাকে। এই সব দেশে তা দেওয়া হয় না। ঈদের দিন স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, অফিস আদালত সবকিছু খোলা থাকে। তাই আমাদের ছুটি নিতে হয়। বাচ্চাদের স্কুল থেকেও ছুটি নিয়ে নিই।

ঈদ আনন্দে সমবেতরা
ঈদ আনন্দে সমবেতরা

কয়েক দিন আগে উদ্‌যাপিত হলো ঈদ। প্রবাসে ঈদের কোনো আমেজ না থাকলেও আমাদের মনে মনে থাকে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সবাই মিলে ঈদের দিনটা আনন্দের সঙ্গে পালন করি। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা নতুন সাবান আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করি। নতুন জামা কাপড় পরি। তারপর মসজিদের উদ্দেশে রওনা দিই। ইমাম সাহেব খুতবা বলেন থাই ও ইংরেজি ভাষায়। আমরা ঈদের নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে হাতে হাত রেখে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। মসজিদে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থাও থাকে।
বিভিন্ন রকমের ফল, থাই সেমাই, মুরগি ও গরুর মাংস, ভাত, থাই মিষ্টি ও বিরিয়ানিও থাকে। ঈদের প্রথম খাবার আমরা মসজিদে খাই। বড় একটা থালায় খাবার সাজানো থাকে। তিন চারজন করে একেক থালা নিয়ে বসে আমরা ঈদের প্রথম খাবার খাই। ইমাম সাহেব বাচ্চাদের ঈদের সেলামি দেন। খাবার খেয়ে আমরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসি।
এই প্রবাস জীবনে আমাদের একান্ত আপনজন আলী ভাই ও আশা ভাবি। সেই কবে থেকে শুরু, যেদিন মানিক (আমার স্বামী) প্রথম ব্যাংকক আসে। আসলে তাঁদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। আমাদের যেকোনো বিপদে, আনন্দে তাঁরা আমাদের পাশে আছেন।

ঈদ আনন্দে সমবেতরা
ঈদ আনন্দে সমবেতরা

আমাদের এখানে ঈদের পর দিন কোরবানি হয়। ভাবি, ভাই প্রতি ঈদে ফোন দিয়ে বলেন ইসমাত আস, কোরবানির মাংস খেয়ে যাও আর নিয়ে যাও। তাঁদের বাসা আমার বাসা থেকে বেশ দূরে। যেহেতু আমার অফিস থাকে, বাচ্চাদের স্কুল থাকে, তাই আর যাওয়া না। কিন্তু ভাবি ঠিকই কোরবানির মাংস ফ্রিজে রেখে দেন আমাদের জন্য। আমরা যেদিন যাই সেদিন রান্না করেন। আমরা খাই আর বক্স ভরে নিয়েও আসি। এমন কোনো দিন নাই যে, আমরা তাঁদের বাসায় গেছি আর সঙ্গে বক্স ভরা খাবার আনিনি। শুধু খাবার নয়, বাংলাদেশ থেকে আনা মুড়ি, সরিষার তেল, মিষ্টি, আচার সব দেন। আমার কাছে মনে হয় আমি যেন মায়ের বাড়ি বেড়াতে গেলাম। আর আসার সময় সব সঙ্গে করে নিয়ে এলাম।
এবার ঈদে মনটা একটু বেশিই খারাপ ছিল। মাত্র কয়েক দিন আগে আমরা দেশ থেকে ঘুরে এলাম। তাই ঈদের দিন দেশের কথাই বারবার মনে হচ্ছিল। ঈদের আগে থেকেই আলী ভাই, ভাবি ফোন দিলেন। তাঁরা আমাদের যেতে বললেন। যেহেতু শনিবার বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, তাই আমি বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেলাম।
সেখানে আলী ভাইয়ের তিন ছেলেমেয়ে; মানিক, রওনক ও ডলি ছাড়াও ছিলেন একামাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দুই শিক্ষক ও তাদের পরিবার। এসেছিল মানিকের বন্ধুবান্ধব। আমাদের দুই ছেলে আবীর ও আরীককে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাঁদের বাসায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চারা খেলা শুরু করে দিল। কেউ কেউ লুডু নিয়ে বসল। সবাই মিলে তখন কোরবানির মাংস কাটছে, কেউ রান্না করছে। আমিও হাত লাগালাম। সবাই মিলে রান্না করে খাওয়া। রান্না হলো পোলাও, গরুর মাংস, ফিরনি, পায়েস, লুচি ও কলিজা দিয়ে বুটের ডাল ভুনা। আরও ছিল বিভিন্ন রকমের পানীয়।

ঈদ আনন্দে সমবেতরা
ঈদ আনন্দে সমবেতরা

আমরা সবাই একসঙ্গে তৃপ্তি সহকারে খেলাম। ঈদের দিনটা আমরা সবাই মিলে অনেক আনন্দে কাটালাম। আসার সময় ভাবি সঙ্গে করে দিয়ে দিলেন কাঁচা মাংস, রান্না করা পোলাও ও মাংস।
আসলে আলী ভাইয়ের বাসায় ঈদ করা মানে এই প্রবাস জীবনে আপনজনের বাসায় ঈদ করা। ভাবি, ভাই আমরা তোমাদের অনেক ভালোবাসি। ধন্যবাদ দিয়ে তোমাদের ছোট করব না। জানি তোমরা ও আমাদের অনেক অনেক ভালোবাস। তোমাদের এই ভালোবাসা যেন সারা জীবন পাই। তোমাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া আর ভালোবাসা।

ইসমাত আরা: ব্যাংকক, থাইল্যান্ড।