যারা যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টডক করতে চান

লেখক
লেখক

পিএইচডি পরবর্তী কোনো গবেষণা গ্রুপের (Research Group) অধীন কাজ করাই হলো সাধারণ অর্থে পোস্টডক্টরাল (Postdoctoral) গবেষণা বা পোস্টডক। যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পিএইচডি করেন, তাদের অনেকেরই স্বপ্ন থাকে যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টডক করার। এই বিষয়ক অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সচরাচর জিজ্ঞেস করা প্রশ্নগুলো বিবেচনায় রেখে, সংক্ষিপ্তাকারে লেখাটি তুলে ধরা হলো।

১. যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টডকের লক্ষ্য থাকলে, পিএইচডি শেষ হওয়ার অন্তত সাত-আট মাস আগ থেকে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে নিজের গবেষণাক্ষেত্রের (Research Area) অধ্যাপকদের সম্পর্কে একটা লিস্ট তৈরি করুন। যেসব অধ্যাপকদের কাছে আবেদন পাঠাবেন, তারা কী বিষয়ে কাজ করছেন, সেগুলো ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন।
২. পোস্টডকের জন্য আবেদনের আগেই আপনার পিএইচডি সুপারভাইজারের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। তাকে জানিয়ে রাখুন। কারণ যেকোনো অধ্যাপক, শুরুতেই আপনাকে তিনটি রিকোমেন্ডেশন লেটার পাঠাতে বলবেন। যারা আপনার জন্য রিকোমেন্ডেশন লেটার দেবেন, তারা যেন প্রস্তুত থাকেন। তিনটি লেটারই, বাইরের অধ্যাপকদের কাছ থেকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ, যারা গবেষণার সঙ্গে সব সময় যুক্ত, যাদের পরিচিতি আছে, যাদের একটা ওয়েবপেজ আছে এবং যারা প্রতিনিয়ত ইমেইল চেক করেন।
৩. অধ্যাপকদের ইমেইল করুন খুবই সতর্কতার সঙ্গে। কপি-পেস্ট ইমেইল নয়। সময় নিয়ে অধ্যাপক সম্পর্কে জেনে, তার কাজ সম্পর্কে জেনে কভার লেটার লিখুন। ইমেইলের সঙ্গে কভার লেটার, সিভি/রেজুমি এবং দুই-তিনটি ভালো পাবলিকেশন যুক্ত করুন। সবগুলো ফাইল একটি পিডিএফ-আকারে তৈরি করে অ্যাটাচ করুন।
৪. আপনার পিএইচডি গবেষণার একটি রিসার্চ সামারি লিখুন। দুই-তিন পেজের মধ্যে (কম টেক্সট, বেশি ফিগার/স্কিম) সামারিটি তৈরি করুন। মেইলের সঙ্গে রিসার্চ সামারি অ্যাটাচ করতে পারেন।
৫. একটি রিসার্চ প্রপোজাল লিখুন। অনেক অধ্যাপক চান আপনি আবেদনের সময় নিজে একটি প্রপোজাল লিখে জমা দেন। একটি ভালো মানের প্রপোজাল লিখতে অনেক সময় লাগে। মাসাধিক কালও লাগতে পারে। সে জন্য আগে থেকেই প্রপোজাল লেখায় মনোযোগ দিন। প্রপোজাল লেখা শেষে, অধ্যাপক ও অন্যান্য অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে রিভিউ করুন।
৬. যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টডকের জন্য কোনো জিআরই-টোফেল দরকার হয় না। তবে অনেক স্কুল আপনার সঙ্গে সামান্য সময় কথা বলে ‘স্পেকেন এবিলিটি’ যাচাই করতে পারে। বহু অধ্যাপক আপনাকে চূড়ান্তভাবে হ্যাঁ বলার আগে, ফোন/স্কাইপে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। অনেকে আপনার গবেষণা নিয়ে জানতে চাইতে পারে। তাই বিশ-ত্রিশ মিনিটের একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করে রাখুন।
৭. অধ্যাপক যদি আপনাকে নেওয়ার জন্য রাজি হন, তাহলে আপনাকে একটি অ্যাকসেপ্টেন্স লেটার দেওয়া হবে। সে লেটার পাওয়ার পর আপনি J1 ভিসায় আবেদনের জন্য প্রস্তুত হবেন। J1 ভিসাকে বলা হয় স্কলার ভিসা। আপনাকে এই ভিসায় আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে হবে। এই ভিসায় আবেদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টের নাম DS-2019; যে স্কুল/ইউনিভার্সিটিতে আপনি পোস্টডক করতে আসবেন, সে স্কুল আপনাকে এই ফরমটি দেবে। যখনই কোনো অধ্যাপক আপনাকে নিতে আগ্রহী হবেন তখনই স্কুল এই ফরমটি রেডি করবে। সাধারণত এটা রেডি করতে কয়েক সপ্তাহ লাগে। আপনার হাতে যখনই DS-2019 চলে আসবে, তখনই আপনি নিকটস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে J1 ভিসার জন্য আবেদন করবেন। আবেদনের সকল নিয়মাবলি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে স্টেপ বাই স্টেপ দেওয়া আছে। যেদিন আপনার ভিসা ইন্টারভিউ, সেদিনই আপনাকে ডিসিশন জানিয়ে দেওয়া হবে। J1 ভিসায়, 212 (e) বিষয়ক একটা ইস্যু থাকে। সেটা এখানে আলোচনার প্রয়োজন নেই বলে এড়িয়ে গেলাম।
৮. যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টডক স্যালারি সাধারণত বছরে ৪৫-৫০ হাজার ডলার। কিছু কর বাদ দিয়ে মাসিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ডলার আপনি পাবেন। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি আপনার হেলথ ইনস্যুরেন্স কভার করবে। ইন্ডাস্ট্রিতে যদি পোস্টডক করেন, তাহলে স্যালারির তারতম্য হতে পারে।
নিজের অভিজ্ঞতা: আবেদনের জন্য আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম প্রায় এক বছর আগে থেকে। আবেদন করেছিলাম হার্ভার্ড, এমআইটি, প্রিন্সটন ও ইউপ্যানের পাঁচজন অধ্যাপকের কাছে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক রিপ্লাই করেছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন নিতে আগ্রহী ছিলেন। বাকি দুজন রিপ্লাই করেননি। যারা রিপ্লাই দিয়েছেন, তারা প্রথম ইমেইলেই তিনটি রিকোমেন্ডেশন লেটার পাঠাতে বলেছেন। লেটার পাওয়ার পর পুনরায় যোগাযোগ করেছেন। আমাকে প্রথমে অ্যাকসেপ্টেন্স লেটার পাঠানো হয়েছিল। সেই লেটার আমার গ্রান্ট আবেদনের জন্য দরকার ছিল, যেহেতু আমি সুইডিশ গ্রান্টের জন্য আবেদন করেছিলাম। অধ্যাপককে গ্রান্ট প্রাপ্তির খবর জানানোর এক মাসের মাথায় DS-2019 পেয়েছিলাম।

ড. রউফুল আলম: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া (UPenn), যুক্তরাষ্ট্র।
ইমেইল: <[email protected]>, ফেসবুক: <facebook.com/rauful15>