জেদ্দায় বেড়ানো

জেদ্দার পতাকা স্ট্যান্ড
জেদ্দার পতাকা স্ট্যান্ড

হজের পর হাজিরা মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করেন। যাদের প্রিয়জন সৌদি আরবে কর্মরত তাদের সঙ্গে দেখা করেন। কেউ কেউ ইসলামের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে ফিরে দেখেন। কেউ বা কেনাকাটা বা সাগরপাড়ে দেখার জন্য জেদ্দা যান।

মক্কা থেকে বাসে এক ঘণ্টায় পৌঁছালাম জেদ্দা। ট্যাক্সিতেও যাওয়া যায়। বাসস্ট্যান্ডের নাম বালাদ। বালাদ মানে বড় শহর। উঁচু উঁচু সব ভবন। বিশাল বিশাল মার্কেট। এর কেন্দ্রস্থলে রাখা আছে একটা রেলের ইঞ্জিন। কেউ একজন বললেন, এখানে আগে রেলগাড়ি চলত, তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই রেলইঞ্জিন।
বালাদকে ঘিরে জড়ো হন সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। জেদ্দায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা তো সময় পেলে, বিশেষ করে বৃহস্পতি ও শুক্রবার আসেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে প্রবাসী শ্রমিকেরা এসে এখানে আড্ডায় মাতেন। কে কবে দেশে ফিরবেন, কে কবে দেশ থেকে আসছেন, কাকে দিয়ে আত্মীয়স্বজনের জন্য জিনিসপত্র পাঠাবেন, দেশের খবর কী, নির্বাচন, সব তথ্য এখানে এলে জানা যায়। আত্মীয়স্বজন ছেড়ে প্রবাসে যাঁরা শ্রম দিচ্ছেন, তাঁরা বালাদে এলে মানসিক প্রশান্তি পান।
সৌদি আরব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির বাসসেবাকে সংক্ষেপে বলে স্যাপকো বাস। আমাদের দেশে যেমন বিআরটিসি। স্যাপকো বাসে মক্কা থেকে জেদ্দা, মদিনা ও বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায়। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন। হজযাত্রীরা ইবাদত বন্দেগির ফাঁকে বিশেষ জায়গায় বেড়িয়েও নিচ্ছেন। পরিচিতদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন।

জেদ্দা ফোয়ারা
জেদ্দা ফোয়ারা

মক্কা থেকে জেদ্দার ভাড়া ১৫ রিয়াল। বাসগুলো মার্সিডিজ বেঞ্জ কোম্পানির। বাসের ভেতরে বাথরুমও আছে। সামনের দিকে নারী ও শিশুদের বসার ব্যবস্থা। নির্ধারিত সিটে বসলাম। জানালার পাশে সিট হওয়ায় শহর দেখা সহজ হলো। রাস্তার পাশে কিছু দূর পরপর সাইনবোর্ডে লেখা—সোবহান আল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি আল্লাহর প্রশংসামূলক শব্দ। জেদ্দা পৌঁছানোর আগে আগে একটা মাঠ চোখে পড়ল। ছেলেরা ফুটবল খেলছে। ভালো কথা, ট্যাক্সিতেও জেদ্দা যাওয়া যায়। বাব মক্কা নামতে হয়। সেখান থেকে যে যার গন্তব্যে যেতে পারেন।
জেদ্দায় কর্মরত সাংবাদিক বাহার উদ্দিন বকুলকে সঙ্গে নিয়ে বের হলাম রাতে সাগরপাড়ে। লোহিত সাগরের পাড়েই জেদ্দা শহর। সাগরপাড়ে বসার জন্য সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ আছে। রাত যত গভীর হয়, এখানে মানুষের জটলা তত বাড়ে। কেউ কেউ ছিপ ফেলে মাছ ধরছেন। এখানে ইয়েমেনের নাগরিক চিপস আর পিসপিস (লাউয়ের বিচি ভাজা) বিক্রি করেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলো।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসের পাশে মসজিদ
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসের পাশে মসজিদ

ওখান থেকে কার্নিশ রোডে গেলাম। সেখানে সাগরের মাঝে একটি ফোয়ারা আছে, নাম জেদ্দা ফোয়ারা। ২৬১ মিটার উঁচুতে ৩২০ কিলোমিটার গতিতে ফোয়ারার পানি ওপরে ওঠে। আর আলোর সঙ্গে পানি সংমিশ্রণে অপূর্ব দৃশ্য। প্লেন থেকেও এই ফোয়ারা দেখা যায়।
তারপর জেদ্দার পতাকা স্ট্যান্ড দেখতে গেলাম। জেদ্দায় কিং আবদুল্লাহ রোডে উঁচু খুঁটিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে জেদ্দা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। উঁচু খুঁটিটির উচ্চতা ১৭০ মিটার। এতে ওড়ানো ৩৩ মিটার চওড়া পতাকাটির দৈর্ঘ্য ৪৯.৫০ মিটার। বিশ্বে একমাত্র সৌদি আরবের জাতীয় পতাকা কখনো অর্ধনমিত করা হয় না। কারণ সৌদি পতাকার সঙ্গে কলেমা তৈয়ব লেখা রয়েছে।
বাহার উদ্দিন আরও দেখালেন মা-হাওয়ার কবরস্থান। সর্বসাধারণের কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি।

লেখক
লেখক

জেদ্দার নামকরণ নিয়ে অনেক মতবাদ প্রচলিত আছে। তবে নানা গবেষণায় উঠে এসেছে মূলত আরবি শব্দ ‘জাদ্দা’ থেকেই ‘জেদ্দার উৎপত্তি। জাদ্দা অর্থ ‘দাদিমা’ বা গ্র্যান্ড মাদার। মুসলিমরা বলে ‘মা-হাওয়া।’ সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসের পাশে একটা মসজিদ। সেই মসজিদে আমরা এশার নামাজও পড়লাম। মসজিদ থেকে অন্য একটি গেট দিয়ে বের হলাম। বাহার বললেন, ভাইয়া এই জায়গায় গলা কাটা হয়। অর্থাৎ কোনো অপরাধ করলে বিচারে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে এখানে তা কার্যকর হয়। তারপরে দেখলাম হিস্টরি ডিস্ট্রিক্ট, পুরান আমলের ঘরবাড়ি রয়েছে ওখানে।

ফেরদৌস ফয়সাল: মক্কা (সৌদি আরব) থেকে