মেধার মূল্যায়নের বিকল্প নাই

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

একটি দেশের উন্নতির জন্য দরকার মেধাবী জনশক্তি। পৃথিবীর সব উন্নত দেশগুলোই মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছে। মেধাবীদের ব্যবহারের জন্য তারা অবকাঠামো তৈরি করেছে বিশ্বমানের। যেকোনোভাবেই মেধার পাচার রোধ করা তাদের পরিকল্পনার শীর্ষে থাকে। আর এ কাজটি তারা করে মেধাবীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে। বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে তাই দরকার মেধাবী জনশক্তি ও তার সঠিক মূল্যায়ন।

আমাদের দেশের মানুষ কতটুকু মেধাবী তা পরিমাপ করতে খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। আমরা যদি বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দিকে তাকাই তাহলে বুঝতে পারব আমরা কতটা মেধাবী। আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যারা পড়াশোনা করছেন তারা সবাই নিজ নিজ জায়গায় ভালো করছেন। শিক্ষা-গবেষণা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের পতাকা আমাদের এই শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই পতপত করে উড়ছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। কিন্তু কথা হলো মেধাবীদের ব্যবহারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
আমরা যদি শিক্ষা ক্ষেত্রের কথা চিন্তা করি তাহলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটি ফুটে ওঠে। পৃথিবীর সব দেশ যখন শিক্ষাকে উন্নয়নের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে তখন আমরা এই ক্ষেত্রকে ক্রমান্বয়ে মেধাবীদের কাছে আকর্ষণহীন করে তুলছি। এই পেশার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ এখন সুস্পষ্ট। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক হিসেবে ভালো শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন না। বিসিএস-এর মতো জায়গায় শিক্ষা ক্যাডারকে অপছন্দের তালিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে পেশাগত বৈষম্য তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। যখন এই অবস্থা তখন সত্যিকারের মেধাবীরা শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অন্য পেশায় যাচ্ছেন বা বিদেশের সুযোগ লুফে নিচ্ছেন।
শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা একটি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। ইউরোপ, আমেরিকা বা জাপান আজকের পর্যায়ে এসেছে গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের অবস্থা কি? আমরা যদি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় চিন্তা করি, দেখতে পাই একটা হতাশাজনক চিত্র। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারও পক্ষে ভালো গবেষণা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অবকাঠামো বিজ্ঞান গবেষণার জন্য কতটুকু উপযোগী তা ভালো করে ভেবে দেখা দরকার। যদি তাই না হয়, তাহলে যাদের গবেষণা করবার ইচ্ছা এবং দেশের জন্য কিছু করবার ইচ্ছা তাদের পক্ষে বাংলাদেশে থেকে গবেষণা করা অসম্ভব। ফলে মেধার পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং মেধাবী ও মেধার ব্যবহার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে হলে মেধাবীদের ধরে রাখা বা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষাকে সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। ভালো শিক্ষক তৈরি করবার ইচ্ছা থাকতে হবে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষকদের সবার আগে মূল্যায়ন করতে হবে। পৃথিবীর সব জায়গায় এই তিন পেশার লোকদের জন্য আলাদা সম্মান আছে। আমি জাপানে দেখেছি এই তিন পেশার লোকদের বাধ্যতামূলকভাবেই সেনসেই (স্যার) বলতে হয়। এসব দেশে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে মেধাবীদের মূল্যায়ন করার কারণে মেধাবীরা তাদের শতভাগ ঢেলে দিচ্ছেন এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। বিশ্ব ব্যবস্থায় আমাদের একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের খাদ্য থেকে শুরু করে নিরাপত্তা সব জায়গায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মেধাবীদের মূল্যায়ন ও তাদের ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। যত তাড়াতাড়ি এ সত্য উপলব্ধি করব তত দ্রুত আমরা এগিয়ে যাব অভীষ্ট লক্ষ্যে।

ড. মো. ফজলুল করিম: সহকারী অধ্যাপক, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।