কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণ

নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করার দৃশ্য
নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করার দৃশ্য

ছয় হাজারেরও বেশি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান অর্থনীতির পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। ৯০টিরও বেশি জাতীয় (পাবলিক) বিশ্ববিদ্যালয় ও ৬০০ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গড়ে উঠেছে জাপানের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষকমণ্ডলী, গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা সংবলিত ল্যাবরেটরি আর কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিচালনা ও পরিচর্যায় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছে ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিংয়ের প্রথমদিকে। আর এদের অন্যতম হচ্ছে কিয়ুশু দ্বীপের ফুকুয়াকায় কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়।

নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করার দৃশ্য
নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করার দৃশ্য

১৮৬৭ সালে মেডিকেল স্কুলের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এটি পরবর্তীতে জাপানের সাতটি ইম্পিরিয়াল ইউনিভার্সিটির একটি হিসেবে সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৯০টি দেশের দুই হাজার ১০০ বিদেশিসহ বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন এখানে, যাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ফুকুয়াকার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত পাঁচটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গবেষণাগারে পাঁচ জন বাংলাদেশি অধ্যাপকসহ বেশ কয়েকজন পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো গবেষণা কাজে যুক্ত আছেন।
গত ২১ অক্টোবর শনিবার বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ইন কিয়ুশু ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে হয়ে গেল নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান ২০১৭। প্রতি বছরের মতো এবারও ২০ জন নবীন শিক্ষার্থী এবার যোগ দিয়েছেন এখানকার বিভিন্ন বিভাগ ও গবেষণাগারে। শনিবার জাপানে সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় সকাল সকাল সবাই সপরিবারে এসে উপস্থিত হন নির্ধারিত ভেন্যু ইতু ক্যাম্পাসের ডর্ম-১ অডিটোরিয়ামে। প্রাথমিক পরিচয়পর্ব শেষে শুরু হয় নবাগতদের সঙ্গে পুরোনোদের জমজমাট আড্ডা। বাংলাদেশি স্বাদের বিরিয়ানি, চিকেন কারি, ডিম ভুনা আর সালাদ সহযোগের দুপুরের খাবারের পর পিএইচডি গবেষক আবদুর রব শেখের সঞ্চালনায় শুরু হয় প্রথমপর্ব নবীনবরণ।

মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়াকে বিদায়ী উপহার তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা
মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়াকে বিদায়ী উপহার তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা

শুরুতেই সঞ্চালক আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সহকারী অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম ও ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূঞা। ২০ জন নবীন শিক্ষার্থী একে একে নিজেদের পরিচয় প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে অডিটোরিয়াম মাতিয়ে রাখেন। নবাগত মাজেদ, কামরুজ্জামান সবুজ, রফিক, লিটন, কাওছার, রুপম, তাসকো, মওসুম, তানিয়া আর রকির কবিতা আবৃতি, গান ও কৌতুক পরিবেশনা সকলে প্রাণভরে উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, নবাগতদের বেশির ভাগই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ মোর্শেদ ও মনিরা জান্নাতুল কোবরা স্নিগ্ধা গান ও কবিতা আবৃতি পরিবেশন করেন। এরপর অতিথিরা নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার বিদায়ী সংবর্ধনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদা হাস্য প্রিয়মুখ মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়াকে সকলের পক্ষ থেকে ব্যথিত চিত্তে বিদায়ী উপহার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

বক্তব্য দিচ্ছেন এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূঞা
বক্তব্য দিচ্ছেন এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূঞা

পরে জাপানের জীবনযাত্রা, গবেষণার পরিবেশ, আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ, দেশপ্রেম সর্বোপরি বিদেশের মাটিতে দেশের সম্মান কীভাবে অক্ষুণ্ন রাখা যায় সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া, মইনুল ইসলাম ও এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূঞা।
সবশেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আবদুর রব শেখ ও এম এল পলাশ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

মাসুদা বেগম সম্পা: পিএইচডি গবেষক, কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

অতিথিদের সঙ্গে নবাগতদের একাংশ
অতিথিদের সঙ্গে নবাগতদের একাংশ