ঢেলে সাজছে সিডনি

ভবিষ্যতের সিডনি
ভবিষ্যতের সিডনি

পৃথিবীর ৪৫০টি বাসযোগ্য উন্নত শহরের তালিকার শীর্ষ দশে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী ও দেশটির সবচেয়ে বড় শহর সিডনি। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে পর্যটন, প্রতিদিন লাখো মানুষ এই শহরটিকে ব্যস্ততা আর কর্মচঞ্চলতায় ভরিয়ে তোলেন। নগর পরিকল্পনাকারী কর্তৃপক্ষের দেওয়া সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল—এই দশ বছরে সিডনির জনসংখ্যা বেড়েছে শতকরা ১৮ ভাগ। সংখ্যার হিসাবে সাত লাখ তিরিশ হাজার মানুষ।

আর এ কারণেই নগরের এই উন্নত পরিবহন ব্যবস্থাও প্রায়শই হাঁপিয়ে উঠছে ব্যস্ত মানুষগুলোকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে গিয়ে। তবে ২০২৬ সালের মধ্যেই এ শহরের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় সিডনির ছোট-বড় নতুন সড়ক ও রেললাইনের নির্মাণকাজও বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। চলছে বিভিন্ন সড়কের প্রসার, পুনর্গঠন আর উন্নয়নের কাজও। সার্বিকভাবে সিডনির এই উন্নয়নযজ্ঞের সমন্বয়কের ভূমিকায় আছে গ্রেটার সিডনি প্ল্যানিং কমিশন। এই কমিশন পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

সড়ক উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্প
সিডনির উন্নয়ন প্রকল্পের একটা বিশাল অংশ জুড়েই আছে এ শহরের বিভিন্ন সড়কগুলো প্রশস্ত করাসহ নতুন আরও কিছু সড়ক নির্মাণ। এরই মধ্যে সিডনির প্যারাম্যাটা থেকে কনকর্ড পর্যন্ত এম ৪ সড়কটির প্রশস্ততা বৃদ্ধি ছাড়াও ওয়েস্ট-কোনেক্স থেকে নর্থ-কোনেক্স পর্যন্ত প্রায় সবগুলো সড়কের আয়তনও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে দেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সেখানে ‘এম ১’ ও ‘এম ২’ সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছে। সরকারি কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক দশকে এবারই প্রথম এত বড় বাজেটের কোনো সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

চলছে নতুন রেললাইনের কাজ
চলছে নতুন রেললাইনের কাজ

রেল প্রকল্প
সার্বিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। আর এর জন্যই সিডনিতে কিছুটা দূরের গন্তব্যেও অধিকাংশ মানুষই রেলগাড়ি বা ট্রেনই ব্যবহার করেন। প্রতিদিনের এই উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে হয় সিডনির প্রায় সব কটি ট্রেনকে। সরকার তাই সিডনির উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মনোযোগী হয়েছে শহরটির রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে। সিডনির উত্তর থেকে পশ্চিমে যাতায়াতের জন্য তাই নতুন রেললাইন তৈরি করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ সালের মধ্যেই নতুন এই রেলপথটি চলাচলযোগ্য হয়ে উঠবে বলেই আশা করছেন নির্মাণ প্রকৌশলীরা। এ ছাড়া রোজহিল থেকে ব্যাংকসটাউন পর্যন্ত হারবার ও সিডনি সিবিডির তলদেশ দিয়ে মেট্রোরেলের প্রকল্প রয়েছে সরকারের হাতে। উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ইপিং থেকে রোজহিল পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটিও বাড়ানো হচ্ছে। আরও চলছে নতুন লাইট রেলের নির্মাণকাজ। সার্কুলার কি থেকে ইস্টার্ন সাবার্বের র‍্যান্ডউইক এবং কিংসফোর্ড পর্যন্ত এর বিস্তৃতির কাজ চলছে পুরোদমে।

বাস পথ
বাস পথ

বাস প্রকল্প
আগামী দশকের মধ্যেই সিডনির বাস পরিবহন সেবার ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকারের। সিডনির প্রাণকেন্দ্র জর্জ স্ট্রিটের বাস রুটে পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছে নগরের এই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। এ পরিকল্পনার আওতায় থাকছে জর্জ স্ট্রিটসহ সিডনির প্রধান ও ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বাস কম থামার বন্দোবস্ত। এরই মধ্যে শহরের পশ্চিম-পূর্ব এলাকার বেশ কিছু জায়গায় এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন পার্কিং তৈরির কাজও শুরু হয়েছে, যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলেই জানা গেছে।
এমন সব পরিকল্পনা ছাড়াও রয়েছে দ্রুত চলাচলের জন্য টোল সড়ক। যেসব সড়ক ব্যবহারে শুল্ক দিতে হবে এমন সড়কগুলোতে দীর্ঘ সময় কোনো ট্রাফিক জট ছাড়াই যাতায়াত করা যাবে। এ ছাড়া থাকছে সিডনির উত্তর ও দক্ষিণে বেশ কয়েকটি টানেল নির্মাণ ও সেতুর উন্নয়নকাজ।
শহরের বেশ কিছু প্রধান জায়গায় এরই মধ্যে সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ শুরু হওয়ার কারণে সিডনিবাসীর চলাচল কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সিডনির বাস, ট্রেন এমনকি সাধারণ মানুষেরাও এসব নির্মাণকাজের ফলে সৃষ্ট বাধাবিঘ্নের সঙ্গে মানিয়ে নিতে রীতিমতো সংগ্রাম করছে। চলাচলের এই দুর্ভোগের কথা অনেক সিডনিবাসী বাঙালিও জানিয়েছেন।
সিডনির কিংসফোর্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী মেহেদি রব যিনি এই সিডনিতে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই রাস্তা মেরামত ও নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে সিডনিতে। এতে মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হতেই ইচ্ছা করে না, তবুও জীবিকা আর জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হতেই হয়। তবে ভালো কিছু পেতে কষ্ট তো করতেই হবে। তিনি আরও বলেন, ২০০০ সালের অলিম্পিকের সময়ও প্রচুর উন্নয়নকাজ হয়েছে তবে একসঙ্গে এত উন্নয়নকাজ আগে দেখিনি।
উন্নয়নকাজের জন্য সিডনির নাগরিক জীবনে সাময়িক কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলেও গ্রেটার সিডনি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে সিডনি শহর।