তুরস্কে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে সেমিনার

অতিথিরা
অতিথিরা

তুরস্কে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশ ও দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। আজ ১৫ নভেম্বর বুধবার রাজধানী আঙ্কারার জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ-তুরস্কের মধ্যে ওষুধ বাণিজ্য জোরদার করণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের নয়টি প্রধান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। সেমিনার শেষে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির প্রতিনিধিরা তুরস্কের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাণিজ্যিক বৈঠকে মিলিত হন এবং ওষুধ বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন ওষুধ পণ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

এই সেমিনারে তুরস্কের শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপমন্ত্রী ওরহান ইয়েগিন প্রধান অতিথি হিসেবে এবং তুরস্কের ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস সংস্থার প্রেসিডেন্ট ড. হাকিকি গুরস্‌জ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তুর্কি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, তুরস্কের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংবাদকর্মী এবং বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে নেতৃত্বদানকারী প্রধান নয়টি ওষুধ কোম্পানির উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে তুরস্কের স্থানীয় আগ্রহী ওষুধ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সেমিনারে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের অগ্রগতি, উৎকর্ষতা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধার ওপর বক্তব্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত দুটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। বেক্সিমকো ফার্মার সিইও এস এম রাব্বুর রেজা সেমিনারে বাংলাদেশের ওষুধের গুণগত ও আন্তর্জাতিক মান, বহির্বিশ্বে এর চাহিদা এবং ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধের পরিসংখ্যানগত অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল একটি শিল্প খাত এবং ২৫৭টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের বর্তমান বাজার মূল্য বার্ষিক ২ বিলিয়নের ওপরে।

অংশগ্রহণকারীরা
অংশগ্রহণকারীরা

ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য এবং ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রগামিতার বিবরণ শুনে ওরহান ইয়েগিন অভিভূত হন এবং বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশ-তুরস্ক ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করণে সকল ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এরপর বিশেষ অতিথি ড. হাকিকি গুরস্‌জ তার বক্তব্যে ওষুধ শিল্পে দুই দেশের সম্ভাব্য সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের বিস্ময়কর অগ্রগতি, নিকট অতীতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে উৎকর্ষতা অর্জন ছাড়াও বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম তার সমাপনী বক্তব্যে সেমিনারের মূল আলোচনার সারমর্ম উপস্থাপন করেন। সেমিনারে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামানও বক্তব্য দেন। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে উৎকৃষ্টমানের ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানিতে অগ্রগামিতা অর্জনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
উপস্থাপনা শেষে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত তুর্কি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে একটি প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
সেমিনারটি তুরস্কের ওষুধ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে যে উৎসাহ ও আগ্রহের সৃষ্টি করেছে তা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে বলে আশা করা যায়। আঙ্কারার বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরার জন্য অনুরূপ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। বিজ্ঞপ্তি