জাপানে বাংলাদেশ ওমেনস অ্যাসোসিয়েশনের চ্যারিটি বাজার

সাহিদা আকতার স্টল পরিদর্শন করছেন
সাহিদা আকতার স্টল পরিদর্শন করছেন

জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাংলাদেশ ওমেনস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত চ্যারিটি বাজার সফলতার সঙ্গেই সম্পন্ন হয়েছে। এই চ্যারিটি বাজার অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। নারীরাও যে পারেন তা তারা দেখিয়ে দিয়েছেন।

মূলত বাংলাদেশের বন্যা কবলিত এলাকার নারীদের পরবর্তী পুনর্বাসনে সহযোগিতার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাজারে জাপানপ্রবাসী নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইন শপিং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মোট ১৭টি স্টল অংশ নিয়েছিল। স্টলগুলোতে ছিল জুয়েলারি, বুটিক, ফ্যাশন, এক্সেসরিজ, পোশাক, ঘড়ি, বইসহ বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন গৃহস্থালি সামগ্রী এবং ঘরে বানানো হরেক রকমের মুখরোচক খাবার সামগ্রী।

বাংলাদেশ ওমেনস অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব স্টলে সদস্যরা
বাংলাদেশ ওমেনস অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব স্টলে সদস্যরা


১৮ নভেম্বর শনিবার টোকিওর কিতা সিটি উকিমা ফুরেয়াইকানে আয়োজিত চ্যারিটি বাজার দুপুর দেড়টা থেকে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুরু থেকেই উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে স্টলগুলোতে। বিশেষ করে খাবারের স্টলে। বাজারের সমাপ্তির সময় ছিল রাত সাড়ে ৮টায়। কিছু কিছু খাবারের স্টলে খাবার সামগ্রী তার আগেই শেষ হয়ে যায়।
পরিচ্ছন্ন ও শিশুবান্ধব নিরাপদ চ্যারিটি বাজার প্রাঙ্গণে নারী-শিশুরা নির্বিঘ্নে দেশীয় সাজে সজ্জিত হয়ে ক্লান্তিহীনভাবে কেনাকাটার পাশাপাশি আড্ডায় মেতে ওঠেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা
ফুলেল শুভেচ্ছা


চ্যারিটি বাজারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ড. সাহিদা আকতার। তিনি জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রতিনিধিত্ব করেন। অতিথি ছিলেন জাপান সফররত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও সোনিয়া অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুদ্দিন মো. কায়সার খান।
সাহিদা আকতার তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ ওমেনস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। নারীরাও এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। স্পিকার ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী। আমি নিজেও একজন নারী হিসেবে যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করছি। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ জন নারী সচিব কর্মরত আছেন। কাজেই নারীরা পারে না এমন কোনো কাজ আর নেই।
এনায়েতুদ্দিন মো. কায়সার খান শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, একজন ভালো মা একজন আদর্শ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। সেই সন্তান বড় হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করেন। কাজেই মা অর্থাৎ নারীদের ভূমিকা দেশ গঠনে অগ্রগণ্য।

বই কিনছেন একজন পাঠক
বই কিনছেন একজন পাঠক


বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের মধ্যে আরও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুনশি কে আজাদ, কাজী ইনসানুল হক, খন্দকার আসলাম হিরা, আবদুর রহমান, বাদল চাকলাদার, মো. নাসিরুল হাকিম, মো. শাহ, কামরুল আহসান জুয়েল ও কাজী আসগর আহমেদ সানী প্রমুখ। তারা চ্যারিটি বাজারের সাফল্য কামনা করেন। এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনকে বিসিসিআইজের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

খাবারের স্টলে অন্যান্যের সঙ্গে লেখিকা
খাবারের স্টলে অন্যান্যের সঙ্গে লেখিকা


অনুষ্ঠানে সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের নাম ঘোষণা করা হয়। তনুশ্রী গোলদার বিশ্বাসের পরিচালনায় সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা মুনশি রোকেয়া সুলতানা পর্ষদের নাম ঘোষণা করেন। তিনি সভানেত্রী হিসেবে জেসমিন সুলতানা কাকলি, সহসভানেত্রী রুমানা রউফ সোমা, সাধারণ সম্পাদক সুবর্ণ নন্দী রিমা, যুগ্ম সম্পাদক আসমা আখতার পারভিন বহ্নি, কোষাধ্যক্ষ সালমা আক্তার লাকি ও দপ্তর সম্পাদক রোকেয়া পারভিন তানিয়ার নাম ঘোষণা করেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাবাব ফাতিমা ও উপদেষ্টা হিসেবে সাহিদা আকতারের নাম ঘোষণা করা হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনায় স্বরলিপির সদস্যরা
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনায় স্বরলিপির সদস্যরা


কার্যকরী পর্ষদের সদস্যরা তাদের বক্তব্যে সংগঠনের জন্য নিজেকে নিবেদিত করে জাপানে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিসহ দেশের দুস্থ মহিলাদের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
সবশেষে লটারি ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আকর্ষণীয় প্রথম পুরস্কারটি জিতে নেন সানাউল হক। আর প্রথম পুরস্কারটির স্পনসর ছিল ডেসটিনি ইনক।

দর্শকদের একাংশ
দর্শকদের একাংশ


বাংলাদেশ ওমেনস অ্যাসোসিয়েশন জাপান ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে সংগঠনটি নারীদের উন্নয়নে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার অন্যতম ছিল চ্যারিটি বাজার। এখান থেকে আয়কৃত পুরো অর্থ বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বন্যা কবলিত এলাকার দুস্থ নারীদের পুনর্বাসনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা যায়।

বাদ যায়নি সেলফিও
বাদ যায়নি সেলফিও

সংবাদদাতা: হাসিনা বেগম রেখা, টোকিও, জাপান।