ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশ উৎসব
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ উৎসব। গত ১৮ নভেম্বর শনিবার বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং অর্জনসমূহ প্রদর্শন, জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, স্বদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা এবং দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বর্ধনে বাংলাদেশ দূতাবাসের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, আফ্রিকা মহাদেশের কূটনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত ইথিওপিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর এ ধরনের আয়োজন এটাই প্রথম। উৎসবে আদ্দিস আবাবার ১৩০টি বিদেশি কূটনৈতিক দূতাবাস, আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, শিল্পী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের একদম শুরু থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে জনসাধারণের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সপরিবারে উৎসবে আসেন এবং উপভোগ করেন। এ ছাড়া অনেক দেশ, যাদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, আজারবাইজান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, চাদ, চিলি, জর্ডান, জাপান, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা ও আরব লীগের দূতাবাস প্রধান ও তাদের পরিবার, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ইথিওপিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিপ্রেক্ষিতের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক (যারা ইতিপূর্বে বাংলাদেশে নিয়োজিত ছিলেন), ইথিওপিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা ও অর্জনসমূহের ওপরে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। উৎসবে বাংলাদেশি গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, ফ্যাশন শো, কুইজ, মেহেদি লাগানো, চুড়ি-টিপ পড়ানো, ফুলেল অলংকরণ প্রভৃতির আয়োজন ছিল। আরও ছিল প্রায় ৪৫ রকমের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবারের মুখরোচক আয়োজন। উৎসবের শেষ সময় পর্যন্ত মানুষের আসা-যাওয়া অব্যাহত ছিল এবং আগত দর্শনার্থীবৃন্দ প্রাণভরে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ইথিওপিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের এসব আয়োজন উপভোগ করেন।
উৎসবের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বাংলাদেশের স্বনামধন্য বেশ কিছু শিল্প-প্রতিষ্ঠান যেমন; প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, ডিবিএল গ্রুপ, গ্লোব শিল্পগোষ্ঠী, সজীব গ্রুপ, উর্মি গ্রুপ, রহিম আফরোজ, গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টারের উৎসবে অংশগ্রহণ এবং তাদের পণ্যসামগ্রী ও সেবার বিবরণ তুলে ধরা। ইথিওপিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের চলমান প্রচেষ্টা হিসেবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়া কিছু স্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও উৎসবে বাংলাদেশ দূতাবাসের এই আয়োজনে সহায়তা করে। ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আগত কর্মকর্তারা বাংলাদেশের ওষুধের পসরা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধ ইথিওপিয়াতে বাজারজাতকরণে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উৎসবে আগত বাংলাদেশি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশি পণ্য ও খাবারের দিকে বিশেষ আগ্রহ প্রত্যক্ষ করে এ কথা বলা যায়, আগ্রহী বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অবিলম্বে ইথিওপিয়াতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সম্ভাবনা যাচাই করে দেখতে পারেন। বাংলাদেশ উৎসব নির্ধারিত সময়ের পরেও চলমান ছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অবশেষে ইথিওপিয়ায় আয়োজিত প্রথম বাংলাদেশ উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি