হে বন্ধু বিদায়!

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃতদেহ নগরের লালদীঘি ময়দানে আনা হয়। এ সময় লাখো মানুষ জড়ো হন এই নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃতদেহ নগরের লালদীঘি ময়দানে আনা হয়। এ সময় লাখো মানুষ জড়ো হন এই নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ছবি: সৌরভ দাশ

নামাজে জানাজা প্রমাণ করে চট্টলা সিংহ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কত বড় মাপের একজন প্রাণপুরুষ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁকে আখেরাতেও একই সন্মান দান করুন— এ প্রার্থনা করি। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামসহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কোটি মানুষ তাদের এই প্রাণের মানুষ-এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য দুহাত তুলে দোয়া করেছেন। 


দেশ থেকে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর মাসে একবার তাঁর সাথে মোবাইলে কথা বলতাম। শেষ কথা হলো-অক্টোবর মাসে। তুই কত্তে আবি দেশত, যেত্তে আবি আঁর বাসাত আইবি (কখন আসবি দেশে, যখনই আসবি আমার বাসায় আসিস)। আশ্চর্য লাগতো, এক কলে কণ্ঠ বুঝে ফেলতেন। ওপার থেকে মনের দুয়ার খোলা দরাজ কণ্ঠে বলতেন। ভালা আছসনি (ভাল আছিস), কিল্লাই দুয়া ভাত খাইবাল্লায় বিদেশ গেলি (কেন দুটো ভাত খাওয়ার জন্য বিদেশ গেলি)। আরও কত কথা! যখনই কল করেছি তখনই কল ধরেছেন। ভাবতে অবাক লাগে; তাঁর ফোনে আর কোনদিন কল করা হবে না। জন্মিলে মরতে হবে, বিধাতার অমোঘ নিয়ম সকল মানুষকে মেনে নিতে হয়েছে। সালাম দেওয়ার আগে ওপার থেকে সালামের উত্তর বলে কথা শুরু করতেন। ২০১১ সালের পর থেকে যখনই কল করতাম। সাথে সাথে ওপার থেকে বলতেন-কেন আছ (কেমন আছ), শেষ কথা হয়েছিল-অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি বিকেলে, তারিখটা সঠিক মনে পড়ছে না।
হ্যালো বলার সাথে স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে তিনি বলে উঠলেন-কেন আছ (কেমন আছ), পয়সা-কড়ি কামাইতো লাগ্গোনা (টাকা-পয়সা রোজগার হচ্ছে তো)। ‍তাঁর পরামর্শ ছিল, ছেলে-মেয়ের জন্য বিদেশ গিয়েছ, ওদের মানুষ কর। দেশকে ভুলবে না। এক সময় দেশে ফিরে এসো।

ওয়ান-ইলেলেভেন; তখনকার সরকার তাঁর (মহিউদ্দিন চৌধুরীর) কলিজার টুকরো মেয়ের (টুম্পা) মরা মুখ দেখতে কারাগারের বাইরে আসতে রাজনীতি না করার শর্তে অঙ্গীকারনামায় সই করতে বলেছিলেন। তিনি প্রয়োজনে জেলে জীবন দেবেন—এ কথা বলে আইনি লড়াই করে জেল থেকে বের হয়েছিলেন। যিনি মন্ত্রীত্বের লোভ করেননি। চট্টগ্রাম তাঁকে সব সময় কাছে টানতো, তাই জীবনের শেষ সময়েও তিনি সিঙ্গাপুর-ঢাকা তারপরও প্রিয় চট্টগ্রামেই তাঁর শেষ ঠিকানা হলো। সেই চট্টলার সিংহপুরুষকে হাজারো সালাম। তোমার অবদান চট্টগ্রামের অলিগলিতে; মানুষের মনের গহিনে চির অম্লান থাকবে। তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান-গ্রহণ করেছ যত ‍ঋণী তত করেছ আমায়। হে বন্ধু, বিদায়।