বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি অমর কবিতা

র‍্যালি
র‍্যালি

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অতুলনীয়। এটি কোনো সাধারণ বক্তৃতা ছিল না। এটি ছিল স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত একজন অবিসংবাদিত নেতার হৃদয় নিংড়ানো অভিব্যক্তি। এটি একটি অমর কবিতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেসকোর স্বীকৃতি উদ্‌যাপন উপলক্ষে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার। ১৭ ডিসেম্বর রোববার বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জাঁকজমকপূর্ণ এই আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কর্মসূচির মধ্যে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আপ্যায়ন।

র‍্যালি
র‍্যালি

বিকেলে আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় পতাকা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিশোভিত শোভাযাত্রাটি বৈরুত শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে। অনেক প্রবাসী এই আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। লেবাননের কিছু নাগরিককেও এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে ও ছবি তুলতে দেখা যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কয়েক শ প্রবাসী বাংলাদেশি এতে যোগ দেন।

ঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ
ঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ

শোভাযাত্রা শেষে বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণটি দূতাবাসের হলরুমের বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার, লেবাননে ইউনেসকোর পরিচালক সুলেমান খৌরি, দূতাবাসের সব কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের লেবানন শাখার নেতারাসহ উপস্থিত প্রবাসীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে এ উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন দূতালয়ের প্রধান সায়েম আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল হোসেন। বাণী পাঠ শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুলেমান খৌরি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশাল মাপের একজন নেতা। ইতিহাসে যে কজন নেতার ভাষণ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ একটি।

বক্তব্য দিচ্ছেন আব্দুল মোতালেব সরকার
বক্তব্য দিচ্ছেন আব্দুল মোতালেব সরকার

আবদুল মোতালেব সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করে। সাধারণত ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোকে এই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। ইউনেসকো মনে করে, এসব ঘটনা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সাহায্য করবে। ২০১৭-১৮ সালের জন্য ৭৮টিসহ সর্বমোট ৪২৭টি ডকুমেন্ট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউনেসকো। এই প্রকল্প ১৯৯২ সালে শুরু হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একজন বাংলাদেশি হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এটি ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়া প্রথম কোনো বাংলাদেশি দলিল। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেল। ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদানের ফলে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে এখন বিভিন্ন দেশে গবেষণা ও আলোচনা হবে। সারা বিশ্ব এখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পর্কে জানতে পারবে। ইউনেসকোর স্বীকৃতি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

আলোচনায় কয়েকজন কমিউনিটি সদস্যও বক্তব্য দেন। সবশেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পর্বে রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। তাঁর আবৃত্তি মুগ্ধ করে উপস্থিত দর্শকদের। বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের এই কবিতার মধ্যেই পুরো চিত্র আছে, আসলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের দিন কী হয়েছিল রেসকোর্স ময়দানে।
প্রবাসী শাহজাহান পরিবেশন করেন ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। প্রবাসী শাহরিয়ারের ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’ গানটি সবাইকে মুগ্ধ করে। প্রবাসী মহসীনসহ সব শিল্পী ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের কোরাস পরিবেশন করেন। কবিতা পাঠ করেন প্রবাসী রুবেল আহমেদ। প্রবাসী নারী আসমা আক্তার দুটি গান পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন দূতালয়ের প্রধান সায়েম আহমেদ। পরিশেষে সবাইকে রাতের খাবারে আপ্যায়ন করা হয়।

আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ

সংবাদ প্রেরক: জুবায়ের কবির, বৈরুত, লেবানন। ই–মেইল: <[email protected]>

ছবি: বাবু সাহা ও বিল্লাল সরদার।