আবুধাবির বাংলাদেশ স্কুলে বিজয় দিবস

নৃত্য পরিবেশনা
নৃত্য পরিবেশনা

আবুধাবির শেখ খলিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখানে বিজয়েরই অনুষ্ঠান। অডিটোরিয়াম ভরা মানুষ। একজন তরুণী মা এরই মধ্যে আঁটসাঁট হয়ে বসেন। স্মার্ট ফোনটিও ঠিক করে নেন। ছবি তোলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি। চেনা মুখ। আমি আমার নোট বুকটা তার হাতে তুলে দিই। এরই মধ্যে মঞ্চ থেকে আসে ঘোষণা।

মহান বিজয় দিবসের আয়োজন। সম্প্রতি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও হেড অব চ্যান্সারি মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ফারুকী। তিনি ছোটদের কলকাকলিকে অভিনন্দন জানান। একটি মিষ্টি আবহকে গ্রহণ করার নাম উদ্‌যাপন। তাই করলেন। এবার আদরের শিক্ষা। বললেন, তোমাদের ভালোভাবে বাংলা লিখতে হবে। বিজয় দিবস তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল।

সংগীত পরিবেশনা
সংগীত পরিবেশনা

বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন। তিনি বলেন, রাজাকার-আলবদরেরা একাত্তরে জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে। আজও তাদের উত্তরসূরিরা ষড়যন্ত্র করছে। এদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান তার। তিনি একটি জরিপ তুলে ধরেন। বিশ্বে শেখ হাসিনার সরকার তৃতীয় সৎ-সরকার। আর পরিশ্রমী সরকার—প্রধান হিসেবে চতুর্থ। তিনি দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মীর আনিসুল হাসান। তিনি বললেন, ভিন্নভাবে ভিন্ন কথা। অভিভাবকদের সহযোগিতা চাইলেন। শিক্ষকেরা নয় শুধু, পড়াবেন তারাও। গরিব মানুষের কথা আছে বইয়ে, আছে ত্যাগীদের কথা। তিনি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সহকারে এসব পড়ার আহ্বান জানান।
বক্তব্য পর্ব সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক আবু তাহের।
আলোচনার পর একটি দলীয় নৃত্য। পরিবেশনায় সানজিদা এবং তার দল। হ্যাঁ, এই তিন কন্যাই তরুণী মায়ের গৌরব। আঞ্জুমান আরা। সুন্দর হস্তাক্ষরে তাড়াতাড়ি লিখে দিলেন তিনটি নাম। আর দুটি হচ্ছে ইশরাত ও তাহিয়া। তিন কন্যা জ্বলে উঠল মঞ্চে।

বক্তব্য দিচ্ছেন মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ফারুকী
বক্তব্য দিচ্ছেন মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ফারুকী

নৃত্য পরিবেশন করে সোমা রায়ের নেতৃত্বে একটি দল। একটি মিছিল, একটি স্লোগান এ দেশ আমরা গড়ব। দারুণ দ্যোতনা তুলল। সোমা রায়ের সঙ্গে এরপর কথা হয়। এখানকার শিক্ষক। বললেন জন্ম বাংলাদেশে। এখন কলকাতায়। বড় মনে পড়ে দেশকে, দীর্ঘশ্বাস তার।
একাত্তরে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাংলার তরুণ ও যুবকেরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই প্রতিবাদের স্রোতোধারায় সিক্ত হয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায় আজকের তরুণ প্রজন্ম। এইই পটভূমি। শালিনী নন্দনের নেতৃত্বে জ্বলে ওঠে একদল কিশোরী। জয় বাংলা বাংলার জয় গানে রাবেয়া নুর মঞ্চে এসেছে একক নৃত্য নিয়ে। নৃত্যে তার অনেক প্রশংসা!
চারজন নাচল। রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম-সে কৃতিত্ব ওদের চোখে মুখে। আমাদের সত্তার সঙ্গে মিশে গেছে বাংলাদেশের মাটি। এই দেশ শতবার দেখলেও দেখার ইচ্ছে কমে না। হায়রে আমার মন মাতানো দেশ...প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করে ওরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতি। এই আহ্বান আসে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের মধ্য দিয়ে। ওই দিন থেকে স্বাধীনতা শব্দটিও আমাদের হয়ে যায়। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা। যুগল আবৃত্তি করল জুশান আবদুল্লাহ ও আসমা আমরিন।

বীণা পি ভির বিদায় সংবর্ধনা
বীণা পি ভির বিদায় সংবর্ধনা

একাদশের হাসান মঞ্চে কথা বলল ইংরেজিতে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধ করে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় পেলাম। একই শ্রেণির হাফসা সুন্দর করে কথা বলে। তারও অনুভূতির প্রকাশ মঞ্চে। বলে, একাত্তরে বঙ্গবন্ধু মুক্তির ডাক দেন। আজ তার স্বপ্ন সোনার বাংলা সফল হতে যাচ্ছে। শিক্ষা সংস্কৃতি, খেলাধুলায় বাংলাদেশ এখন এগিয়ে।
বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক নীলা পারভিন। বলে, বিজয় খুশির ও গর্বের। আয়শা একাদশের শিক্ষার্থী। বিজয় দিবসে তাৎপর্যপূর্ণ কথা শোনা হলো, মুখে তার হাসি।
সাইমা রাইসা দুজনই সামনে যাচ্ছে। টগবগে দুই শিশু। বিজয় দিবসে ওরা উপভোগ করছে সময়টিকে। সাকিব এবার চতুর্থ শ্রেণিতে যাচ্ছে। ও বলল, বিজয় দেখতে এসেছি। তার বোন তাসনিয়া নাচল। আনন্দ যেন তারই বেশি।
নাসরিন তার বাবার হাত ধরা তখনো। ও এবার তৃতীয় শ্রেণিতে যাচ্ছে। ওর আনন্দ আজকের এত মানুষ দেখা। লাওনিম লতিফ। শিশু এক। তার আসা আনন্দ করতে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শিরোনামে লেখার জন্য সংযুক্ত আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান আগেই পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। অনেকে এসেছে পুরস্কার নিতে। তার মধ্যে সেও একজন।

বিজয়ের সাজে শিক্ষার্থীরা
বিজয়ের সাজে শিক্ষার্থীরা

শুরুতে দেখলাম তিন কিশোর-কিশোরী তড়িঘড়ি করে তাদের দায়িত্বটুকু চূড়ান্ত করে নিচ্ছে। ইশরা, আসমা ও জুশান। ওরা ওইদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে।
শিক্ষক জাকিয়া সুলতানা। অধ্যক্ষের কার্যালয়। আয়োজনের সাজসজ্জায় তারই ভূমিকা। জিজ্ঞেস করলেন কেমন হয়েছে? কী বলি, কী বলি! নারী আমার দিকে তাকিয়ে। বলি, শিক্ষকেরা মানুষ গড়ে, পরিবেশও সৃষ্টি করে। তার স্মিত হাসি।
স্কুলের উপাধ্যক্ষ কাজী আবদুর রহিম। বিহারি লাল ও ঈশ্বর গুপ্ত প্রমুখ কালজয়ী কবিদের সূত্র ধরে মঞ্চের বক্তব্যে বলেন, পরাধীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়ের ফসল প্রতি ঘরে পৌঁছে যাক এই কামনা তার।
দূতাবাসের কাউন্সেলর ড. মোকসেদ আলী সামনে। কথা বলি তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বিজয়ের আনন্দের মধ্য দিয়ে সবাই প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক। বাঃ কত চমৎকার করেই না বললেন!
সঞ্চালকেরা আসে মঞ্চে। আমরা করব জয় একদিন। সমবেত উচ্চারণে তারা বিদায় নেয়।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

এরপর বিদায় সংবর্ধনা।
বীণা পি ভি। ভারতীয়। রসায়ন বিদ্যার শিক্ষক। তারই জন্য আরেক আয়োজন। এ অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম অতিথি। তার কন্যা দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। কন্যার পাশে থাকবেন। ফিরে যাবেন দেশে। যদিও প্রকৌশলী স্বামী তার আবুধাবিতে। পরিবেশ কর্মে বীণার আছে অবদান। তাকে ক্রেস্ট দেওয়া হলো। রসায়ন ক্লাসে তার ভূমিকা ঈর্ষণীয়। এ জন্য পুরস্কার। তার গুণগ্রাহীরা বসেছেন বৃহৎ মিলনায়তনের এক পাশে। এ বিদায় যেন বিদায় নয়। বরং সম্মানে, ভালোবাসায় অভিষিক্ত করা। অধ্যক্ষ তার কল্যাণ কামনা করেন। বীণাও তার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেন।

নিমাই সরকার: আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইমেইল: <[email protected]>