আবুধাবিতে বাংলাদেশ সমিতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সংগীত পরিবেশন করছেন আলম আরা মিনু
সংগীত পরিবেশন করছেন আলম আরা মিনু

ডা. তাসলিমা হক। স্পেশালিস্ট ইন ফিজিক্যাল মেডিসিন। আল আহালিয়া হসপিটালের পক্ষে ফ্রি ট্রিটমেন্ট এবং ফ্রি কনসালটেন্সির বার্তা দিলেন। মোসাফফা ব্রাঞ্চে বসেন তিনি। আবুধাবিতে আছেন ডা. মাহজাবীন। জেনারেল প্র্যাকটিশনার। বাঙালি কন্যার গৌরব এখানেই। এখন স্বজাতিকে চিকিৎসাসেবা দানের আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এইই উপযুক্ত স্থান, সবাইকে পাওয়া যাবে। তিনি জনসংযোগ করছেন।

২১ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার। আবুধাবির বাংলাদেশ স্কুল।
সন্ধ্যাটি ঠিক ঠিক শুরু হয়ে গেল বলা চলে। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হলো অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল সালাম তালুকদার মঞ্চে এলেন। এ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত হলো তার কণ্ঠে। এরই মধ্যে জাতীয় সংগীত বাজল দুই দেশের। উপস্থিতি দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেন।

সংগীত পরিবেশন করছেন দিলরুবা খান
সংগীত পরিবেশন করছেন দিলরুবা খান

আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। তিনি তার বক্তব্যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন।
এই মাসে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। দেশ নিয়ে তাদের ছিল স্বপ্ন। বললেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। আরও যোগ করলেন, সারা বিশ্বে উন্নয়নের উদাহরণ এখন বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত উৎকর্ষতা নিয়ে এগিয়ে। জাতীয় আয় বেড়েছে আশাতীত। দারিদ্র্যসীমা অনেক নিচে নেমেছে। কাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। এই খবর অন্য জাতিকে দিতে হবে। তিনি প্রবাসীকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন।
তারপর এল বাংলাদেশ সমিতি প্রসঙ্গ। ১৯৭৪ সাল থেকে সংগঠনটি প্রবাসী বাঙালির সেবা করে যাচ্ছে। আরও জোরালোভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি এর কাজ করে যাবে—এই আশা তার। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটি সবার ভালো কাটুক এই কামনা করলেন।
বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন এক সুখবর দিলেন। তিনতলার বিশাল ভবন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। দূতাবাস সংলগ্ন এই ভবন থেকে সমিতি সাধারণের জন্য সেবামূলক কর্ম পরিচালনা করবে। বললেন, চুক্তিটির সম্পাদনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সবাই করতালি দিলেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন মোহাম্মদ ইমরান
বক্তব্য দিচ্ছেন মোহাম্মদ ইমরান

এরপর নেমে এল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি।
মঞ্চে গান গাইলেন দুই প্রথিতযশা শিল্পী। তারা বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। দিলরুবা খানম ও আলম আর মিনু। গান গেয়ে দুই শিল্পীই সবার ভালোবাসা কুড়ালেন।
আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকৌশলী আশিস বড়ুয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ সাখওয়াত হোসেন।
আয়শা ও বর্ণা। এবার সপ্তম শ্রেণিতে উঠল। তাড়াতাড়ি এসে হাজির। কারণ গান হবে।
মণি হোসেন এসেছেন বেশ আগে। মনোযোগী শ্রোতার প্রস্তুতি তার। তিনি ডেকে ডেকে তারই পাশে বসাচ্ছেন সমমনাদের।
ঊর্মি হাওলাদার, লাকি হালদার উল্কা, মৈত্রী বড়ুয়া, আজমেরী বেগম ও তাহমিনা রিক্তা। আসরের আগে তারা বসেন আপন আসরে। রীতিমতো তৈরি তারা গান গাইতে এবং শুনতে। নাজনীন এজাজ ও সাইফুন্নাহার জলি আনন্দে আত্মহারা। মুখের হাসিই তার প্রমাণ। তাদের মনে বাজে বাউল গান।
তরুণী এই মায়েরাই আজকের স্থানীয় শিল্পী। তারা মঞ্চে দুটি গান গেয়েছেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন মোয়াজ্জেম হোসেন
বক্তব্য দিচ্ছেন মোয়াজ্জেম হোসেন

এই পদ্মা এই মেঘনা..এবং ধনধান্য পুষ্পভরা...।
রাবেয়া নুর ও ফাইকা নৃত্য করল। সবুজের মাঝে লাল সেতো উড়বেই চিরকাল।
আরও ছয় শিশু-কিশোরী নাচে। মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল, বাংলাদেশের বুক এতই বিশাল—গানটির সঙ্গে।
আলম আরা মিনু। মঞ্চে এসেই বলেন, দেশে আছি যেন। ভালোবাসার আমেজ। তিনি প্রবাসী শ্রোতার প্রতি তার আনুগত্য ঢেলে দেন। মাটির প্রতি তার টান প্রকাশ পায় ষোলো আনা। তিনি গেয়েছেন, ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আজে লক্ষ মুক্তিসেনা’, ‘দেনা তোরা দেনা, সে মাটি আমার অঙ্গে মাখিয়ে দেনা।’ যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন মিনু তাদের প্রতি উজাড় করা শ্রদ্ধা প্রকাশ করলেন।
বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গান গাইলেন। গাইলেন প্রেমের গান, চট্টগ্রামের গান।
বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে। সইগো—বসন্ত বাতাসে। কিংবা বন্ধু তুমি কই, তুমি বিনা ...।
বন্দে মায়া লাগাইছে...দারুণ আবেগ সৃষ্টি করে শ্রোতাদের মনে।
বাউল আবদুল করিম কথা কয়। যুবকেরা অডিটোরিয়ামের এক কোণে জড়ো হন। গেয়ে যান শিল্পীর সঙ্গে।
শেষ গানে মিনু জানান, গান ছাড়া আর কিছু চাই না।

স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা
স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা

বিদায় নিলেন মঞ্চ থেকে নান্দনিক ভঙ্গিতে। এদিকে একবার ফিরলেন আবার অন্যদিকে। হাতে তালি।
বাহ্, চমৎকার এক মুহূর্তের সৃষ্টি হলো।
গ্রিন রুমে কথা হয় আলম আরা মিনুর সঙ্গে।
বলেন, ভালো লাগল শ্রোতাদের। দেশ দেশের মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসা ঈর্ষণীয়। মন্তব্য করলেন, এরা বড় প্রাণবন্ত। আরও বললেন, এ জন্যই বারবার আসতে ইচ্ছে করবে।
দিলরুবা খানম। নাটকের একটি গান দিয়ে শুরু করলেন। হ‌ুমায়ূন ফরিদী ও সুবর্ণা মোস্তফা ছিলেন এর চরিত্রে। হইল না তো সুখের মিলন...এই গানটি দারুণ আবেগের সৃষ্টি করে।
রাধারমণের গান ভ্রমর কইও শ্রীকৃষ্ণরে বুঝাইয়া...গাইলেন মনপ্রাণ দিয়ে। তাতেও বাজিমাত।
বন্ধুয়া বিহনে গো বাঁচি না পরানে কিংবা দিবা নিশি ভাবি যারে তারে কিনা পাইনা গেয়েছেন মঞ্চে।

শিশুদের পরিবেশনা
শিশুদের পরিবেশনা

পাগল মন মন কেন এত কথা বলে—এ গানে গলা ছাড়ার সাথে শ্রোতারা মাথা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। তারাও গেয়েছেন শিল্পীর সঙ্গে।
গাইলেন আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!
শুভ কামনায় শেষ করলেন। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করলেন।
স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে একক গান গেয়েছেন মাসুম জাভেদ। তিনি হাসন রাজার গানে শ্রোতাদের ভালোবাসা পেলেন। দুবাই থেকে এসেছেন মোহাম্মদ নাজমুল হক। ভালো অনুষ্ঠান সঞ্চালক। সঙ্গে তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান। শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। বিজয় দিবস সম্পর্কে বলেন, ভালোবাসার রক্তে কেনা এই স্বাধীনতা তোমাকে মনে করি। যেন তখন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করলেন।
আয়োজনে সমিতির নতুন সংসদের অভিষেক সংখ্যা উন্মোচন করা হয়। মোহাম্মদ দিদারুল আলম আনলেন সে সংখ্যা সবার সামনে। এ সংখ্যায় সমিতির সভাপতি ভিসা বন্ধে এই দেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। সাধারণ সম্পাদক আহ্বান জানিয়েছেন সবাইকে সমিতিতে সদস্য হওয়ার জন্য।

শিল্পী-শ্রোতা-দর্শক
শিল্পী-শ্রোতা-দর্শক

নিমাই সরকার: আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত।