শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বিজয় দিবস উদ্যাপন

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের দৃশ্য
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের দৃশ্য

বিদেশ বিভুঁইয়ে স্মৃতিসৌধ নেই বলে কি বিজয় দিবস উদ্‌যাপন হবে না! তাই জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি প্রিন্ট করে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করা হয়।

ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের আমরা কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মিলে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের আয়োজন করি। অনেক খুঁজে বাংলাদেশের পতাকা জোগাড় ও স্মৃতিসৌধের ছবি প্রিন্ট করা হয়। এরপর উদ্‌যাপনের স্থান নির্বাচনের পালা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লাইব্রেরি ইনফরমেশন কমন্সের পাশে সবুজ এক টুকরো জায়গা রয়েছে। শীতের দেশ ও হালকা তুষারপাতে ঘাসগুলো যেন চিকচিক করছিল। ঠিক যেন এক টুকরো সবুজ সোনার বাংলা। মনে পড়ে শৈশবের কথা। যখন কলার গাছ দিয়ে স্মৃতিসৌধ বানিয়ে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে খালি পায়ে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করতাম। সেই সবুজ ঘাসের চত্বরে স্মৃতিসৌধের ছবি লাগানোর দুটি স্ট্যান্ডও পাওয়া গেল।
স্ট্যান্ড দুটিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি সাঁটানো হলো। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরও অংশগ্রহণ করেন আমেরিকা, মেসিডোনিয়া ও ফিলিপাইনের আরও তিন সহপাঠী। সব মিলিয়ে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমেই পালিত হয় আমাদের বিজয় দিবস। আমরা গর্বিত বাংলাদেশের বিজয় বার্তা দেশের সীমানার বাইরে সুদূর ইংল্যান্ডে পৌঁছে দিতে পেরে। দেশের বাইরে বিজয় দিবস উদ্‌যাপন এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশিরাও আমাদের দেশের গৌরবগাথা ও ইতিহাস জানার আগ্রহ পোষণ করেন এবং অভিভূত হন। মেথোডি ডেনোভ নামে মেসিডোনিয়ান এক সহপাঠী বলেন শুভ বিজয় দিবস, বাংলাদেশ। এখানে না আসলে হয়তো বীর বাঙালি জাতির ইতিহাস আমার অজানাই থাকত। আমাদের অন্যান্য সহপাঠীরাও আমাদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে। আমাদের পাকিস্তানি সহপাঠী রাজিয়া আলিয়ানী ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আমাদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা পাঠান।
বিশ্বায়নের এ যুগে উচ্চশিক্ষা কিংবা কর্মজীবনের তাগিদে লাখ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ বিভুঁইয়ে শত কষ্টে দিনাতিপাত করেন। তাই বলে কী তাঁরা মাতৃভূমিকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেন? না, বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজেদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। সে ক্ষেত্রে শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো বিজয় দিবস উদ্‌যাপন ছিল আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। প্রথমবারের মতো উদ্‌যাপিত এই বিজয় দিবসে উপস্থিত ছিলেন সাফিরুন শিফা, সুহং বিশ্বাস, জেরিন, শামিন, আমেরিকান সহপাঠী টেইলর হ্যারিস, মেসিডোনিয়ান বন্ধু মেথোডি ডোনেভ ও ফিলিপাইনের সহপাঠী জাইমি ই ক্যাফিয়েদো।

জুয়েল রানা: শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ড।