এডিনবরায় অন্যরকম ক্রিসমাস মেলা
কুয়াশাচ্ছন্ন কনকনে শীতের বিকেল। বিশেষ আলোকসজ্জার ঝলমলে আলোর বিকিরণ আর নানারকম মিউজিকের আওয়াজে পুরোপুরি উৎসবের আমেজ। হাতে ধূমায়িত কফি নিয়ে দর্শনার্থীরা মজে আছেন মেলার প্রকৃত রস আস্বাদনে।
ক্রিসমাস মেলার প্রবেশ পথ দিয়ে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল আকর্ষণীয় সিরামিকের মগে গরম চা কিংবা কফি হাতে দর্শনার্থীদের। সবার হাতে একই রকম মগ। বেশ সুন্দর। এক দম্পতিকে জিজ্ঞেস করলাম এর রহস্য। তারা এসেছেন জার্মানি থেকে এখানে বেড়াতে। একটি দোকান দেখিয়ে তারা বললেন, ওখানে বিক্রি হচ্ছে এই কফি। পানীয়ের দামের সঙ্গে কফি মগের জামানত হিসেবে দুই পাউন্ড রাখছে তারা। মগ ফেরত দিলেই দুই পাউন্ড ফেরত দেবে। বুঝলাম ব্যবসার বিক্রি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে ব্যতিক্রমী এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর!
মেলায় অনেকগুলো ছোট ছোট দোকান। রকমারি পণ্যের পসরা নিয়ে চলছে জমজমাট বাণিজ্য। হরেক রকম আইটেমের মধ্যে আছে বাচ্চাদের খেলনা, শোপিস, স্যুভেনির আর আকর্ষণীয় খাবার। একপাশে ছেলে-বুড়োদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রকম রাইড।
বেশ গোছালো ও পরিপাটি এই মেলা আয়োজনে আয়োজকদের অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। সর্বত্র নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ। আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা। আর দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক প্রহরী। তবে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। নিরাপত্তার অজুহাতে অহেতুক কাউকে বিরক্ত কিংবা বিব্রত করার কোনো প্রয়াস এখানে নেই!
প্রতিবছর এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন এডিনবরায়। কারণ এখানকার বিখ্যাত হগম্যানি ফেস্টিভ্যাল। হগম্যানি শব্দটি স্কটিশ, যার অর্থ বছরের শেষ দিন। অবশ্য বছরের শেষ দিন বলা হলেও এই উৎসব শুরু হয় চার দিন আগে থেকেই। শেষ হয় নতুন বছরের প্রথম দিনে।
ক্রিসমাস মেলার তথ্য সহকারী ইমা আইনলি ওয়াকার জানালেন, কেউ এখানে বেড়াতে আসতে আগ্রহী হলে তাদের থাকা-খাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে করা হয়। তাদের ওয়েবসাইটে www. edinburghshogmanay. com এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে।
স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরা শহরের কেন্দ্রস্থল প্রিন্সেস স্ট্রিট গার্ডেনে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় ক্রিসমাস মেলা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত চলে এই উৎসব। এর সঙ্গে একীভূত হয় হগম্যানি বা বর্ষবরণের আয়োজন। ৩১ ডিসেম্বর এখানেই অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত হগম্যানি উৎসবের বর্ষবরণ কনসার্ট। গানে গানে আলিঙ্গন করা হয় ২০১৮ সালের প্রথম দিন!
বদরুল হোসেন বাবু: এডিনবরা, স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্য।