আমাদের অস্তিত্ব ও অন্তরে থাকে বাংলাদেশ

জাতীয় সংগীত পরিবেশনা
জাতীয় সংগীত পরিবেশনা

‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’—এই গান যেন আমাদের মতো প্রবাসীদের প্রতিটি নিশ্বাসে প্রোথিত ও অন্তরে গাঁথা। দেশের জাতীয় দিনগুলোতে যেন এই অনুভূতি আরও প্রকট হয়ে পড়ে।

মালয়েশিয়ার পাহাং প্রদেশের সাগর তীরের ছোট্ট শহর কুয়ানতান। এই শহরের ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া পাহাং-এর ৬৫ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও তাদের পরিবার নিয়ে ছোট্ট বাঙালি কমিউনিটি। এই কমিউনিটি গত ডিসেম্বর মাসে তিন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে।

বিজয় র‍্যালি
বিজয় র‍্যালি

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিদর্শনপূর্বক নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়। এরপর আয়োজন করা হয় বিজয় দিবসের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। চারটি দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এই খেলায় অংশগ্রহণ করে।

প্রীতি ফুটবল ম্যাচের খেলোয়াড়েরা
প্রীতি ফুটবল ম্যাচের খেলোয়াড়েরা

১৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দিন আয়োজন করা হয় বিজয় র‍্যালি। এতে অংশগ্রহণের জন্য বাচ্চারা ছোট ছোট জাতীয় পতাকা বানিয়ে, সাইকেল সাজিয়ে প্রস্তুতি নেয়। আমার তখন মনে পড়ে যায় আমাদের শৈশবে আমরা বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ছোট ছোট পতাকা দিয়ে পুরো বাড়ি ও বাড়ির ছাদ সাজাতাম। ছাদে সবচেয়ে উঁচু স্থানে একটা বাঁশে বড় একটা পতাকা টানাতাম। তার চারপাশে দড়ির সঙ্গে ছোট ছোট পতাকা লাগিয়ে নিচ পর্যন্ত চারদিকে ছড়িয়ে দিতাম। দেখে মনে হতো ঠিক যেন স্মৃতিসৌধ। একেকটি বাড়ির ছাদ যেন একেকটি স্মৃতিসৌধ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াত। বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের কথা বলত। ভালো লাগায় মন ভরে যায় যে, দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও আমাদের বাচ্চাদের মাঝে দেশের প্রতি আমাদের অনুভূতিগুলো ছড়িয়ে দিতে পারছি। বিজয় র‍্যালির পর প্রীতি ফুটবল ম্যাচের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

নৃত্য পরিবেশন করছে নীলাচল ছোঁয়া
নৃত্য পরিবেশন করছে নীলাচল ছোঁয়া

আমাদের এই বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের পাশাপাশি আমাদের সন্তানদের মাঝে দেশপ্রেমের বীজ বুনে দেওয়া এবং দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানানো। সেই লক্ষ্যে তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর আয়োজন করা হয় ছোটদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নেয় এক বছর থেকে ১৩ বছরের বাচ্চারা। তারা বাংলাদেশের প্রকৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিসৌধ ও পতাকার ছবি আঁকে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

সংগীত পরিবেশনা
সংগীত পরিবেশনা

পুরো অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় ছোটদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আলোচনা, দেশের গান, নাচ আর কবিতা দিয়ে। অনুষ্ঠানে বড়দের পাশাপাশি আমাদের ছোট্ট সোনা মণিরা নাচে গানে পুরো সময়টি রাঙিয়ে তোলে। সবশেষে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের বিজয়ী দল ও ছোটদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

প্রবাস জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তিন দিনব্যাপী বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করে যেন দেশের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাকেই প্রদর্শন করলেন আরও একবার। যত দূরে, যেকোনো পরিবেশে থাকি না কেন আমাদের অস্তিত্বে, অন্তরে থাকে বাংলাদেশ। এ যেন দেশ থেকে দূরে গিয়ে দেশকে আরও বেশি করে বুকে ধারণ করা, লালন করা।

আফরোজা নিঝুম: কুয়ানতান, পাহাং, মালয়েশিয়া।