বাতাসের ভেলায় একদিন

মেঘের দেশে
মেঘের দেশে

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসার বারান্দায় বসে থাকা বা পায়চারি করা আমার আর তাহিয়ার অনেক দিনের পুরোনো অভ্যাস। তাহিয়া আমার মেয়ে। এখন যে বাসায় আমরা আছি সেই বাসায় আসার পর থেকে এই অভ্যাসটা আরও নিয়মিত হয়ে গেছে। বাসাটা একেবারে পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় বাসার বারান্দায় বসে পশ্চিম দিকে দৃষ্টি রাখলেই আদিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতি ধরা দেয়।

একদিন ছুটির দিনের ভোরবেলায় তাহিয়া এসে বলল, বাবা আকাশে দুইটা বেলুন দেখা যাচ্ছে। আমি তাহিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি সত্যিই আকাশে দুটো বেলুন ভেসে বেড়াচ্ছে। এরপর তাহিয়া বলল, বাবা আমি বেলুনে চড়তে চাই। আমি ওর কথা মাথায় রেখে সেই দিনই গুগলে খুঁজে বের করলাম বেলুন এলফটের ওয়েবসাইট। সেখান থেকে জানতে পারলাম তারা প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই বেলুন ফ্লাইটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সিডনির তিনটা জায়গা—ক্যামডেন ভ্যালি, হান্টার ভ্যালি ও মুডগি থেকে তারা বেলুন ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এর বাইরে ক্যানবেরা ও মেলবোর্নেও তারা বেলুন ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
আমি আমার বাসার কাছাকাছি ক্যামডেন ভ্যালি নির্বাচন করলাম যাদের বেলুনগুলো আমাদের বাসা থেকে দেখা যেত। কিন্তু মূল্য তালিকা দেখে একটু দমে গেলাম। পরে ভাবলাম বাচ্চাদের নিশ্চয় একটু কম ফি লাগতে পারে। সেই আশায় তাদের ফোন দিয়ে যা জানলাম তাতে আরও বেশি দমে গেলাম। বাচ্চাদের বেলুনে চড়তে গেলে বাচ্চার সঙ্গে অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ থাকতে হবে। তার মানে তাহিয়াকে বেলুনে চড়াতে চাইলে আমাকেও অবধারিতভাবে ওর সঙ্গে চড়তে হবে এবং দ্বিগুণ টাকা গুনতে হবে ভেবে চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।

বেলুন ফোলানো হচ্ছে
বেলুন ফোলানো হচ্ছে

এরপর সময় গড়িয়ে তাহিয়ার জন্মদিনটা এগিয়ে আসছিল ভেবে চিন্তাটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ভাবলাম ওকে জন্মদিনে বেলুনে চড়ালে কেমন হয়? একবারই তো চড়াব। হোক একটু বাড়তি খরচ। ওর জন্মদিনের কথা মাথায় রেখে অনলাইনে ৪ জানুয়ারি বেলুন ফ্লাইটের টিকিট কেটে ফেললাম। রাতে নিজেরাই জন্মদিনের কেক কাটার পর তাহিয়াকে বললাম, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে। কারণ ভোর চারটায় আবার উঠতে হবে। তাহিয়ার প্রশ্নের উত্তরে শুধু বললাম, ওর জন্য একটা বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
রাতেই আমরা সকালে কী পোশাক পরব ভেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সিগুলো বের করে রাখলাম। সেগুলো দেখে তাহিয়া ভাবল, সকালবেলা বোধ হয় আমরা ক্রিকেট খেলতে যাব। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুধু দাঁতটা ব্রাশ করে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আমাদের মনে হলো আমরা বোধ হয় ভুল জায়গায় চলে এসেছি। সেটা একটা হোটেলের কম্পাউন্ড। দুজন লোককে দেখতে পেয়ে আমরা জানতে চাইলাম এখান থেকে কি বেলুন ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এখন একটু বাতাসের গতিবিধি পর্যালোচনা করছি। তোমরা আমার সঙ্গে আসো বলে একজন আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল।
হোটেলের রিসেপশনে নিয়ে হাতে একটা ট্যাব দিয়ে বলল এখানকার স্টেপগুলো ফলো করে তোমাদের এন্ট্রি করে ফেলো। এন্ট্রি শেষ হওয়ার বলল তোমাদের যদি টয়লেটে যেতে হয় তবে সেটা এখনই সেরে নাও। কারণ সকাল সাড়ে সাতটার আগে কিন্তু আর টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে না। সেটা শুনে আমরা টয়লেট সেরে নিলাম। এর মধ্যে আমাদের সহযাত্রী সকলেই চলে এল এবং সবাই একইভাবে এন্ট্রি ও টয়লেট ব্যবহারের পর একজন সবাইকে হোটেলের সামনে রাখা বাসে গিয়ে বসতে বললেন।
বাসে বসার পর বাসের চালক আমাদের সবাইকে স্বাগত জানিয়ে হাসিঠাট্টা শুরু করে দিলেন। একটু পরে আমাদের বেলুন ফ্লাইটের পাইলট ক্লেম এসে তার পরিচয় দিয়ে দুটি নিয়মকানুনের কথা বলে গেলেন। সেগুলো হচ্ছে এখানে কোথাও ধূমপান করা যাবে না। কারণ এখানে প্রায় ৩০০ লিটার জ্বালানি আছে আর বেলুন ফোলানোর সময় যে ফ্যানগুলো দিয়ে বেলুনে বাতাস ভরা হবে সেগুলো থেকে একটু দূরে থাকতে। সেগুলো অনেক বেশি জোরে শব্দ করে। ক্লেম নেমে যাওয়ার পর বাস আমাদের নিয়ে এগিয়ে চলল।
বাসের চালক আমাদের বললেন, তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে করতে পারো। সবাই যার যার প্রশ্ন করতে থাকলেন আর তিনি সেগুলোর উত্তর দিয়ে যেতে থাকলেন। আর যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানেন না বা যে প্রশ্নগুলো অপ্রাসঙ্গিক সেগুলো নিয়ে হাসি তামাশা করে আমাদের সবাইকে আনন্দ দিয়ে চললেন। বেলুন ফ্লাইটের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর পর আমাদের পাইলট আবার বাতাসের গতিবিধি পরীক্ষা করে নিলেন।
এরপর শুরু হলো বেলুন ফোলানোর কাজ। বেলুনটাকে মাটিতে বিছিয়ে গ্যাসের সাহায্যে বেলুন ফোলাতে হয়। গ্যাসের বার্নারে আগুন দিয়ে সেটার মুখ বেলুনের নিচের খোলা অংশের সামনে রাখা হয়। গ্যাস যাতে বেলুনের দিকে যায় সে জন্য দুটো ফ্যানকে বেলুনের দুপাশ থেকে চালু রাখা হয়। আর দুজন দুই পাশ থেকে বেলুনের মুখটাকে উঁচু করে ধরে খোলা রাখে। একাজে বেলুনের যাত্রীরাও স্বপ্রণোদিত হয়ে সাহায্য করেন। আমি আর অন্য একজন সহযাত্রী দুপাশ থেকে বেলুনটার মুখটাকে উঁচু করে ধরে রাখলাম। ধীরে ধীরে বেলুনটা ফুলতে শুরু করল। বেশ কিছুটা ফুলে যাওয়ার পর আমাদের বলা হলো আর ধরে রাখা লাগবে না। এরপর বাকি অংশ এমনিতেই ফুলতে থাকল।
পুরোপুরি ফোলানোর পর বেলুনটা একেবারে বাতাসে ভাসার পর বেলুনের বেসটাও দাঁড়িয়ে যায়। বেলুনের বেসটাতে মোট পাঁচটা ছোট ছোট কুঠুরি আছে। চারটা চার কোনায় আর একটা একেবারে কেন্দ্রে। চার কোনার চারটা যাত্রীদের জন্য আর কেন্দ্রেরটা পাইলট ও জ্বালানির জন্য। যাত্রীদের প্রকোষ্ঠগুলোতে মোট ছয়জন করে যাত্রী চড়তে পারে। আমাদের ফ্লাইটে মোট যাত্রীর সংখ্যা ছিল ২২ জন। তাই পাইলট শুরুতেই সকলকে বেসটার পাশে দাঁড় করিয়ে কে কোন প্রকোষ্ঠে উঠবে ঠিক করে দিলেন।
আমরা বেসটার গায়ের ছিদ্রগুলোতে পা রেখে অনায়াসে প্রকোষ্ঠগুলোতে উঠে পড়লাম। এরপর বেলুনের গায়ে ঝোলানো দড়ির সঙ্গে একটা ক্যামেরা ঝুলিয়ে দেওয়া হলো, আমাদের ভিডিও ধারণ ও ছবি তোলার জন্য। সকল যাত্রী উঠে পড়ার পর পাইলট আমাদের বেলুন বাতাসে ভাসিয়ে দিলেন। তখন এটাকে বাতাসে ভাসমান একটা ভেলা মনে হচ্ছিল। শৈশব–কৈশোরে পুকুরে খালে আমরা যেমন কলা গাছের ভেলা ভাসাতাম এখানে বেলুনটাকে ঠিক তেমন মনে হচ্ছিল। পানিতে ঢেউয়ের কারণে ভেলা যেমন মাঝেমধ্যে দুলে উঠত ঠিক তেমনি বেলুনটাও বাতাসে দুলে দুলে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে চলল।

নাশতার টেবিলে লিলিয়ান ও তাহিয়া
নাশতার টেবিলে লিলিয়ান ও তাহিয়া

পাইলট সময়ে সময়ে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছিলেন আমরা ভূপৃষ্ঠ থেকে কখন কত উচ্চতায় আছি। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় কত কিলোমিটার ইত্যাদি সব তথ্য। যাত্রীরাও বিভিন্ন প্রকারের প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন আর তিনিও সাধ্যমতো উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি যেমন জিজ্ঞেস করলাম আমাদের বাসার এলাকা মিন্টো কোন দিকে? তিনি তখন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ওই দিকে। একজন জিজ্ঞেস করলেন তারা কেন দিনের বেলায় বেলুন ফ্লাইট পরিচালনা করেন না? তার উত্তরে তিনি বললেন সূর্যের তাপে বাতাসের গতি খুবই দ্রুত পরিবর্তন হয়। তখন বেলুনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই বেলুন ফ্লাইট সবসময়ই সকাল হওয়া মাত্র শেষ করে দেওয়া হয়। এটা শুনে আমাদের প্রকোষ্ঠের বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রলোক বললেন, আমি এখন বুঝতে পারছি আবহাওয়াবিদদের কাজটা কত কঠিন। সেটা শুনে আমরা সবাই হেসে ফেললাম। এরই মধ্যে চলল ছবি তোলার কাজ। কেউ চারপাশের প্রকৃতির ছবি তুলছিলেন আবার কেউ কেউ তাদের বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন। আবার একজন অন্যজনের ছবিও তুলে দিচ্ছিলেন।
এভাবে চলতে চলতে চলতে আমরা একসময় মেঘের দেশে উঠে গেলাম। অস্ট্রেলিয়ায় এখন গরম কাল। কিন্তু তখন বেশ ঠান্ডা লাগতে শুরু করছিল। তাহিয়া বলল বাবা অনেক শীত লাগছে। আমি বললাম, তুমি তাহলে প্রকোষ্ঠের মধ্যে বসে পড়। এরপর পাইলট আমাদের মেঘটার ওপরে নিয়ে গেলেন। তখন মনে হচ্ছিল আমরা যেন মেঘের সমুদ্রে একটা ভেলায় করে ভেসে বেড়াচ্ছি। চারদিকে মেঘ আর তার মাঝে আমরা ভেসে বেড়াচ্ছি। তারপর আবার আমাদের মেঘের নিচে নামিয়ে নিয়ে এলেন। এভাবে আমরা একসময় প্রায় পাঁচ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় চলে গিয়েছিলাম। একজন পাইলটকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাব। উত্তরে পাইলট বললেন, এমনিতে বেলুনে দিক ঠিক করার জন্য কোনো কিছু নেই। তাই আমরা বেলুনটাকে বাতাসের মধ্যে অনবরত ঘুড়িয়ে মোটামুটি দিক ঠিক রাখি।
বেলুনের ওপর থেকে নিচের সবকিছুকেই অনেক বেশি ছোট দেখাচ্ছিল। আমাদের প্রকোষ্ঠের বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রলোক তাহিয়াকে বললেন, তুমি নিচে ছোট ছোট যে গাড়িগুলো চলতে দেখছ সেগুলো আসলে খেলনা গাড়ি। আমি যোগ করলাম, জি একেবারে লেগো খেলনার ছোট ছোট গাড়ির মতো। এভাবে গল্পে গল্পে সময় ফুরিয়ে এল। এর মধ্যেই বেলুনের পাশের দড়িতে ঝোলানো ক্যামেরায় আমাদের বেশ কিছু ছবি তুলেছেন আমাদের পাইলট। একসময় তিনি আমাদের জানিয়ে দিলেন আমরা আর দশ মিনিটের মধ্যে ভূমিতে অবতরণ করব। এরপর একসময় বললেন আর পাঁচ মিনিট পরে। আমি বেলুনের ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেলুনের আসলে মোট দুইটা অংশ। সম্পূর্ণ বেলুনের খোলসটা একটা অংশ আর একেবারে ওপরে গোলাকৃতি ছাদের মতো আরেকটা আলাদা অংশ। বেলুনটাকে নিচে নামানোর সময় ওপরের গোলাকৃতি অংশটা সংকুচিত করার ফলে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে আর সেই ফাঁকা দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে আর আমরা ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসছি। ভূমির একেবারে কাছাকাছি এসে পাইলট বললেন তোমাদেরকে নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে না কারণ আজকের বাতাসের গতিবিধি ভালো। এখানে উল্লেখ্য ভূমিতে অবতরণের সময় পা ভাঁজ করে প্রকোষ্ঠগুলোর গায়ে ঝোলানো দড়ি ধরে রাখতে হয় ভূমিতে স্পর্শ করার ধাক্কাটা সহ্য করার জন্য। কিন্তু আমাদের সেদিন সেটা করতে হয়নি।
ভূমিতে অবতরণের পর বেলুনের একপাশে ঝোলানো দড়িটাকে ওখানে আগে থেকেই উপস্থিত গাড়ির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বেলুনটাকে মাটিতে নিয়ে ফেলা হলো। এরপর ধীরে ধীরে প্রায় সমস্ত বাতাস বেরিয়ে গেলে বেলুনটাকে সকল যাত্রী মিলে পেঁচিয়ে একটা বিশালাকৃতির অজগরের আকার দিল। তারপর সেটাকে সবাই মিলে কোলে নিয়ে একটা ট্রলিতে নিয়ে এসে ফেলল। বেলুন মাটিতে পরে যাওয়ার পর বেলুনের ভেতরে গিয়ে আমরা বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম।
আমাদের সঙ্গেই আরও এক বাবা ও মেয়ে এসেছিল এই বেলুন ফ্লাইটে। মেয়েটার নাম লিলিয়ান। তাহিয়া তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে দ্রুত বন্ধুত্ব করে ফেলল। তারপর দুজনে মিলে মাটিতে পড়ে থাকা বেলুনের ওপর অনেকক্ষণ ধরে লাফালাফি করে চলল। ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা বেলুন ফ্লাইটের চেয়ে এই বিষয়টা বেশি উপভোগ করছে। দ্রুতই ওদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর হয়ে গেল।
আমরা বড়রা বেলুন গোছানোতে ব্যস্ত আর ওরা দুজন অনেক দুষ্টুমি করে চলল। এমনকি ফেরার পথে বাসে ওরা পাশাপাশি সিট নিয়ে নিল। আর আমরা বাবারা বসলাম অন্য সিটে। আসলেই শিশুদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত কীভাবে একজন নিতান্ত অপরিচিত মানুষকে দ্রুতই আপন করে নেওয়া যায়। সারা পথ ওরা গল্প করে চলল। হোটেলে ফিরে নাশতা আমাদের বেলুন ফ্লাইটের শেষ অংশ হিসেবে সংযুক্ত ছিল। সেখানেও ওরা আমাদের বলল যে আমরা সবাই একসঙ্গে বসব। আমরা সবাই একসঙ্গে বসে নাশতা শেষ করলাম।
তারপর বের হয়ে আসার আগে আমাদের পাইলটের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন আমাদের ছবি এবং সম্পূর্ণ ফ্লাইটের ছবি পেনড্রাইভটাতে আছে। তোমরা মাত্র বিশ ডলারের বিনিময়ে এটা নিতে পারো। কিন্তু পেমেন্ট করতে হবে ক্যাশে। কিন্তু পাশের দুটি এটিএম বুথেই তখন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলাতে আমরা টাকা তুলতে পারছিলাম না। তাই পেনড্রাইভটা না নিয়ে চলে আসছিলাম। তখন পাইলট বললেন, তোমরা এটা নিয়ে যাও টাকা দেওয়া লাগবে না। শুনেতো আমরা মহা খুশি। পাইলটা ক্লেমকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা ফেরার পথে পা বাড়ালাম। এই সমস্ত ভ্রমণের আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে হয়েছে সব যাত্রীর সঙ্গে সব যাত্রীর পরিচয়ের অংশটা। নতুন কোনো জায়গাতে বা ভ্রমণে যাওয়ার সবচেয়ে উপকারী দিক হচ্ছে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। এভাবে আমরা যখন একে অপরের সম্বন্ধে জানব তখন এমনিতেই আমাদের মধ্যে সব রকমের ভেদাভেদ কমে আসবে। আর এই শিক্ষাটাই আমরা শিশুদের কাছ থেকে নিতে পারি।

মো. ইয়াকুব আলী: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।