প্রিয় শৈশব, যেখানেই আছ ভালো থেকো!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বিকেল নেমে এলেই মনে পড়ে যায় গ্রামের সেই মেয়েটির কথা। যে আমার সঙ্গে ছায়ার মতো মিশে থাকত সারা বেলা। যে কিশোরী মেয়েটি তার মেঘকালো লম্বা চুলে দুই বেণি দুলিয়ে পুকুরের স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে আনমনে কল্পনায় মাছেদের সঙ্গে সাঁতার কাটার স্বপ্নে বিভোর থাকত। যে মেয়েটি বিকেলবেলা তাদের বাড়ির দক্ষিণ পাড়ে একা বসে নীড়ে ফিরে যাওয়া পাখিদের গুণে গুণে রাখত এবং মনে মনে পাখির মতো ওড়ার ইচ্ছে পোষণ করত। যে মেয়েটি বিকেলে ঘরে ফিরে যাওয়া সূর্যের সঙ্গে খেলায় মেলায় খুনসুটিতে মনোমুগ্ধকর সময় কাটাত এবং ডুবে যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখত, সে একদিন সূর্যরঙা জামদানি শাড়ি পরে, চোখে কাজল মেখে প্রিয় হাতটি ধরে বেড়াতে যাবে অনেক দূরের প্রিয় মাঠে নৌকায় চড়ে...।

ইট কাঠের এই শহরে দালানকোঠা পেরিয়ে মায়াবী সূর্যের দেখা পাওয়া দুষ্কর। তবুও বিকেল নেমে এলেই গ্রামের সেই মেয়েটির কথা আমার খুব মনে পড়ে যায়। যে মেয়েটি আকাশের বুকে উড়ে যাওয়া মেঘেদের ভাঁজে ভাঁজে কত রঙিন ছবি এঁকে রেখেছিল রংধনুর সাত রঙে।
এই শহরে সন্ধ্যা নেমে এলেই রুটিন মাফিক নিয়নবাতিগুলো যখন একে একে জ্বলে ওঠে। তখনই আমার বুকের ভেতর জ্বলে ওঠে শৈশবের কেরোসিনের কুপি আর মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে গ্রামের সেই মেয়েটির কথা। যে মেয়েটি সন্ধ্যাবেলায় তার আঙিনায় সবুজ ঘাসের সঙ্গে মায়ার খেলা খেলত, লজ্জাবতীদের ছুঁয়ে দিয়ে হাসি আনন্দে ভেঙে পড়ত তাদের নুয়ে পড়া দেখে। সারা বিকেলের দৌড়ঝাঁপ শেষে গ্রামের ক্লান্ত সে মেয়েটি হারিকেনের আলোয় পড়ার টেবিলে বসতে না বসতেই রাজ্যের সব ঘুম নেমে আসত তার দুই চোখ জুড়ে। গৃহশিক্ষকের মার এবং মায়ের বকুনির ভয়ে বিজ্ঞান বই সামনে রেখে গলা ফাটিয়ে কিছু সময় মুখস্থ বাংলা কবিতা পড়েই মেয়েটি তার মায়ের বুকের ওমে ভাইবোনদের মাঝখানে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যেত।

পলি শাহীনা: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।