দেখার মতো এক আতশবাজি

আতশবাজি
আতশবাজি

একদিন আগে আবহাওয়া অফিসের সতর্কতা সংকেত ছিল মধ্যরাতে ৮০ মাইল বেগে দমকা হাওয়া ঝড় সহকারে প্রবাহিত হবে। পরদিন অবশ্য সেই ঝড় কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। তবে ঘূর্ণিঝড় দাইলানের পূর্বাভাস মেলার আয়োজনকে কিছুটা বিঘ্নিত করলেও শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ারকে স্তিমিত করে রাখতে পারেনি। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হন মধ্যরাতের কনকনে আবহাওয়ায় সকল ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে।

আতশবাজি
আতশবাজি

এডিনবরা শহরের প্রাণকেন্দ্র প্রিন্সেস স্ট্রিটে জড়ো হওয়া প্রাণবন্ত মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। বড় বড় সাইট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল লাইভ কনসার্ট। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয় বিশাল তিনটি স্টেজ। তাতে তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণ সংগীতপিপাসু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের আনন্দ উদ্‌যাপনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় এই বর্ষবরণ উৎসবে এবারে উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সঞ্জিব কোহলি ও মার্টিন গ্রিন, যিনি ২০১২ সালের অলিম্পিক উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। সার্বিক বিনোদনের দায়িত্ব দেওয়া কয়েকটি বড় সংস্থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্রিয়েটিভ স্কটল্যান্ড, ইভেন্ট স্কটল্যান্ড ও সিটি কাউন্সিল।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য


রাত ৯টা থেকে প্রতি ঘণ্টায় বিশেষ ফায়ারওয়ার্ক্স বা আতশবাজির মধ্য দিয়ে আগতদের উৎফুল্ল রাখা হয়। নাইট ওয়ার্ক্স নামের একটি সংস্থার পরিচালনায় আকর্ষণীয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ছিল চলচ্চিত্রকার ড্যান জোন্সের অভিনব উপস্থাপন। সে ছিল এক দেখার মতো প্রদর্শনী! রাতের অন্ধকারে মধ্য আকাশ আলোর কারসাজিতে রঙিন ও অনবদ্য হয়ে ওঠে।
প্রিন্সেস স্ট্রিট গার্ডেনের কনসার্টে অংশ নেন স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত শিল্পীরা। এর মধ্যে নীনা নেসবিত পরিবেশন করেন তার বিখ্যাত গান স্টে আউট। আরও গান করেন ডেক্লান ম্যকিনা এবং যুক্তরাজ্যের সমসাময়িক অন্যতম শীর্ষ শিল্পী রাগ এন বোন ম্যান।

কিছু স্কটিশ শব্দের কার্ড
কিছু স্কটিশ শব্দের কার্ড


নতুন বছরের প্রথম লগ্নে সমাগতদের হর্ষধ্বনি আর আতশবাজির নিপুণ কারুকার্যে বরণ করা হয় নববর্ষ ২০১৮। প্রায় ১৩ মিনিট ধরে চলে মধ্যরাতের নীরবতা ভেঙে শব্দ আর আলোর খেলা। একাকী এসব অনুষ্ঠানে আসাটা অনেক সময় অসার মনে হয়। তবে চারদিকে প্রাণবন্ত মানুষের এই জমজমাট মেলায় সেরকম অনুভূতি হয়নি। কথা হলো এখানে রবাহূত অনেকের সঙ্গে। এডিনবরার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম থেকে এসেছেন দুই তরুণ রায়ান ও অ্যাশলি। নববর্ষের উষালগ্নে তাদের একজন আমাকে উইশ করল—হ্যাপি নিউ ইয়ার ম্যাই। হ্যাভ ইউ হ্যাড এ নাইস ইভিনিং? আমি বললাম ফ্যান্টাস্টিক। এরপর তারা আমার সঙ্গে তুলে নিল সেলফি।

সার্কাস শিল্পীর কসরত
সার্কাস শিল্পীর কসরত

বরাবরের মতোই এবারের হগম্যানি ছিল শান্তিপূর্ণ। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে হগম্যানি উৎসব ব্যবস্থাপনার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক কেনি ম্যাকডোনাল্ড বেশ উৎফুল্লভাবেই বললেন, নতুন বর্ষকে চমৎকারভাবে আলিঙ্গন করে এডিনবরা আরও একবার দেখাল কেন তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি শহর!
এবারের হগম্যানি উৎসবে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া উনিশ শতকের বিখ্যাত নারী ঔপন্যাসিক সুসান এডমনস্টন ফেরিয়ারকে। হগম্যানির অন্যতম একজন আয়োজক ভ্যাল ম্যাকডারমিড। তিনি জানালেন, আমরা সুসানকে ভুলে গেছি। যার বই একসময় ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। তাকে আমরা আবার পাঠকদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে চাই।

সংগীত পরিবেশন করছেন নীনা নেসবিত
সংগীত পরিবেশন করছেন নীনা নেসবিত

বদরুল হোসেন: পরিব্রাজক লেখক, গবেষক ও ব্লগার। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।