প্রেমটুকুই আলো, বাকি পথ যেন অন্ধগলি

সংগৃহীত
সংগৃহীত

পান-সুপারি নিয়ে বেশ আয়েশ করেই ঝগড়াটা জমাতেন দাদিজান। যত রাগ শর্তার (সুপারি কাটার যন্ত্র) ওপর। ঠাস ঠাস সুপারি কাটা আর ফোঁস ফোঁস করে দাদার দিকে তাকানো। কথা বলার সাহস আর হতো না। নথ নেড়ে নেড়ে সুপারি কাটার আওয়াজটুকু একটু বাড়িয়ে দিতেন। গলায় ঝুলত মালাছরা। ভীষণ ফরসা গলায় সেই মালাছরা আমাকেও স্বপনে সোনার-পালকি চড়িয়ে আনত। আমিও দাদির মতো বউ–বউ সুন্দর ছিলাম। শুধুই ভাবতাম বউ মানেই লাল বউ! সুন্দর মেয়েগুলোই তো বউ হয়।

সংগৃহীত
সংগৃহীত

উঠোনময় দাদি হেঁটে বেড়াতেন। বাঁশঝাড়ের মধ্য দিয়ে জোছনাটুকু ঠিকরে পড়ত চোখ গাল বুক জুড়ে। নথ দুলত ঐতিহাসিক চিহ্ন হয়ে। পৌরাণিক গল্পের মতো। পনেরো থেকে পঁচাশি, সংসার যাপন আর গেরস্থালি ভাবনাতেই কাটিয়ে দিলেন দাদিজান। প্রেমপুথি দাম্পত্য ওই প্রাচীন-পরম্পরার সিন্দুকেই বন্দী। কদম-তলার রুমালে সুঁইফোড়ও। নিশ্চয়ই প্রেমে পড়েছিলেন। যত মিথই লেখা হোক, সুন্দর মেয়ে প্রেমে পড়েনি, এ–ও কী বিশ্বাসযোগ্য? যেমন আমি যত কসমই কাটি, কস্মিনকালেও কেউ বিশ্বাস করবে না, আমি প্রেমে পড়িনি...বন্ধুদেরকে দুষ্টুমি করে বলি, ‘জানিস! প্রেম বহুবার আমার ওপর পড়েছে...আমার বাউল মন শুধুই মগ্ন ছিল সেই-ই বংশীবাদকের প্রেমে...।’
প্রেম ছাড়া যে জীবন সে তো অন্ধকার। জানি আঁধারেরও আছে রূপ, তবুও আলো ছোঁয়া চাই। প্রেমটুকুই আলো, বাকি পথ যেন অন্ধগলি!

(১৬ জানুয়ারি ২০১৮)

মুক্তা মাহমুদা, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।