নিঃসঙ্গ নক্ষত্র

নিঃসঙ্গ নক্ষত্র
নিঃসঙ্গ নক্ষত্র

‘গল্প কি কখনো সত্যি হয়? কিংবা সত্যি কি কখনো গল্পের মতো শোনায়? সত্যি যদি গল্প না হয়, গল্প যদি সত্যি না হয় তবে বোঝা বড় দায় কী সত্যি আর কী গল্প।’—এডগার অ্যালানপো।

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভেতর এই ক্ষমতাটা কখনোই আসে না। সুপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন প্রথম পক্ষের লোক। তার লেখনী দিয়েই সবাইকে মুগ্ধতার স্বপ্নে বিভোর করে রাখেন বরাবরই।

মানুষটার সঙ্গে আমার দৃশ্যমান কোনো সখ্যতা নেই। ফেসবুকে তার লেখা পড়তে পড়তে গত বছর তিনেক ধরে একটা অদৃশ্য সম্পর্কের ভিত তৈরি হয়ে গেছে।

না, আমি দেশের বাইরে থাকাতে ‘আরশিনগর’, ‘অন্দরমহল’ ও ‘মানবজনম’—এই তিন উপন্যাসের একটিও তাৎক্ষণিকভাবে পড়তে পারিনি। ইন্টারনেট ও ফেসবুকের সুবাদে তার লেখা কবিতা, ছোট গল্পগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে, তার নান্দনিক লেখনী থেকে আমার পাঠক সত্তাকে বঞ্চিত করলে নিজের প্রতি একধরনের ঘোর অবিচার হবে। পরে বাংলাদেশ থেকে আনিয়ে তিনটি উপন্যাসই গোগ্রাসে গিলে মুখিয়ে থাকা আমার ভেতরের পাঠক সত্তাকে তার পাওনাটা সুদ–আসলে মিটিয়ে দিয়েছিলাম।

আসলেই দারুণ লেখেন তিনি! তার লেখায় এক ধরনের মাদকতা আছে। আছে শৈল্পিকতা। গৎবাধা গতানুগতিকতা থেকে বের হয়ে তিনি তার ঝরঝরে লেখায় শৈল্পিক ভঙ্গিতে তুলে নিয়ে এসেছেন রোমান্স, পারিবারিক মেলবন্ধন আর কখনো বা শুদ্ধ বন্ধুতা কিংবা স্বচ্ছ দেশপ্রেম।

চরিত্র চিত্রায়ণের ক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। লেখকের সব চেয়ে বড় যে গুণটা আমাকে প্রচণ্ড মুগ্ধ করেছে তা হলো, তার গল্প বা উপন্যাসের চরিত্রগুলোতে আমি নিজের ছায়া দেখতে পাই। মনে হয় আমিই গল্পের মূল চরিত্র। মনে হয়, ঠিক আমার মনের কথাগুলোই নিংড়ে নিংড়ে কলমের খোঁচাই তুলে এনেছেন।

সকালের সূর্য দেখলে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। সকালের সূর্য ঝকঝকে আলোকিত হলে দিনটা উজ্জ্বল হবে আর সূর্যটা যদি মেঘের কারণে গুমোট ভাব নিয়ে থাকে তাহলে দিনটা অনুজ্জ্বলই হবে, এটাই স্বাভাবিক।

আগের বইমেলাগুলোতে লেখকের আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম তিনটা উপন্যাস দিয়ে তিনি শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্তভাবে। পেয়েছেন আকাশসম জনপ্রিয়তা। সামনের মহান একুশে বইমেলায় প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ উপন্যাসটাও ঠিক একইভাবে আলো ছড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। লেখনীর জাদুতে মোহগ্রস্ত হয়ে থাকবে পাঠক হৃদয়।

আরশিনগর, অন্দরমহল ও মানবজনম
আরশিনগর, অন্দরমহল ও মানবজনম

তার ফেসবুক ওয়ালে নিঃসঙ্গ নক্ষত্র উপন্যাসের কিছু কিছু অংশ পড়েছি। পড়ে মনে হয়েছে, গল্পটা একজন মধ্যবিত্ত নারী অণুর কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধের গল্প, হেরে যাওয়ার গল্প, জিতে যাওয়ার জীবনমুখী গল্প। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে, হালের পাঠকদের মনে ঝড় তুলতে আসছে একজন অণু নামের মেয়ে।

অনেক অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও একটা বিশাল সমুদ্রকে ছোট একটা ফ্রেমে নান্দনিকভাবে তুলে আনাটাই হচ্ছে শিল্প! যিনি তুলে আনেন তাকে আমরা শিল্পী বলি।

আর কয়েকটা গোটা গোটা জীবনের বিশাল কল্প কাহিনিকে উপন্যাসের পাতায় নান্দনিকভাবে তুলে আনাটাই হচ্ছে লেখালেখি। আর যিনি লেখেন তাকে আমরা লেখক বলি।

যদিও কাজটা খুব একটা সহজ নয়! তার আগের তিনটি উপন্যাস পড়ে যা মনে হয়েছে, ওয়ান বাই ওয়ান মিটারের স্কেচে বিশাল সমুদ্রটাকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ শিল্পীর মতো জাদুকরী মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন! আশা করছি নিঃসঙ্গ নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও একই ধারা বহমান থাকবে।

প্রিয় পাঠক, শুরু করেছিলাম অ্যালানপোর উক্তি দিয়ে। সাদাত হোসাইনের কলমের মুনশিয়ানা এতই পরিপক্ক যে, পড়লেই মনে হয় গল্প কখনো কখনো আসলেই সত্যি হয়, কিংবা সত্যি কখনো কখনো গল্পের মোড়কে ধরা দেয়...।
জয়তু নিঃসঙ্গ নক্ষত্র!

বশির আহমেদ রাকিব: জেদ্দা, সৌদি আরব