অ্যালিসের বিস্ময় রাজ্যে একদিন

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড প্রদর্শনীর প্যানারোমিক ভিউ
অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড প্রদর্শনীর প্যানারোমিক ভিউ

লুইস ক্যারলের অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড ছোট বড় সকল মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় এক উপন্যাসের নাম। সেটা আরও বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল রুপালি পর্দায়। সর্বশেষ ওয়াল্ট ডিজনির মাধ্যমে পর্দায় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুপালি পর্দায় হাজির হয় বিস্ময় বালিকা অ্যালিস। যার মাধ্যমে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড আরও বেশি জনপ্রিয়তা পায়। তাই এই উপন্যাস বা চলচিত্রের চরিত্রগুলোকে যখন বাস্তবে দেখার সুযোগ তৈরি হলো তখন আর আমরা সেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলাম না।

অস্ট্রেলিয়াতে স্কুল হলিডে চলাকালে বাচ্চাদের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেগুলোর মূল উপলক্ষ থাকে খেলাধুলার মাধ্যমে বাচ্চাদের বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা। সিডনির ব্লাকটাউন শোগ্রাউন্ডে গত ১৩ থেকে শুরু হয়েছে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের প্রদর্শনী। চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এটার আয়োজক সংস্থা হচ্ছে যৌথভাবে ব্লাকটাউন সিটি কাউন্সিল ও স্যান্ড স্কাল্পটিং ইভেন্ট অস্ট্রেলিয়া।
এই প্রদর্শনীর বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের চরিত্রগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া হয়েছে ২৫০ টন বালির মাধ্যমে। এখানে একে একে উপন্যাসের সকল চরিত্রকে হাতের নিখুঁত কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোও। যেমন অ্যালিসের গর্তে প্রবেশের দৃশ্যটা। প্রত্যেকটা ভাস্কর্যের বাইরে লেখা আছে কোনটি কোন চরিত্র বা ঘটনাকে দেখাচ্ছে। তাই কেউ যদি আগে উপন্যাসটা পড়েও না থাকে বা চলচিত্রটা দেখে না থাকে তবুও সহজেই ঘটনাগুলো রিলেট করতে পারবে।

অ্যালিসের সঙ্গে রেনো, এলভিরা ও তাহিয়া
অ্যালিসের সঙ্গে রেনো, এলভিরা ও তাহিয়া

রুপা বৌদি যখন এই ইভেন্টের খবর মেসেঞ্জারে আমাকে জানালেন, তখন আমি আর তাহিয়া একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড চলচিত্রটা আমাদের দুজনেরই দেখা। আমরা পরদিনই অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সেদিন অনেক গরম পড়াতে আমরা একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তাহিয়া, এলভিরা ও রেনোর উৎসাহে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম না।
এটা পরিদর্শনের জন্য স্যান্ড স্কাল্পটিংয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও টিকিট করা যায় বা একবারে পরিদর্শনের স্থানে গিয়েও সরাসরি টিকিট কাটা যায়। আমরা পরিদর্শনের স্থানে গিয়ে দুই পরিবারের জন্য দুটি ফ্যামিলি টিকিট কিনে ফেললাম। এরপর ভেতরে প্রবেশ করার মুখে আমরা আরও কিছু তথ্য জানলাম। ওখানে উপন্যাসের চরিত্রগুলো দেখার পাশাপাশি বাচ্চারাও নিজেরা নিজেরা বালি দিয়ে অনেক কিছু বানাতে পারবে। বাচ্চাদের জন্য আরও আছে কুইজের ব্যবস্থা। কুইজের প্রশ্নপত্র পূরণ করে জমা দিলে সেখান থেকেও আছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে এই প্রদর্শনী খোলা থাকে। এ ছাড়া ভেতরে বাচ্চাদের জন্য আছে আলাদাভাবে খেলার জায়গা। যেখানে বাচ্চারা অনেক বড় লুডোর কোর্টে লুডু খেলতে পারে বা অনেক বড় ক্রস ও নটের কোর্টে ক্রস-নট খেলতে পারে। অথবা কাঠের ব্লক দিয়ে বাড়িঘরও নির্মাণ করতে পারে।
ভেতরে ঢোকার পরেই বাচ্চারা সবার আগে বালি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের আকৃতি বানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সেখানে এলভিরা, তাহিয়া ও রেনোর পাশাপাশি মাত্র দুই বছর বয়সের রায়ানও ওদের সঙ্গে হাত লাগাল।

বালি নিয়ে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত রায়ান, রেনো, তাহিয়া ও এলভিরা
বালি নিয়ে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত রায়ান, রেনো, তাহিয়া ও এলভিরা

একেকটা আকৃতি বানায় আর অনেক উৎসাহ নিয়ে বড়দের দেখায়। আকৃতিগুলোর মধ্যে হার্ট আবার সেটাতে মুখ চোখ দিয়ে মুখের আদলে বদলে দেওয়া এভাবেই চলল ওদের খেলা। পরে বড়রা তাড়া দিলে ওরা ভাস্কর্যগুলো দেখা শুরু করল। কিন্তু প্রচণ্ড রোদ ও গরমের কারণে ওরা বেশিক্ষণ শেডের বাইরে থাকতে চাইছিল না। তবুও আমরা উপন্যাসের কিছুই জানি না এমন ভাব করে ওদের কাছে জানতে চাইলাম কোন ভাস্কর্যটা কী বোঝাতে চাইছে। তখন ওরা অনেক উৎসাহ নিয়ে আমাদের বোঝাতে শুরু করল। এভাবে প্রায় সব ভাস্কর্য দেখা শেষে ওরা কেউ লুডু কেউ বা ব্লক নিয়ে খেলা শুরু করল।
সবশেষে গরমের থেকে একটু রেহাই পাওয়ার জন্য ওরা বলল, স্নোকোণ খাবে যেটা আসলে আইসক্রিমেরই একটা প্রকার। স্নোকোণ কিনে আনার পর আমরা সেটা স্যান্ডকোণ বলে ওদের সঙ্গে অনেকক্ষণ মজা করলাম। এতে ওরাও একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। কারণ ভেতরের সমস্ত স্থাপনায় ছিল বালির তৈরি। এভাবে আমরা সকলে মিলে অনেক সুন্দর একটা দিন পার করলাম।
সিডনিপ্রবাসীদের বলছি, এই স্কুল হলিডেতে আপনিও আপনার সব বয়সী বাচ্চাকাচ্চাকে নিয়ে চলে যেতে পারেন ব্লাকটাউন শোগ্রাউন্ডে যেখানে বালির মাধ্যমে আপনি অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের চরিত্রগুলোকে চোখের সামনে দেখতে পারেন। কারণ আমাদের পরিদর্শন শেষে এলভিরা একটা উক্তি করেছিল, যেটা দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই—‘এ ডে ওয়েল স্পেন্ট।’

মো. ইয়াকুব আলী: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>