আমি বাংলার গান গাই

বাংলা গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করছেন এমি, ক্রিস্টিনা ও ভেরেনা
বাংলা গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করছেন এমি, ক্রিস্টিনা ও ভেরেনা

ড্যানিয়েল উইলিয়ামস যখন গিটার হাতে মঞ্চে উঠলেন, তখন দর্শক সারিতে বসে থাকা অতিথিরা মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন একটা ইংরেজি গান শোনার জন্য। কিন্তু কী অবাক কাণ্ড! ড্যানিয়েল এ কী গাইছেন! ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’ নিজের কানকে বিশ্বাস হতে চায় না। নিজের চোখকে বিশ্বাস হতে চায় না। একজন বিদেশি এত সুন্দরভাবে এত সাবলীলভাবে বাংলা গান গাইছেন কীভাবে! ড্যানিয়েল তখনো গেয়েই চলেছেন, ‘দিয়ো তোমার মালাখানি বাউলের এই মনটারে…।’ 
৫ ডিসেম্বর শুক্রবারের সন্ধ্যাটা এভাবেই অবিশ্বাস্য মুগ্ধতায় ভরে রেখেছিলেন একঝাঁক বিদেশি শিক্ষার্থী। কেউ বা যুক্তরাষ্ট্রের, কেউ বা অস্ট্রেলিয়ার, কেউ জার্মানির, কেউ কোরিয়ার, কেউ বা নেপালের। তারা বাংলা গান গেয়ে, বাংলা গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে, বাংলায় নাটিকা উপস্থাপন করে পুরোটা সময় দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন।
অনুষ্ঠানের নাম ‘কোর্স সমাপনী সনদ বিতরণ ও প্রাক্-বড়দিন উদ্যাপন’। আয়োজক লার্ন বাংলা নামের একটি স্কুল, যারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলা শিখিয়ে থাকে। রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত এ এস এম গোলাম হোসেন। সভাপতিত্ব করেন লার্ন বাংলার চেয়ারপার্সন লেনিন পিনারু। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাস ও দাতা সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা।
উল্লেখ্য, লার্ন বাংলা ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিদের বাংলা শেখানোর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এখানে বিশ্বের ৪৫টি দেশের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী বাংলা ভাষা শিখছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লার্ন বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ মেরি জুলিয়েট পিনারু বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের বাংলা শেখানোর কার্যক্রমটি শুরু করেছিলাম খুবই ছোট পরিসরে। কিন্তু অল্পদিনে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। একজন বাঙালি হিসেবে এমন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি খুবই গর্বিত।’
মঞ্চে যখন চলছিল বক্তৃতা, তখন মঞ্চের আড়ালে প্রস্তুত হচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এমি কফি, ক্রিস্টিনা এলেনা অর্থি ও জার্মানির ট্রেসুনার ভেরেনা। লাল শাড়িতে পুরো বাঙালি সেজে ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা পান খাইয়া যাও’ গানের সঙ্গে নাচ উপহার দিলেন তাঁরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে ছিল সনদপত্র প্রদান ও পুরস্কার বিতরণ। সেরা শিক্ষার্থীর পুরস্কার হাতে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল কোরিয়ার শিক্ষার্থী ইউ চাংসেউন বলেন, ‘আমার এ অর্জনের পেছনে আছে লার্ন বাংলার সবার সহযোগিতা। তাদের জন্যই আমি বাংলা শিখতে পেরেছি। সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা।’
এরপর মঞ্চে ডাক পড়ে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ খেতাবপ্রাপ্ত স্টিফেন টমাস অ্যাপলবাই। স্টিফেন বলেন, মাতৃভাষা না জানলে সেই ভাষার মানুষের হৃদয় বোঝা সম্ভব নয়। আমি এখন বাঙালিদের হৃদয় বুঝতে পারি। এ জন্য আমার শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানাই।’
পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন লার্ন বাংলার দুই শিক্ষার্থী জার্মানির জ্যাকম্যান ক্রিস্টিনা ও অস্ট্রেলিয়ার স্টিফেন টমাস।