ভিয়েনায় অমর একুশে উদ্যাপন

বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মো. আবু জাফর
বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মো. আবু জাফর

অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন ভাষা শহীদদের। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার হউফসাইলে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারের বেদিতে ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় একুশের প্রথম প্রহরে) অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর অমর একুশ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় দূতাবাস কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভিয়েনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর। উপস্থাপনা করেন দূতাবাসের কাউন্সেলর শাবাব বিন আহমেদ। শুরুতে বাঙালির ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ এ যাবৎ সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন এম নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন এম নজরুল ইসলাম

একুশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গেরহাড বুডিন, অস্ট্রিয়াপ্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক ও সাংবাদিক এম নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ–অস্ট্রিয়া সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ মো. ফরহাদ ও বাংলাদেশ দূতাবাসের অনারারি কাউন্সেলর কমার এরনষ্ট গ্রাফট।
মো. আবু জাফর তার বক্তব্যে অমর একুশের এই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সমবেত সুধীজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভিয়েনায় একটি শহীদ মিনার স্থাপনের অনুমতি অস্ট্রিয়ান সরকার দিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করি। এটি হবে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আগামী বছর মহান শহীদ দিবসে স্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে আমরা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করব।
এম নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৫২ সালের আজকের দিনে বীর শহীদদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এই আপসহীন আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের জাতিসত্তার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ ঘটিয়ে আমরা আমাদের অস্তিত্বের সন্ধান লাভ করেছি। তিনি বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রথম ঝাঁকুনি দেওয়ার দিন ছিল বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি।
বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙালির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে অস্ট্রিয়াপ্রবাসী শিল্পীরা অমর একুশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন; জান্নাতুল ফরহাদ, নাহীদ খান সুমি, বর্ণিমা, ঐশ্বর্য, মালিহা, ইশিতা, রামিতা, সুবর্ণ, আরিফ, পূর্ণা, প্রজ্ঞা, প্রভা, এথিনা, ফিয়ানা, সনম, আমরিন, ফারদিন, মাহিয়া, রাফিয়া, সাদিয়া, জাকিয়াও অংশু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন ফারজানা। তবলায় ছিলেন বিশ্বজিৎ​ ঘোষ, মিউজিকে ছিলেন আনন্দ।

আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার একুশ উদ্‌যাপন

অস্থায়ী শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার নেতা–কর্মীরা
অস্থায়ী শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার নেতা–কর্মীরা

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আবারও নিজেদের শাণিত করে পরম শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছেন আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার নেতা–কর্মীরা। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার প্যান এশিয়ায় অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারের বেদিতে ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৭টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় একুশের প্রথম প্রহরে) অস্ট্রিয়াপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। প্রবাসী বাঙালিদের কয়েকটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এতে অংশ নেন।
পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর রাত সাড়ে ৭টায় শহীদদের স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সর্ব ইউরোপিয়ান শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, লেখক-সাংবাদিক এম নজরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অস্ট্রিয়া ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার বায়েজিদ মীর, আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার সহসভাপতি মিজানুর রহমান, বখতিয়ার রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন হোসেন, সিরাজ চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, কমল শেখ, কামাল পারভেজ, আবু সাইদ শেখ, আলী হোসেন, সবুজ মণ্ডল, নাদিম ভূঁইয়া ও শাহিন আহমেদ প্রমুখ।
আলোচনায় এম নজরুল ইসলাম বলেন, একুশ থেকে পাওয়া সাহস ও শক্তিই ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের অন্যতম হাতিয়ার। সেই কারণেই একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশের সংকল্প এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার।
অনুষ্ঠানে অমর একুশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়।