সুইডেনে মাতৃভাষা দিবস পালন

বক্তব্য দিচ্ছেন মো. নাজমুল ইসলাম
বক্তব্য দিচ্ছেন মো. নাজমুল ইসলাম

মর্যাদা, গুরুত্ব ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সুইডেনে পালন করা হয়েছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গতকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) বুধবার দেশটির রাজধানী স্টকহোমে স্থানীয় সময় সকালে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেলে দিবসটি উদ্‌যাপন লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশটির তুষারাচ্ছন্ন প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন।

পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের পর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। পরে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে আগত সকল অতিথি সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় নেপথ্যে একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগ কর্তৃক প্রযোজিত একটি সৃজনশীল ও মনোমুগ্ধকর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শিত হয়। যেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল সুরটি যথার্থভাবে অনুরণিত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রদর্শিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রচিত গ্রিক শিল্পী কর্তৃক পরিবেশিত একটি ইংরেজি গান, যার রচয়িতা বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তরুণ কর্মকর্তা।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা


দ্বিতীয় পর্যায়ে মুক্ত আলোচনা পর্বে স্থানীয় কমিউনিটির উপস্থিত বক্তারা মহান শহীদ দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক দিবসটির স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও সর্বোপরি স্বাধীনতা অর্জনে অমর একুশের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের দিকসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভাষা শহীদদের অবদান, ভাষা আন্দোলন ও তৎপরবর্তী সকল আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই গৌরবময় সাফল্য অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্যদেরও তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

উপস্থিতি
উপস্থিতি


রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে সুইডেনের মাটিতে স্থায়ীভাবে একটি শহীদ মিনার নির্মাণে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঐকান্তিক ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন এবং অচিরেই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান।
মো. নাজমুল ইসলাম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্যের নানা উদাহরণ তুলে ধরে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের নিরলস ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করেন। তিনি মাতৃভূমি ও ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা অব্যাহত রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ জানান এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করবার আহ্বান জানান।
সবশেষে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। এতে স্থানীয় শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত শিল্পী ও কলাকুশলীদের শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন। পরিশেষে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। বিজ্ঞপ্তি