তেহরানে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি

বাবার হাত ধরে ছোট্ট সোনামণি ঋতু এসেছিল শহীদ মিনারে ফুল দিতে
বাবার হাত ধরে ছোট্ট সোনামণি ঋতু এসেছিল শহীদ মিনারে ফুল দিতে

হামে দা’দে ভাতানখহি যানান্দ, আম্মা নেমি দনাম/ ভাতানখহি বে গোফতার আস্ত ইয়া কেরদার ইয়া হার দো?’ ‘সকলেই দেশপ্রেম দেশপ্রেম বলে আর্ত-চিৎকার করে, কিন্তু জানি না, দেশপ্রেম কি শুধুই বাতচিত নাকি কর্ম নাকি দুটোর যোগফল?’ পারস্য কবি আবুল কাসেম লাহুতির বিখ্যাত এই উক্তিটি যারা প্রবাসে থাকেন তারাই বেশি উপলব্ধি করবেন। যেকোনো উৎসব-পার্বণ, আচার-অনুষ্ঠানে দেশের স্মৃতি রোমন্থন করা আড্ডাপ্রিয় বাঙালির নিত্যসঙ্গী। তাই তেহরানে যেকোনো অনুষ্ঠানে আমরা ছুটে যাই আমাদের প্রিয় দূতাবাস চত্বরে।

বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রদূত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন
বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রদূত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন

বরাবরের মতো এবারও তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস দিনটিকে কেন্দ্র ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি ভাইবোন ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আয়োজন করে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা অনুষ্ঠান-২০১৮। সকাল ৯টায় ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁইয়া উপস্থিত অতিথিদের নিয়ে দূতাবাস চত্বরে পতাকা উত্তোলন, অর্ধনমিতকরণ এবং ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। অতঃপর তিনি দূতাবাস চত্বরে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

দূতাবাস চত্বরের ছোট্ট শহীদ মিনারকে মূলকেন্দ্র বানিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন সবাই
দূতাবাস চত্বরের ছোট্ট শহীদ মিনারকে মূলকেন্দ্র বানিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন সবাই

আলোচনা সভায় কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান মো. হ‌ুমায়ূন কবিরের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় শুরুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে লেখকসহ কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মো. সবুর হোসেন, দূতাবাস কর্মকর্তা আলম হোসেন ও মামুনুর রশিদ বক্তব্য প্রদান করেন। এ ছাড়া তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সে অধ্যয়নরত পিএইচডি গবেষক ডা. শহিদুল ইসলাম শোভন ও রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ মুসা রেজা বাংলা ভাষা নিয়ে দারুণ দুটি চিত্তাকর্ষক ছড়া আবৃত্তি করেন।

বিদেশি অতিথি ইসা রেজা জাদেহ বক্তব্য প্রদান করেন
বিদেশি অতিথি ইসা রেজা জাদেহ বক্তব্য প্রদান করেন

বিদেশি অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসা রেজা জাদেহ। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীর নিকট মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রপথিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সকল আবেগ, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না নিজের ভাষায় ব্যক্ত করার যে আনন্দ, সেটা অন্য কোনো ভাষায় পাওয়া সম্ভব নয়।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁইয়া উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কী এবং কেন সেদিক তুলে ধরেন। এ ছাড়া শহীদ মিনারের তাৎপর্য কী, কেন এটা এভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেটিও তিনি অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

দেশি-বিদেশি অতিথিদের একাংশ
দেশি-বিদেশি অতিথিদের একাংশ

বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের ড. রেজা সাইয়্যেদান, ইরানের পাবলিক লাইব্রেরি অব হুসাইনিয়া আরশাদের মি. হাসানপুর, কূটনৈতিক মি. নাজারি, কূটনৈতিক মি. আফশারি, ইরান ডেইলির সাংবাদিক মি. ভানাকি ও কেতাবসারা পাবলিকেশন হাউসের মি. সাদেক সামি।
আরও ছিলেন বাংলাদেশিদের মধ্যে ইরানপ্রবাসী প্রিয় মুখ মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইকবাল নেওয়াজ, ইংরেজি দৈনিক ইরান ডেইলির সিনিয়র সম্পাদক ও স্বাধীন বাংলা বেতারের সাংবাদিক আয়াজ হোসেইন, রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের সাংবাদিক গাজি আবদুর রশীদ, সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক আশরাফুর রহমান, সাংবাদিক রেজওয়ান হোসেন। এ ছাড়া তেহরানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, দূতাবাসের বাংলাদেশি ও ইরানি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি বিদেশিদের কাছে দিনটির গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছিল।

সকালে প্রথম পর্বে পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করা এবং এক মিনিট নীরবতা পালন
সকালে প্রথম পর্বে পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করা এবং এক মিনিট নীরবতা পালন

ছবি: সৈয়দ রাসতিন রেজা, শাকিল ও নাজমুল।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে পিএইচডি গবেষক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়, তেহরান, ইরান।