লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান শহীদ দিবস
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে। কর্মসূচির শুরুতে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. নাজমুল কাওনাইন প্রথানুযায়ী স্থানীয় কাউন্সিল টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগসসহ পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বৃহত্তর লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সর্বস্তরের সদস্যরা এ সময় ভাষাশহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দিনের শুরুতে হাইকমিশনার মো. নাজমুল কাওনাইন হাইকমিশন ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় সেন্ট্রাল লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী বেডেন পাওয়েল হাউসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে হাইকমিশন কর্তৃক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ইউনেসকো মহাপরিচালকের বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, সাংবাদিক ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভাষা আমাদের একটি দেশ দিয়েছে। আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার ব্যবহার হচ্ছে। তিনি ভাষা আন্দোলনকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কারাবন্দী সময়ের স্মৃতিচারণ করেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের উপপ্রধান, ইউকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেসকোর প্রতিনিধি আন্দ্রেয়া ব্লিক ও সাবেক এমপি স্যার অ্যালান মিল। সভায় আমন্ত্রিত বাংলাদেশ কমিউনিটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান শরীফ, ইউরোপিয়ান শাখার সাধারণ সম্পাদক এমএ গনি, মহিলা আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি খালেদা মোশতাক কোরাইশী, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, লন্ডনের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটির সদস্য আনছারুল হক ও বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিটের নকশা প্রণেতা বিমান মল্লিক।
মো. নাজমুল কাওনাইন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি ভাষাশহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ভাষা সৈনিকদের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, একুশ আমাদের শিক্ষা দেয় মাথা নত না করার। একুশ আমাদের অস্তিত্ব এবং আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে তিনি একুশ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূলধারার সঙ্গে সংগতি রেখে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং দিবসটির ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী গণ্যমান্য ব্যক্তি, বাংলা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিবারসহ এতে উপস্থিত ছিলেন।
দিবসের অন্য অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা ৭টায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে প্রাইড অব মাদার টাং-এর উদ্যোগে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রভাবশালী সদস্য জের্যান্ট ডেভিসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় হাউস অব কমন্সের সদস্য জনাথন অ্যাশওয়ার্থ এমপি ও বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. নাজমুল কাওনাইন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তি