প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর এবং প্রবাসীদের প্রত্যাশা

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

আগামী ১১ মার্চ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুর সফর করার কথা রয়েছে। তাই প্রবাসজীবন তথা প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কিছু কথা। প্রবাসজীবন নিয়ে লিখতে গেলেই মনটা কষ্টে জর্জরিত হয়। প্রবাসের এই সুখ-দুঃখের কথা কীভাবে শুরু করব বুঝে উঠতে পারি না। কলমটা বারবার যেন থমকে দাঁড়ায়। হৃদয় মাঝে অজানা এক শূন্যতা বিরাজ করে। পুরোনো স্মৃতিগুলো নতুন করে চোখের সামনে ভেসে ওঠে মনের অজান্তে। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু অশ্রু ঝরে পড়ে গাল বেয়ে। নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। পাওয়া, না পাওয়ার হিসাব মিলাতে পারি না। অবহেলা আর অনাদরের এই প্রবাসজীবনের ইতিবৃত্ত, বুঝে উঠতে পারি না কোথা থেকে শুরু করব।

প্রবাসে আসার আগে ও পরে যে সমস্যা হয়।
*অনেকে দালালের খপ্পরে পড়েন।
*টাকা জোগাড়ের জন্য বাড়িঘর বিক্রি করে নিঃস্ব হওয়া।
*প্রতারকের পাল্লায় পড়ে অর্থ খোয়ানো।
*এজেন্সিতে বেশি টাকা প্রদানে বাধ্য করা।
*কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়ায় ট্রেনিং বাবদ অতিরিক্ত খরচ।
*বিমানবন্দরে হয়রানি।
*মূল কোম্পানির কথা বলে সাব কোম্পানিতে কাজ দেওয়া।
*প্রবাসে থাকা-খাওয়ার সমস্যা।
*বেশি বেতনের কথা বলে নিয়ে এসে কম বেতনে চুক্তি করিয়ে নেওয়া।
*দিন দিন এখানে বেতন কর্তন বাড়ছে। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ফলে জীবন নির্বাহের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু বেতন বাড়ানো হচ্ছে না।
*কিছু কোম্পানিতে বেতন ঠিকমতো প্রদান করা হয় না।
*দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশি-সিঙ্গাপুরি ব্যবসায়ী কর্তৃক সাধারণ প্রবাসীর প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হওয়া।

এই সমস্যার সমাধান যেভাবে করা যেতে পারে

*দেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি করে গড়ে তোলা।
*অভিবাসন প্রত্যাশীদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করা।
*দেশের ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে কড়া নজরদারি বাড়ানো।
*দেশের এজেন্টদের কড়া মনিটরিং করা।
*সরকারিভাবে বিদেশ গমনেচ্ছুদের তালিকা করে তাদের এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করা।
*বিদেশ যাওয়ার জন্য সহজ শর্তে এবং বাড়তি খরচ ছাড়া ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা।
*রেমিট্যান্স সৈনিকদের শ্রমিক না ভাবা।

হাইকমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা

*হাইকমিশন থেকে সময়মতো প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া।
*হাইকমিশনে দালাল ছাড়া কাজ হয় না। যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
*হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রবাসীদের ডরমিটরিতে গিয়ে তাদের খোঁজ নেওয়া।
*দেশের কিছু সুবিধা এখানে চালু করা। যেমন; জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি।

আশ্চর্য হলেও সত্যি, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসে পাসপোর্ট ও জন্মসনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক করে ‘ঢাকা স্টুডিও’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
আমার কোম্পানি সেম্বক্রপ কোম্পানি। এই কোম্পানির সুপারিশ সিঙ্গাপুরের মিনিস্ট্রি অব ম্যানপাওয়ার পর্যন্ত সম্মান দেয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, আমার এই কোম্পানি আমার এক কলিগের জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করেছিল জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করে দিতে। কিন্তু আমাদের হাইকমিশন এ ব্যাপারে কোনো ধরনের গুরুত্বই দেয়নি। তাই আমার কোম্পানির মানবসম্পদ কর্মকর্তা দুঃখ করে বলেছিলেন, তোমাদের দেশের মানুষ সম্মান নিতেও জানে না, দিতেও জানে না।
এই হলো আমাদের হাইকমিশন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দক্ষ হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ার দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার হাতে দেশ থাকলে আমাদের ডিজিটাল সোনার বাংলা এগিয়ে যেতে বাধ্য।
পরম পূজনীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি অবশ্যই জানেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে দেশ উন্নত হচ্ছে। আমাদের ট্যাক্সের টাকার চাকুরেদের বেতন হচ্ছে। তারপরও কেন তারা প্রবাসীদের হয়রানি করেন? তারা প্রবাসীদের মূর্খ ভাবেন। প্রবাসী হলেই যে তারা সবাই মূর্খ হবেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। অনেক শিক্ষিত লোকও প্রবাসে চাকরি করেন। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে অনুরোধ জানাব সেবার মনোভাব নিয়ে যারা কাজ করেন এবং যাদের ব্যবহার ভালো তাদের বিমানবন্দরে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আর প্রবাসী যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের উন্নয়নের অংশীদার, তাদের মর্যাদা দেওয়া হোক।

প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য কিছু পরামর্শ

*এক জরিপে দেখা গেছে প্রবাসীরা তাদের বেশির ভাগ অর্থই বাড়ি তৈরিতে ব্যয় করেন। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ নানা পেশার মানুষদের জন্য সরকার প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ করে। রেমিট্যান্স সৈনিকদেরও একইভাবে স্বল্প মূল্যে প্লট বা ফ্ল্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
*প্রবাসীদের জন্য সিপিএফ চালু করা হোক।
*সাধারণ প্রবাসী যারা বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠান তাদের প্রেরণা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্কিম চালু করা হোক।
*প্রবাসীদের সরকারিভাবে রেমিট্যান্স সৈনিক উপাধি দেওয়া হোক।
*প্রবাসীদের বাড়ি তৈরিতে ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হোক।

বিনয়াবনত,
মোহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম
প্রজেক্ট সুপারভাইজার, সেম্বক্রপ মেরিন লি., সিঙ্গাপুর।