শুভ জন্মদিন প্রিয় ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ

সহপাঠীদের সঙ্গে লেখিকা
সহপাঠীদের সঙ্গে লেখিকা

আজ জন্মদিন তোমার! তোমার জন্য তাই আজ এই রোদেলা স্বপ্ন সকাল। আমার কল্প পটে ভাসছে সূর্যালোকে দীপ্ত তোমার পরিণত রূপ। তোমাকে বরণ করে নিতে টিএসসির সবুজ প্রান্তর হয়ে উঠেছে রঙিন। তোমার জন্য আজ হাসবে স্নিগ্ধ বিকেলও। আর মুঠো-মুঠো স্বপ্ন নিয়ে আজ একে একে হাজির হবে তোমার চিরচেনা সাথিরা। যারা হাঁটিহাঁটি পা-পা করে তোমার সঙ্গে এগিয়েছে জীবনের পথ। আলোকিত হয়ে নিজে তুমি আলোকিত করেছ যাদের, সবাই তোমার সঙ্গে আজ তোমার জন্মদিন উদ্‌যাপন করবে। কেবল আমার সুযোগ হলো না তোমার কাছে ফেরার। বহু দূরে আছি যদিও, তবু বিশ্বাস করো, ধমনির প্রতিটি রক্ত বিন্দুতে অনুভব করছি তোমায়। তাইতো তুমি আছ হৃদয়ে আমার প্রিয় ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ।

তোমার জন্মদিনে কী দিই বলো তো তোমায়? তোমার থেকে কেবল নিয়েছি প্রতিনিয়ত। কখনো দেওয়ার সুযোগ তো দাওনি হে মহান!
তোমার মনে পড়ে, ২০০৬ সালের আমাদের সোনার খাঁচায় মোড়া সেই দিনগুলো? আমরা তখন কেবল এসেছি তোমার উঠোনে। সেই থেকে তোমার উঠোন জুড়ে আমাদের সে কী হইহুল্লোড়। তোমার ১১তম সন্তানদের তুমি বড় মায়ায় বরণ করে নিয়েছিলে। তোমার হৃদয়ের শীতল মায়ায় আমাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রয়োজন পড়েনি তখনো। ছোট একটা সেমিনার নিয়েই আমাদের সেই সুখের জ্ঞান-সংসার। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সেই সেমিনারে বসে বন্ধুদের সঙ্গে কত খুনসুটি! আমাদের ৩০২৮-এর ক্লাস রুমটি কত সুখ দুঃখের গল্পগাথার সাক্ষী। আজও হয়তো এর দেয়ালে দেয়ালে বাজে আমাদের কলতান। আমার কাছে তাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শ্রেণিকক্ষ কলাভবনের ৩০২৮। আর সবচেয়ে প্রিয় সংখ্যা আমার রোল নম্বর ৩৭।

সহপাঠীদের সঙ্গে লেখিকা
সহপাঠীদের সঙ্গে লেখিকা

তুমি তো জানো না ‘তুমি কী’ তা মানুষকে বোঝাতে বোঝাতে কেটে গেছে আমাদের জীবনের বেশ কয়েকটি বসন্ত। সে দুঃখের কথা আজকের সুখের দিনে বরং নাই বলি তোমায়।
কী করে ভুলি বলত, তোমার উঠোনের জ্ঞান-সারথি আমাদের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অপার্থিব স্নেহের কথা? আমরা তাদের ক্লাসে-ক্লাসের বাইরে কী যন্ত্রণাই না করেছি। অথচ তোমার জ্ঞানের রাজ্য থেকে বিলিয়ে দিতে কখনোই কার্পণ্য করেননি তারা। আমার হয়ে তাদের শ্রদ্ধা জানিও প্লিজ তুমি। ভুলো না যেন।
তোমার মনে পড়ে আমাদের তোমাকে সাজাতে কোনো উপলক্ষ লাগত না আমাদের। বন্ধুরা সবাই মিলে সুযোগ পেলেই লালে-নীলে রাঙিয়ে দিতাম তোমার উঠোন। তার কিছু স্মৃতি ক্যামেরা বন্দী থাকলেও বেশির ভাগই আছে হৃদয়ের অ্যালবামে বন্দী। তুমি খেয়াল করেছ, আমাদের বিভাগে বড় থেকে ছোট; ছোট থেকে বড় সবার মাঝে কী সুন্দর মেলবন্ধন। বহু কম বিভাগেই এমনটার দেখা পাওয়া যায়। তোমাকে নিয়ে তাই আমার খুব গর্ব হয়।

লেখিকা
লেখিকা

তোমার কাছে আমি পেয়েছি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সব উপহার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট অব অ্যাচিভমেন্ট ২০০৮, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইন্সপিরেসন অ্যাওয়ার্ড ২০০৯, বিভাগে প্রথম হয়ে বেগম সাইদা আফজাল স্মৃতিপদক (২০১০), ২০১২ সালে কলা ভবন ডিন পদক গ্রহণ করলাম আমার জ্ঞানগুরু ও বাবা মাকেসহ। এ সম্মান তুমিই আমাকে দিয়েছ। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটি তুমি পূরণ করেছ। তোমার উঠোনে শিক্ষকতা করার সুযোগ দিয়েছ ২০১৩ সালে। জন্মদিনে তাই কৃতজ্ঞতা জানাই তোমাকে। ২০১৫ সালে দায়িত্বের ডাকে আবার একদিন তোমাকে জানাতে হলো বিদায়। আমার কাছে তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত খুব কঠিন ছিল। তবু মনকে এই বলে বুঝিয়েছি, তোমার আর একটি শাখাকে পল্লবিত করতে হচ্ছে এই আপাত বিচ্ছেদ। মন থেকে কোনো দিনই ছিল না সে বিদায়। তোমার ২০তম জন্মদিনে আমার বন্ধুদের নিয়ে পুরোটা সময় তোমার সঙ্গে ছিলাম। এবার নিশ্চয়ই আমার বন্ধুরা তোমার পাশে থাকবে। কোনো এক ফাঁকে আমাকে তুমি কি মনে করবে তখন? আমি জানি তুমি ঠিক আমাকে মনে করবে। কারণ তোমার সুতোয় বাঁধা যে আমাদের জীবন। জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা নাও তুমি। শ্রদ্ধা জানিও আমার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। আর ভালোবাসা দিয়ো আমার প্রিয় বন্ধু ও শিক্ষার্থীদের।
হাজার বছর জ্ঞানের আলো ছড়াও।
ইতি,
তোমার কাছে বহু ঋণী একজন
শান্তা তাওহিদা
১১তম ব্যাচ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে জার্মানিতে অধ্যয়নরত।