ভিয়েনায় বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন

বাংলাদেশ দূতাবাসে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর
বাংলাদেশ দূতাবাসে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপিত হয়েছে। ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাস

ভিয়েনার হউফসাইলে বাংলাদেশ দূতাবাসে গতকাল শনিবার (১৭ মার্চ) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাসহ অনেক প্রবাসী অংশ নেন।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। এ ছাড়া ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও কর্মনির্ভর কবিতা আবৃত্তি, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে শিশু-কিশোরদের প্রবন্ধ পাঠ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর। সঞ্চালনা করেন কাউন্সেলর ও চ্যান্সারি প্রধান রাহাত বিন জামান। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সর্ব ইউরোপিয়ান শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অস্ট্রিয়াপ্রবাসী এম নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কবির, সহসভাপতি রুহী দাস সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অস্ট্রিয়া ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা বায়েজিদ মীর, বাংলাদেশ-অস্ট্রিয়া সমিতির সহসভাপতি বখতিয়ার রানা ও আহাদ চৌধুরী প্রমুখ।
রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দেশের পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর বিরল নেতৃত্বসুলভ উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় দেশপ্রেম ও শিশুদের প্রতি গভীর মমত্ববোধের দৃষ্টান্ত অনুসরণের জন্য এবং তাঁর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য তিনি সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন সালমা আহমেদ জাফর
বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন সালমা আহমেদ জাফর

এম নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির আত্মপরিচয়। তাঁকে নিয়ে বাঙালির অহংকার কোনো দিন ফুরোবে না। এমনই বিশাল ব্যক্তিত্ব তিনি, মৃত্যুর চার দশক পরও তাঁকে আবিষ্কার করতে হয় নতুন করে। আমরা বাঙালিরা গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করি বঙ্গবন্ধুর নাম। তিনি বাঙালি জাতিকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন অসম্ভবের পথ। জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের। বাঙালির চেতনায় বঙ্গবন্ধু স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী সালমা আহমেদ জাফর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন দূতাবাসের প্রথম সচিব মালিহা শাহজাহান। সংগীত পরিবেশন করেন প্রবাসী শিল্পীরা। ভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।


আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখা

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের অস্ট্রিয়া শাখার উদ্যোগে গতকাল (১৭ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলে ভিয়েনার সিটি গেট হলে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কবির।

বাংলাদেশ দূতাবাসের সভায় বক্তব্য রাখছেন এম নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশ দূতাবাসের সভায় বক্তব্য রাখছেন এম নজরুল ইসলাম

বক্তব্য রাখেন সর্ব ইউরোপিয়ান শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অস্ট্রিয়াপ্রবাসী এম নজরুল ইসলাম, অস্ট্রিয়া শাখার সহসভাপতি আকতার হোসেন, এ কে এম শওকত আলী, রুহী দাস সাহা, শফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অস্ট্রিয়া ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা বায়েজিদ মীর, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ চৌধুরী, লুৎফর রহমান সুজন ও জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
এম নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। তিনি বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। আজও সব সংকটে তিনিই আমাদের প্রেরণার উৎস। তাঁর আদর্শ ও কর্মময় জীবন থেকে দীক্ষা নিয়ে ত্যাগ ও দেশ গড়ার মন্ত্রে দীপ্ত হয়ে আমাদের স্বীয় অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ২৩ বছরের পাকিস্তানি নির্যাতন-নিষ্পেষণের জিঞ্জির ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব।
সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের গুণাবলি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কনে উপজীব্য বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ।’ অনুষ্ঠানে জাতির জনকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং জাতির অব্যাহত সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করে দোয়া করা হয়।

সংবাদ প্রেরক: আনিসুল হক, ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া।