নেদারল্যান্ডসে শিশুদের বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য

নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। দিবসটি পালনের জন্য দ্য হেগের বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে যথেষ্ট সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি সপরিবার অংশগ্রহণ করেন।

ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সঙ্গে শাহাদত বরণকারীদের রুহের মাগফিরাত, দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সম্প্রতি নেপালে ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের অবগতির জন্য বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের তালিকা থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন সম্পর্কিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠ করা হয়।
আলোচনাপর্বে আওয়ামী লীগের নেদারল্যান্ডস শাখার নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় শামীম আক্রাম, আলাউদ্দিন মোল্লা, জয়নাল আবেদীন, মোস্তফা জামান, ইমরান হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা মাঈদ ফারুক পাকিস্তানি অন্যায় নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব সমগ্র জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন ও বাঙালি জাতি মুক্তি লাভ করে। বক্তারা বাঙালি জাতির কঠিনতম সময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তাঁর সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা এবং তাঁর ত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা পূর্বক তাঁকে বাঙালি জাতির ‘রোল মডেল’ বলে অভিহিত করেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য

নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর অপরিসীম মমত্বের চিত্র তুলে ধরেন। পাকিস্তান আমলে বাঙালির দুর্যোগময় সময়ে তিনি কেবল নেতৃত্বই দেননি, তাঁর উপস্থিতি ছিল সমগ্র জাতির জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। তিনি ছিলেন অকুতোভয় ও আপসহীন। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, সমগ্র জীবনব্যাপী বঙ্গবন্ধু তাঁর পর্বতসম ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা ও অপরিসীম ভালোবাসা নিয়ে সাধারণ জনগণের কাতারে জীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনা জুড়ে ছিল কেবল বাঙালি জাতির উন্নয়ন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সময় পাননি। বঙ্গবন্ধুকে হারানো জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রদূত বেলাল উপস্থিত সকলকে যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানান এবং এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও তিনি আহ্বান করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল
বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞের প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের একটি উক্তি তুলে ধরেন। যেখানে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বঙ্গবন্ধুর মতো কোনো নেতা থাকলে তাদের আজ এই করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। সুতরাং, জাতি হিসেবে আমাদের এই মহান নেতার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত বলে রাষ্ট্রদূত বেলাল মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ঐতিহাসিক অর্জনের সুখবরটি সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের চলমান এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত বেলাল শিশুদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব ভালোবাসতেন মর্মে উল্লেখ করেন। তিনি উপস্থিত শিশু কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ার জন্য এবং বঙ্গবন্ধুকে তাদের জীবনে আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অনুসরণের উপদেশ রাখেন।

কেক কাটার দৃশ্য
কেক কাটার দৃশ্য

দিবসটি উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং ‘কুইজ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিশু-কিশোরেরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী ড. দিলরুবা নাসরিন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল শিশু-কিশোরদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন এবং তাদের অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন।
পরিবর্তীতে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দূতাবাস পরিবার ও স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির শিশুরা এ পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে দিলরুবা নাসরিন উপস্থিত শিশু-কিশোরদেরসহ বঙ্গবন্ধু স্মরণে জন্মদিনের কেক কাটেন। শেষে সবাইকে দুপুরের খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি