বেদনাবিধুর পরিবেশে টোকিওতে বসন্ত উৎসব
বাঙালির নিজস্ব সর্বজনীন প্রাণের উৎসব ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে প্রতি বছরের মতো এবারও জাপানের টোকিওতে আয়োজন করা হয়েছিল বসন্ত উৎসব। উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করা ছিল অনেক আগেই। এর মধ্যে ঘটে নেপালে বিমান দুর্ঘটনা। নেপাল ট্র্যাজেডিতে বাংলাদেশের শোকাহত সবার মতো প্রবাসীরাও ছিলেন শোকার্ত। তাই এবার টোকিওর বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ বেদনাবিধুর আমেজে। অনুষ্ঠানে ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নীরবতা, কালো ব্যাজ ধারণ এবং আয়োজক ও আমন্ত্রিত বক্তাদের বক্তব্যে বারবার সেই দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ কালচারাল ফোরামের উদ্যোগে গত রোববার (১৮ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলে টোকিওর ইতাবাসি ওয়ার্ডে ওয়াইমা গ্রিন হলে ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে বসন্ত উৎসব। বেদনাবিধুর পরিবেশ সত্ত্বেও হলভর্তি দর্শক প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটি পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করেন। আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ড. সাহিদা আখতার।
অনুষ্ঠানে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পাশাপাশি শিল্পী আবদুল জববার, বারী সিদ্দিকী ও শাম্মী আখতারসহ জাতীয় পর্যায়ের সদ্য প্রয়াত সকল সংগীত শিল্পী ও সুরকারদেরও স্মরণ করা হয়। সূচনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আর্ট ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক শরাফুল ইসলাম। তিনি আগত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সাংস্কৃতিক পর্বে উত্তরণ কালচারাল গ্রুপ, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির শিল্পীসহ প্রবাসী শিল্পীদের কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সবাই উপভোগ করেন। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে প্রাণের এই উৎসব।
এবারের বসন্ত উৎসব প্রসঙ্গে টোকিও আর্ট ফোরামের তানিয়া মিথুন জানান, শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠা প্রকৃতিকে বরণ করতেই প্রতি বছর আমরা বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে থাকি। এ সময়ে গাছে গাছে আসে নতুন পাতা। স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলে জানান দেয় নতুন কিছুর। জাপানেও এ বছর আগাম সাকুরা ফোটার সম্ভাবনা। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানে একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, মানুষকে করে আনমনা। বসন্তের পূর্ণতার এ দোলা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সব বাঙালির ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের নানা ধরনের সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের ও জাপানিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা।
বিশ্ব নারী দিবসের প্রেক্ষাপটে ‘জাগো নারী বহ্নিশিখা’ শিরোনামে বাংলাদেশের পাঁচজন মহীয়সী নারীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর্বটি ছিল প্রশংসনীয়। অনুষ্ঠানে বীরকন্যা প্রীতিলতা, বিপ্লবী ইলা মিত্র, বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল ও শিরিন বানু মিতিলকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ ছাড়া চমৎকার সাজে সবাই যেন মূর্ত হয়ে উঠেছিলেন। মুখরোচক বাংলাদেশের খাবারের স্টলের খাবার নিমেষেই শূন্য হয়ে যায়। আগামী বছর আরও ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি