টরন্টোয় বিশ্ব কবিতা দিবস উদ্যাপন

বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি) আয়োজিত বিশ্ব কবিতা দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে কানাডার সাবেক পার্লামেন্টারি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক ও বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে অংশগ্রহণকারী কবি, আলোচক, বাচিকশিল্পী ও উপস্থাপকেরা। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী
বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি) আয়োজিত বিশ্ব কবিতা দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে কানাডার সাবেক পার্লামেন্টারি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক ও বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে অংশগ্রহণকারী কবি, আলোচক, বাচিকশিল্পী ও উপস্থাপকেরা। ছবি: মাহবুবুল হক ওসমানী

বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টারের (বিএলআরসি) উদ্যোগে কানাডার টরন্টোয় বিশ্ব কবিতা দিবস উদ্‌যাপন করা হয়েছে। গত রোববার (১৮ মার্চ) টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরি মিলনায়তনে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়। কবিতাপ্রেমী দর্শক সমাগমে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নির্ধারিত সময় বিকেল চারটায় এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন কানাডার সাবেক পার্লামেন্টারি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক ও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের কবি আসাদ চৌধুরী। চারটি আলাদা আলাদা পর্বে অনুষ্ঠানটি চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।

দুই কবির চমৎকার, প্রাণবন্ত আর হাস্যরসে ভরপুর উদ্বোধনী বক্তৃতা সবাইকে মাতিয়ে রাখে। কবি জর্জ এলিয়ট বলেন, কানাডার কবিতা এখনো মূলত বিশেষ শ্রেণির মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছে। শ্রেণিবৈষম্য ভেঙে ফেলতে হবে। শুধু ম্যাগাজিন, বই আর পিএইচডি গবেষণার প্রকাশিত কবিতাই অধিক প্রাধান্য পাচ্ছে। সমাজে অন্যান্য ক্ষেত্র অবহেলিত। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, কানাডার কাব্যসাহিত্য বিশ্বে শ্রেষ্ঠ। বহু সংস্কৃতির এই মিলনমেলায় সমৃদ্ধিময় কাব্যসাহিত্য আর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না। তিনি তাঁর রচিত কবিতা পাঠ করে সবাইকে চমৎকৃত করেন। তাঁর জাদুময়ী জোরালো কণ্ঠস্বরে সমাজের সত্যনিষ্ঠ বক্তব্যের প্রতিফলন সুস্পষ্ট। দর্শক–শ্রোতা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কবিতা পাঠ উপভোগ করেন। তাঁর বক্তব্যে সমাজকে উঁচু স্তরে নেবার প্রত্যয় লক্ষণীয়।
কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর হাস্যোজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সবাইকে মুগ্ধ করেন। তিনি বলেন, কবিতা হলো রসগোল্লার মতো, চেয়ে না থেকে, খেয়ে দেখতে হয়। অর্থাৎ পড়তে হবে। কবিতার ভাব প্রকাশ ইশারায়। আমাদের শিল্প-সাহিত্যে তিরিশ লাখ শহীদের আশীর্বাদ রয়েছে। তিনি সবাইকে কবিতার মতো সুন্দর করে বাঁচার আহ্বান জানান।
টরন্টো আর্টস কাউন্সিলের সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে কানাডার কবিতার ওপর আলোকপাত করেন জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক, সুজিত কুসুম পাল, সুব্রত কুমার দাস, পারভেজ চৌধুরী ও সুরজিৎ রায় মজুমদার।
সুজিত কুসুম পাল কানাডার আধুনিক কবিতার ইতিহাস কাল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গতানুগতিক ধারা থেকে কানাডার নিজস্ব ধারায় কবিতা কীভাবে বিশেষ মর্যাদার আসন প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কানাডার কাব্য ইতিহাসে কবিদের অবদান তুলে ধরে সুব্রত কুমার দাস তাঁর প্রিয় কবি গুয়েলডলিং মেকিউয়েনের অবদান উল্লেখ করেন।
পারভেজ চৌধুরী কবি জর্জের কবিতার বাংলা অনুবাদ পড়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।
সুরজিৎ রায় মজুমদার কানাডীয় কবিতায় অভিবাসী কবিদের অবদানের ওপর আলোকপাত করেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চা বিরতির পর কবিতা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন আসাদ চৌধুরী, দেলওয়ার এলাহী ও ড. বাদল ঘোষ।
কবি ইকবাল হাসানের সভাপতিত্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন মেহরাব রহমান, শিউলি জাহান, অমিত মুখোপাধ্যায়, মানজু মান আরা, মৌ মধুবন্তী ও ঋতুশ্রী ঘোষ।
সাহিত্যিক আকবর হোসেনের সভাপতিত্বে শাশ্বত বাংলা কবিতা থেকে পাঠ করেন সুমন মালিক, চয়ন দাস, আহমেদ হোসেন, মেরি রাশেদিন, শর্মিষ্ঠা সাহা, দিলারা নাহার বাবু, হোসনে আরা জেমী ও এলিনা মিতা।
বিএলআরসির সচিব ফায়েজুল করিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বিশ্ব কবিতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন অর্ক ভট্টাচার্য। পাওয়ার পয়েন্টে তার চমৎকার তথ্যবহুল উপস্থাপনা ছিল অনুষ্ঠানের বিশেষ দিক। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সূত্রধর হিসেবে কাজ করেন অদিতি জহির। সবশেষে অনুষ্ঠানটিকে সফল করার জন্য সুব্রত কুমার দাস সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৯৯ সালে ২১ মার্চ তারিখকে ইউনেসকো বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দিনটি পালিত করা হয়ে থাকে। বিএলআরসি এবারই প্রথম কমিউনিটির কবি ও কাব্যপ্রেমী মানুষদের নিয়ে দিবসটি উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নেয়।