প্রবাসে রঙিন হোলি

বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (বাঁয়ে)
বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (বাঁয়ে)

আমার হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেক বন্ধু থাকা সত্ত্বেও দেশে থাকতে কখনই হোলি উৎসবে অংশ নেওয়া হয়নি। নিজের কিছুটা সংকোচ কিংবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, এই একটি ছাড়া হিন্দু ধর্মের আর সব বড় উৎসবের অভিজ্ঞতাই আমার আছে। এই ঘাটতি পূরণ হয় ২০১৭ সালে মাতৃভূমি থেকে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরের বিখ্যাত হেউন্দে (Haeundae) সমুদ্র সৈকতে। এই অভিজ্ঞতা এতটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যে, এ বছর (২০১৮) আমি সবান্ধব এতে যোগ দিই।

কোরিয়ার আরেকটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান গজে (Geojedo) দীপের অহেওন (Wahyeon) সমুদ্র সৈকত ছিল এ বছরের হোলি উৎসবের কেন্দ্র। কোরিয়াতে বসবাসকারী ভারতীয়দের Indians in Korea নামের একটি সংগঠনের আওতায় ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত HoliHai নামে হোলি উৎসব পরিচালনা করে আসছে। ভারতীয় সংস্কৃতির একচ্ছত্র আধিপত্য ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষের এক বিচিত্র মেলা বসে এই উৎসবে।
প্রতি বছর গড়ে প্রায় হাজার তিনেক লোকের সমাগম ঘটে এই উৎসবে। তাই নিরাপত্তার জন্য কোরীয় পুলিশ সদা তৎপর। অনুষ্ঠানে নিবন্ধনকারীকে বাধ্যতামূলক সাদা বঙের পোশাকে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সকলকে দুই প্যাকেট আবির, একটি করে বাহারি টুপি ও হালকা নাশতা পরিবেশন করা হয়।

দর্শনার্থীদের সমাগম
দর্শনার্থীদের সমাগম

মূল আকর্ষণ অবশ্যই রং খেলা। সঙ্গে আছে বলিউডের সমৃদ্ধ সংগীত যা দেশ-জাতির গণ্ডি পেরিয়ে বহু আগেই আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া পাঞ্জাব রাজ্যের বিখ্যাত ‘ভাংরা’ নাচ, দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির দেখাও মেলে। বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব অস্বীকার করা অসম্ভব কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতেও যে এই সংস্কৃতি এতটা বিখ্যাত তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। কে নেই সেখানে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইরান। এ ছাড়া আমরা বাংলাদেশিরা তো আছিই। এমনকি ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তানিদের সংখ্যায় কম ছিল না।
আমার এবারের যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের তিন বন্ধু। তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা স্মরণাতীত তো বটেই, কিছু মুহূর্ত আমি নিজেও সারা জীবন মনে রাখব। উদ্দাম রং খেলার সঙ্গে নৃত্য, বিদেশি পরিবেশে পরিচিত সংগীত, চারদিকে যেখানে তাকাই আমার নিজ বর্ণের মানুষ। বলতে দ্বিধা নেই কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও মনে হচ্ছিল আমি বাংলাদেশেই আছি।

রং খেলার মুহূর্ত
রং খেলার মুহূর্ত

পশ্চিমা দেশের দর্শনার্থীদের সংখ্যাধিক্য থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় মূল্যবোধ—যেমন অ্যালকোহল কিংবা টিশার্ট ছাড়া অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রবেশ না করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়েছিল তিনটি ভাষায়—ইংরেজি, কোরীয় ও হিন্দিতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনুষ্ঠানের মঞ্চ সঞ্চালক কিন্তু ভারতীয় ছিলেন না। তিনি ছিলেন পশ্চিমা নারী। ভারতীয় বাচনভঙ্গি অনেকের কাছে বোধগম্য নয় কিংবা কোরীয় ভাষায় পারদর্শিতার কারণেই বোধকরি এই ব্যবস্থা।
সবশেষে বলতে চাই, আমাদের প্রতিবেশী দেশ বিশ্বের দরবারে ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। যা সত্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আমাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতি একদিন বিশ্ব মঞ্চ মাতাবে, এই আশায় রইলাম।

তাওসীফ রহমান: দেজন, দক্ষিণ কোরিয়া।