বাবার গন্ধটা কেমন!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

জ্বরে গা পুড়ে গেলে বাবার ভেজা হাত কপালে পড়ত। মনে হতো এটাই বেহেশত! চুল, চোখ গড়িয়ে বালতিতে টুপটাপ পানি, ভীষণ তুলতুল আর আদুরে দৃষ্টিতে বাবার চোখে চোখ। ফের ঘুমিয়ে পড়া। অতঃপর পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে রাজপুত্তুরের বাড়ি। তালপুকুরে ভূতের আড্ডা। বৌচি খেলায় ভোঁদৌড়! চম্পা বিলে শাপলা-শালুক, লাল-বউয়ের সোনামুখী-গল্প, দাদুমণির রস মিঠাই, চাঁদের দেশ থেকে এলিয়ে পড়া মামণির লম্বা চুল।

অতঃপর বিকেল পাঁচটায় অফিসের জানলায় ঝুলে...বাবা আ–আ–আ–আ–আ, অফিস কখন ছুটি হবে?
নানান খাবার, ফলমূল দিয়ে টেবিল ভর্তি। বাবা অফিস করবেন না মেয়েকে দেখাশোনা করবেন? বিশাল এক পেরেশানি।
বাড়ির কাজে সাহায্যকারী বুয়ার ওপর আর কতটুকুই ভরসা করা যায়!
একমাত্র কন্যা সন্তান যেন সাত রাজার ধন। এতটুকু কষ্টও যেন ছুঁতে না পারে, এতটাই সতর্ক থাকতেন বাবা। আমি এতটাই অবুঝ ছিলাম, বেশি আহ্লাদ পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম আমাকে জ্বর দাও, তাহলে গুটিসুটি হয়ে বাবার সঙ্গে ঘুমোতে পারব।

লেখিকা
লেখিকা

জ্বর এলে খুউব খুশি হতাম। এতটাই স্নেহ কাতর আর আদুরে স্বভাবের আমি!
একটা গল্পের বই, এক প্যাকেট ক্যানডি আর একটু আদর। এতটুকু পেলেই যেন পৃথিবী পেয়ে গেছি...।
আজও এমনি।
শুধু ভালোবাসা পেলেই পৃথিবী পেয়ে যাই। আর বাকি থাকে কী।
আমার আবার জ্বর আসুক, টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়ুক 
বিন্দুবিন্দু জল ভিজিয়ে দিক তৃষ্ণার্ত খররোদে 
অপেক্ষমাণ অবুঝ বালিকা প্রহর 
বাবার ভেজা হাত কপালে পড়ুক, 
পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে মুখে গুঁজে দিতে চাইলে 
শুরু হোক এ ঘর ও ঘর ছুটোছুটি,
আমি খুব নরম গলায় আবার বলি, ‘আজ অফিসে যেও না বাবা’
আমার ভীষণ বাবার গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে! 
বাবার গন্ধটা কেমন?
একি এমন ফুল যা বেহেশতে ফোটে?
স্নেহ অতি বিষম বস্তু।

মুক্তা মাহমুদা: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।