উবারচালকের লেখা বই

উবারচালকের লেখা বই
উবারচালকের লেখা বই

জানি না লেখালিখির সঙ্গে অনেক দিন ধরে যুক্ত আছি বলেই কিনা, জানার একটি কৌতূহল সব সময় আমার মধ্যে কাজ করে। আমর তো মনে হয় প্রতিটি মানুষের কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে, জানার আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের জীবন আলাদা।

আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো ভিন্ন। মেয়েকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই উবার অথবা লিফটের (Lyft) শরণাপন্ন হতে হয়। সাধারণত গাড়িতে উঠেই টুকটাক গল্প করি চালকের সঙ্গে। নানান পেশা, নানান বর্ণ ও দেশের মানুষ আমেরিকাতে উবার-লিফট চালান। বেশির ভাগই খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে এটিকে বেছে নেন। নিজের সময়মতো সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা চালান। কেউ হয়তো চালান অতিরিক্ত কিছু আয়ের জন্য, কেউ হঠাৎ করে চাকরিবিহীন হয়ে পড়ায়, কেউ বা বড় কোনো ঋণ শোধ করবার জন্য। শুধু পুরুষ নয়, মেয়েরাও এই দেশে ট্যাক্সি চালান। এইতো কিছুদিন আগেই একজন নারী লিফটচালক পেলাম, যিনি পেশায় একজন নার্স।

দেড় বছর আগে একদিন উবার কল করবার পর মধ্যবয়স্ক একজন ভদ্রলোক এলেন। ভদ্রলোকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নাইজেরিয়ায়। নাইজেরিয়াতে একটি ব্যাংকে কাজ করেছেন ১১ বছর। আমেরিকাতে এসেছেন ১৯৮১ সালে। বর্তমানে পেশায় একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। পুরো পথ তাঁর সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে কথা বললাম। আমাকে আমার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে তিনি বললেন, ‘তোমাকে একটি বই দিচ্ছি।’

লেখিকা
লেখিকা

আমিতো অবাক! তিনি আমার নামের সঠিক বানানটি শুনে নিয়ে বইয়ের ভেতর নাম লিখে সই করে আমাকে দিলেন। তাঁর লেখা বই আমেরিকার আফ্রিকান অভিবাসীদের জীবন ও তাঁদের সংগ্রাম নিয়ে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের। বইটির নাম দ্য ডিলেমা অব অ্যান আফ্রিকান ফাদার (The Dilemma of an African Father)।

কত নানান দেশের মানুষের দেখা পাই এই ট্যাক্সিতে। সবাই যে আমি যেখানে থাকি সেখানের বাসিন্দা তাও নয়। কেউ গাড়ি চালিয়ে আসেন মেরিল্যান্ড, নিউ জার্সি অথবা পেনসিলভানিয়া থেকে। ট্যাক্সি চালিয়ে চলে যান এক স্টেট থেকে অন্য স্টেট। কিছুদিন আগে একজন আমেরিকান তরুণকে পেলাম, যিনি পিএইচডি করছেন আর কিছু বাড়তি আয়ের জন্য উবার চালাচ্ছেন অবসরে। ফ্লোরিডার ছেলে, কিন্তু পড়ালেখার জন্য এখন থাকছে পেনসিলভানিয়াতে।
মজার একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করি। একবার একজন বাংলাদেশি উবার চালকের দেখা মিলেছিল, যিনি যেকোনো কারণেই হোক আমাকে দেখে বুঝতে পারেননি আমি তাঁর স্বদেশিয়। আমার সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বললেন। কিন্তু গাড়িতে উঠে বাংলায় কয়েক মিনিট ঝগড়া করলেন বউয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে। আমি কষ্ট করে হাসি চাপিয়ে রেখেছিলাম। বিব্রত করতে ইচ্ছে করেনি ভদ্রলোককে।

ওয়ারা করিম, ডেলওয়্যার, যুক্তরাষ্ট্র।