টরন্টোয় লেখক আড্ডায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক

লেখক আড্ডায় আরিফ আনোয়ার (ডানে)। বামে উপবিষ্ট অদিতি জহির, অনন্যা ঐশ্বর্য রাফা ও তাসমিনা খান
লেখক আড্ডায় আরিফ আনোয়ার (ডানে)। বামে উপবিষ্ট অদিতি জহির, অনন্যা ঐশ্বর্য রাফা ও তাসমিনা খান

কানাডার টরন্টোয় বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি) আয়োজিত বছরব্যাপী ইংরেজিতে বাংলা সাহিত্যের বইপড়া প্রকল্পের এবারের অতিথি ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ঔপন্যাসিক আরিফ আনোয়ার। গত শনিবার (৭ এপ্রিল) টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই লেখক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ করা যেতে পারে কানাডার খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা হারপারকলিন্স থেকে গত মার্চ মাসেই প্রকাশিত হয়েছে আরিফ আনোয়ারের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য স্টর্ম’। একজন আমেরিকা-প্রবাসী বাংলাদেশির দেশে ফিরে যাওয়ার যন্ত্রণার কথা রয়েছে বইটিতে। আরও রয়েছে ১৯৭০ সালে ভোলার প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা। আরিফের কথা শুনতে ও পরিচিতি হতে এদিন মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী ও কবি ইকবাল হাসানসহ অনেক কবি, লেখক ও বিশিষ্টজন।
আড্ডার শুরুতে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক তাসমিনা খানের সূচনা বক্তব্যের পর মাইক্রোফোন তুলে দেওয়া হয় অনন্যা ঐশ্বর্য রাফার হাতে। তিনি চমৎকারভাবে ঔপন্যাসিকের পরিচয় তুলে ধরেন শ্রোতা-দর্শকদের সামনে। রাফার কথায় উঠে আসে তাঁর লেখক-জীবন ইতিহাস ও প্রকাশনার বর্ণনা। এই উপস্থাপনা থেকে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা ঔপন্যাসিক ও তাঁর উপন্যাস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন।
এরপর শুরু হয় লেখক আরিফ আনোয়ারের সঙ্গে আড্ডা পর্ব। আড্ডা পর্বটি দুই ভাগে ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম ভাগে অদিতি জহির লেখককে নির্ধারিত কিছু প্রশ্ন করেন এবং পরবর্তীতে দর্শকদের মধ্য থেকে লেখককে উন্মুক্ত প্রশ্ন করা হয়।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আরিফ আনোয়ার জানান তাঁর লেখক জীবনের প্রারম্ভিক ইতিহাস ও আগ্রহের বিষয়গুলো। তাঁর দ্য স্টর্ম বইটির বিষয়বস্তু ও এর বিভিন্ন চরিত্রগুলো প্রসঙ্গে তিনি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশিদের বিশ্বের বাজারে সমাদৃত করার জন্য তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার জন্য বিশেষভাবে গর্ব বোধ করেন। তার কথায় উঠে আসে কিছু উপদেশ, যা লেখকদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, ভালো লেখক হতে হলে প্রচুর পড়তে হবে, লিখতে হবে ও নিজের লেখাকে ভালোবাসতে হবে।
আরিফ নিজের জীবনে উৎসাহী প্রদানকারী কিছু লেখকদের নামও তুলে ধরেন। জানা যায়, ঝুম্পা লাহিড়ী, হুমায়ূন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ইমদাদুল হক মিলন তাঁর প্রিয় লেখকদের কয়েকজন। আরও জানা যায়, আরিফ পড়তে খুব ভালোবাসেন ও এই ভালোবাসা তাঁকে লেখক হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। এ ছাড়া তিনি তার পারিবারিক অবদানের কথাও উল্লেখ করেন। তাঁকে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকে লেখালেখির ব্যাপারে অনেক উৎসাহ দেওয়া হয়, যার ফলে তিনি লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারছেন।

আরিফ আনোয়ারের সঙ্গে আড্ডারত আসাদ চৌধুরী ও দেলওয়ার এলাহী
আরিফ আনোয়ারের সঙ্গে আড্ডারত আসাদ চৌধুরী ও দেলওয়ার এলাহী

দর্শক সারি থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন কবি ইকবাল হাসান, মৌ মধুবন্তী, সাঈদ এম হাসান, মানজু মান আরা, কাজী জহির, সুরজিৎ রায় মজুমদার ও সুজিত কুমার পাল প্রমুখ।
দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঔপন্যাসিক আরিফ বলেন, লেখকদের উচিত লেখা ছাপানোর জন্য প্রকাশক খুঁজে বের করা। কারণ তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বড় বড় বইয়ের দোকানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। এর ফলে লেখকের বইয়ের প্রচার ও প্রসার বাড়ে।
লেখকদের লেখক ফোরামে যোগদানের কথা বলেন যাতে করে তারা তাদের লেখা সম্পর্কে গঠনমূলক মতামত বা প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন এবং লেখাকে আরও বেশি শাণিত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ইউঅফটির রাইটিং কোর্সে অংশগ্রহণের পরামর্শও দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণের কথাও তুলে ধরেন।
তাঁর বইয়ের বাংলা অনুবাদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, তিনি ভবিষ্যতে এর অনুবাদ করার আশা রাখেন এবং এ ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন।
ভূমিকা বক্তব্যে তাসমিনা খান বিএলআরসির পরিচিতি, বইপড়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও নিয়মকানুন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রতি মাসের প্রথম শনিবার সকাল ১১টায় একজন করে কানাডীয় সাহিত্যিক উপস্থিত থাকছেন বিএলআরসির এই লেখক-আড্ডায়। তাসমিনা তার উপস্থাপনায় বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় উৎসাহী করা এবং বাংলা সাহিত্য, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিএলআরসি। এটি মূলত এক বছরের প্রকল্প এবং সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে শুধু ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা এ বইপড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তারা সারা বছর বইপড়া শেষে আগামী আগস্ট মাসে বাংলা সাহিত্য বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লিখে জমা দেবেন। যার মধ্য থেকে ১০ জনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারীকে পুরস্কৃত করা হবে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় এ বছরের ১৭ আগস্ট।
জানা যায়, আমেরিকা-প্রবাসী চিকিৎসক ও দার্শনিক দেবাশিস মৃধার আর্থিক সহযোগিতায় আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরিতে আগস্ট (২০১৮) পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম শনিবার চলবে বই নেওয়া ও দেওয়ার এ কার্যক্রম। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। বিএলআরসি কর্তৃক সংগৃহীত বইয়ের তালিকায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ুন আজাদ, হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন ও নাসরীন জাহান প্রমুখ রচিত ২৯০টি গ্রন্থের ইংরেজি সংস্করণ। আরও আছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জীবনী গ্রন্থও। আছে লালন শাহ, হাসন রাজা, রাধারমণ ও শাহ আবদুল করিমের রচনাসমগ্র। এ ছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শহীদজননী জাহানারা ইমামের গ্রন্থও।

সংবাদ প্রেরক: মানজু মান আরা: টরন্টো, কানাডা।