টোকিওতে রাইজিং স্টারস অ্যাওয়ার্ড নাইট

মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রাইজিং স্টারসের সদস্যরা
মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রাইজিং স্টারসের সদস্যরা

ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশিদের ভালোবাসা ও উন্মাদনার কথা সবারই জানা। এরই ধারাবাহিকতার ছোঁয়া এখন সুদূর জাপানেও লেগেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি। কিন্তু জাপানে প্রবাসীর সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তারপরও কিছু ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশি উদ্যমী তরুণ শত ব্যস্ততার মাঝেও ২০১৪ সালে গড়ে তুলেছেন রাইজিং স্টারস নামে একটি ক্রিকেট ক্লাব। প্রবাসীদের আন্তরিক সহযোগিতা ও জাপানে সে সময়ের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের হাতেই শুরু হয় ক্লাবটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা।

অ্যাওয়ার্ড নাইটে (২০১৬) জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা
অ্যাওয়ার্ড নাইটে (২০১৬) জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

ক্রিকেট ভালো লাগার পাশাপাশি জাপানিদের কাছে বাংলাদেশের নাম আরও নজরে আনার প্রচেষ্টা থেকেই এই ক্লাবটির জন্ম। কমিউনিটিতে খেলাধুলার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ক্লাবটির সকল সদস্য হবে বাংলাদেশি। প্রায় ২৫ জন সদস্য নিয়ে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো জাপানের টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

অ্যাওয়ার্ড নাইটে (২০১৭) অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তরা
অ্যাওয়ার্ড নাইটে (২০১৭) অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তরা

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো শীতপ্রধান দেশ জাপানে বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় ক্রিকেট খেলা হয় না। বাকি অর্ধেক সময়েও খেলা হয় শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে। মূলত এপ্রিলের শুরু থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝির মধ্যেই শেষ হয় সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলা। এতে জাপানিদের পাশাপাশি ভারতীয়, পাকিস্তানি ও শ্রীলঙ্কানদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের সংখ্যাটাও কম নয়।
এরই মাঝে বিভিন্ন সময় উচ্চতর শিক্ষা ও জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু বাংলাদেশিও জাপানের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে আসছে প্রায় অনেক আগে থেকেই। তখন থেকেই জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ক্রিকেটর ওপর আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের উন্নতির ধারাবাহিকতাও অন্যতম একটি কারণ। তাই প্রথম থেকেই রাইজিং স্টার ক্লাবের উদ্দেশ্য ছিল সবকিছুর পাশাপাশি যাতে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে পারফরমেন্সর গ্রাফটাও যেন ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

জেনমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে রাইজিং স্টারসের কয়েকজন সদস্য
জেনমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে রাইজিং স্টারসের কয়েকজন সদস্য

প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর এসে ক্লাবটি জাপানের পূর্ব বিভাগের টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয় এবং এ বছর (২০১৮) প্রথমবারের মতো দীর্ঘ পরিসরের প্রতিযোগিতা জেসিএলে (জাপান ক্রিকেট লীগ) অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে।
ক্লাবটি চতুর্থ বছরে পা রেখেছে। এ উপলক্ষে গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রাইজিং স্টারস অ্যাওয়ার্ড নাইট ২০১৭ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল টোকিওর মারুনচি এলাকায়। এই আয়োজনে নতুন-পুরোনো সদস্য, পৃষ্ঠপোষক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ড. শাহিদা আকতার, বাণিজ্যিক কাউন্সেলর মোহাম্মদ হাসান আরিফ ও দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। সম্প্রতি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি তুলে ধরা হয়, কীভাবে রাইজিং স্টারস ক্লাবটি তাদের বিভিন্ন সামাজিক জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম অব্যাহত করে আসছে সুদূর বাংলাদেশও। বাৎসরিক বাজেটের একটি অংশ বাংলাদেশের গরিব ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়ে থাকে।

রাইজিং স্টারসের খেলোয়াড়রা
রাইজিং স্টারসের খেলোয়াড়রা

এ ছাড়া ক্লাবের সদস্যরা জাপানে ক্রিকেট প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। জাপানে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে থাকা ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে ২০১৬ সাল থেকে রাইজিং স্টারস জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করে আসছে। ইতিমধ্যেই ক্লাবটির সহযোগিতায় সায়তামাতে জেনমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এখানে পুরো ব্যাপারটাই হয়ে থাকে কোনো ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ছাড়াই। ক্লাবের সদস্যরা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী হয়েই ক্রিকেট প্রসারে কাজ করে আসছেন, যা নিতান্তই প্রশংসার দাবিদার।
প্রবাসে ক্রিকেট খেলাকে পুঁজি করে সবার আন্তরিক সহযোগিতায় রাইজিং স্টারস জাপানের মাটিতে ক্রিকেট খেলে ও খেলাটিকে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের নামটি আরও সমুন্নত করুক সেই কামনা রইল।

কাজী ইনসানুল হক: টোকিও, জাপান।