দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্ণিল রঙে-ঢঙে বর্ষবরণ

সিউলে মঙ্গল শোভাযাত্রা
সিউলে মঙ্গল শোভাযাত্রা

দক্ষিণ কোরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা বর্ণিল রঙে-ঢঙে সেজে উৎসবের আমেজে উদ্‌যাপন করেছেন বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারও সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজন করে বৈশাখী উৎসবের। ইথেওনের নোকসাপিয়ংয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে শিকড়সন্ধানী প্রবাসী বাঙালিরা দেশের সুরে মেতে ওঠেন বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখে। পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল শনিবার) দেশটিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায় বৈশাখী অনুষ্ঠানে আগত দর্শকদের।

দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় দূতাবাসের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হয় নোকসাপিয়ং মোড়ে। এতে দূতাবাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। লাল সাদা আর বর্ণিল পোশাকে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নকসাপিয়ং পার্কসংলগ্ন এলাকা।
নোকসাপিয়ং প্রাঙ্গণে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নতুন আর পুরোনো প্রজন্মের মিশেলে ব্যতিক্রমী ফ্যাশন শো আর নাচে-গানে হাজার হাজার দর্শক সরব হয়ে ওঠেন। চৈতি, হৃদি ও তানিসার নাচে আগত দর্শকদের প্রশংসা কুড়ায় মুহুর্মুহু হাত তালিতে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশনা করেন রাষ্ট্রদূত, প্রথম সচিব জাহিদ ইসলাম ভূঁইয়া ও আশুতোষ অধিকারীসহ অনেকে। কবিতা পাঠ করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব ও হেড অব চ্যান্সারি রুহুল আমিন ও জাহাঙ্গীর হোসেইন প্রমুখ। পরিচালনা করেন দূতাবাস কনস্যুলার সহকারী মিজানুর রহমান।

দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রবাস জীবনে ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে আসা মানুষগুলো মেতে ওঠেন আড্ডা-খুনসুটিতে। অতিথিদের পরিবেশন করা হয় ইলিশ, পান্তা ভাত, আলু ভর্তা, কালো জিরা ভর্তাসহ প্রায় দশ প্রকারের ভর্তা। প্রবাসীরা খাবারের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি উপভোগ করেছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। দূতাবাসের এ আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে কিছু বিদেশি ও কোরীয় নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী বক্তব্য আবিদা ইসলাম বলেন, দেশীয় সংস্কৃতির লালন, নতুন প্রজন্ম ও বিদেশিদের কাছে ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে দূতাবাস প্রতিবছর বৈশাখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকলকে দেশীয় সংস্কৃতির আঁকড়ে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

জঞ্জুতে বর্ষবরণ ও নবীনবরণ

দক্ষিণ কোরিয়ার জঞ্জুতেও উদ্‌যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। জঞ্জুতে বসবাসকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন বিডি গ্রুপের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্ষবরণ ও এ বছর আগত নবাগত শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান।

জঞ্জুতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন বিডি গ্রুপের বর্ষবরণ
জঞ্জুতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন বিডি গ্রুপের বর্ষবরণ

শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ ও নবীনবরণ অনুষ্ঠান। ড. আবু হেনা মোস্তফা জামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যতম আয়োজক কামরুজ্জামান মাহবুব ও সাইদুল ইসলাম। এরপর নবীনদের শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করে বরণ করেন ড. সানোয়ার হোসেন, ড. মেহেদি হাসান, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ড. শরীফুজ্জামান সবুজ ও শামীম আলমগীর। নবীনবরণ শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শরীফুজ্জামান সবুজ।
দুপুরে হরেক রকমের বাঙালি খাবারের মাধ্যমে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও হরেক রকমের মজার খেলা। সংগীত পরিবেশন করেন আখিরুল রাজু, তৌফিক আলম, পারভেজ হোসেন, মিনারুল ইসলাম, সাঈদ আজিম, আফজাল হোসেন। নৃত্য পরিবেশন করেন সাইদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল স্বামী-স্ত্রীর যুগলবন্দী পরিবেশনা, মেয়েদের কান্না প্রতিযোগিতা, ছেলেদের হাসির খেলা ও মোরগ লড়াই। অনুষ্ঠান শেষে পিঠা, পায়েস, মিষ্টি, চটপটি পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া ছিল পুরস্কার বিতরণী।
আবু হেনা মোস্তফা জামাল আয়োজক ও সহযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়ে এবং নবীনদের শুভকামনা জানিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সংবাদ প্রেরক: ফারুক হিমেল, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া।