মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালিয়ানায় ভরা একদিন

বৈশাখী সাজে নারীরা
বৈশাখী সাজে নারীরা

আমাদের ছেলেবেলায় মফস্বল শহরগুলোতে বাংলা নববর্ষ বলতে আমরা বুঝতাম ব্যবসায়ীদের দোকানগুলোতে হালখাতা আর মিষ্টি খাওয়া। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের এই যুগে আনন্দ উৎসবে বেড়েছে জাঁকজমক ও বৈচিত্র্য। প্রিয় দেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাংলাদেশিদের হৃদয়ে নিজদেশ আর সংস্কৃতি দখল করে রাখে এক বিশেষ স্থান।

চলছে হাঁড়িভাঙা খেলা
চলছে হাঁড়িভাঙা খেলা

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন হলো বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব মোনাশ ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চাকে উৎসাহিত করে থাকে। মোনাশ ক্লাব অ্যান্ড সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত এই সংগঠনটি মিলনমেলা, বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন, বর্ষবরণসহ নানারকম অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

দেশীয় খাবারের আয়োজন
দেশীয় খাবারের আয়োজন

এই সংগঠনের উদ্যোগে গত ১৫ এপ্রিল রোববার উদ্‌যাপন করা হয়েছে বাংলা বর্ষবরণ ১৪২৫ অনুষ্ঠান। ঝিরঝিরে বৃষ্টিমুখর দিনেও ছিল প্রায় দেড় শতাধিক বাংলাদেশির উপস্থিতি। রংবেরঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরিহিত বাঙালির আনন্দমুখর সমাবেশে মোনাশের সি-১ থিয়েটার প্রাঙ্গণ যেন হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বর্ণিল বাংলাদেশ। নারীরা আয়োজন করেন নানা রকম দেশি খাবারের। ছিল পায়েশ, পিঠা, পাঁপড়, পেঁয়াজি, শিঙাড়া, মিষ্টি, বুন্দিয়া আরও কত কী। একসঙ্গে এত রকমারি দেশি খাবারের সুগন্ধে পেট আর মন দুটোই ভরে ওঠে। এরসঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল সংগঠনের সভাপতি খাইরুল ইসলামের রেসিপিতে আচারের তেলে মাখানো বিশেষ ঝালমুড়ি। খেলাধুলার অংশে নারীরা বালিশ নিক্ষেপ আর ছেলেরা লক্ষ্যভেদ খেলায় অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল হাঁড়িভাঙা খেলা। হাঁড়িভাঙা খেলার জন্য মেলবোর্ন শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে মাটির হাঁড়ি জোগাড় করেন সংগঠনের সম্পাদক হাফিজ হাসান।

দলীয় সংগীত পরিবেশনা
দলীয় সংগীত পরিবেশনা

দেশি খাবার ও দেশি খেলার পাশাপাশি চলছিল ফটোসেশন। জান্নাত উষার বানানো নান্দনিক এক রঙিন ফটোফ্রেমে সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। ছোট্ট সারিনা, ফাতিমা, মেহরিমা ও অনুস্বর পরে এসেছিল শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, চুড়ি আর ইমান, যায়ান ও যশ পরেছিল পাঞ্জাবি। রংবেরঙের বাঁশি আর বেলুন বাড়িয়ে দেয় বাচ্চাদের উচ্ছ্বাস। এসব দেশীয় অনুষ্ঠানগুলো প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশুদের সুযোগ করে দেয় নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার।

শিশু ফাতিমার বৈশাখী সাজ
শিশু ফাতিমার বৈশাখী সাজ

যথারীতি কবিগুরুর কালজয়ী ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটির দলীয় পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঘুঙুরের তালে ‘বাজে বাংলাদেশের ঢোল’ গানটির সঙ্গে নেচে দর্শকদের মুগ্ধ করে ফোর্থ ডাইমেনশন মেলবোর্নের নৃত্যশিল্পী অর্পা। শর্মী, অনিন্দিতা, তাসনিম, রুসেলি, শুভাশিস আর নাফির মনমাতানো একক সংগীত ছিল অসাধারণ। জিনাত আবৃতি করেন কবি আবুল হোসেন খোকনের ‘মেহেদি পাতা’ কবিতাটি।
সবশেষে মঞ্চে ‘আমি বাংলায় গান গাই/ আমি বাংলার গান গাই/ আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’ সংগীতের সঙ্গে সুর মেলান শতাধিক দর্শক।
এ ছাড়া ছিল র‍্যাফেল ড্র ও খেলাধুলায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী। আর বৃষ্টিস্নাত বৈশাখে দুপুরের খাবারে ছিল ইলিশ খিচুড়ি। যার স্বাদ আর গন্ধ পুরোটাই বাংলাদেশি। পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল বাঙালিয়ানায় ভরা। বৈশাখের এই বিশেষ দিনটিতে আমরা সবাই ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে গিয়েছিলাম যে আমরা বাস করি প্রিয় বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে।

মেহনাজ পারভীন: পিএইচডি গবেষক, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া ও কার্যকরী সদস্য, বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব মোনাশ ইউনিভার্সিটি।