মোহময় সেই বেলাভূমি

পানামা সিটি বিচ
পানামা সিটি বিচ

বাচ্চাদের স্কুলে বসন্তের ছুটি শুরু হয়েছে। পুরো এক সপ্তাহ জুড়ে সেই ছুটি উদ্‌যাপন করতে এক ভোরে সপরিবারে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম আমাদের গন্তব্যস্থলের জন্য। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মেয়ে বলে পাহাড় আর সমুদ্র আমার চিরকালীন মুগ্ধতা। আর আমার ছোট পুত্র তখনো সমুদ্র দেখেনি। সব মিলিয়ে তাই আমাদের এবারের প্ল্যান ছিল সমুদ্র দেখতে যাওয়ার।

লেখিকা
লেখিকা

সময়মতো তৈরি হয়ে, খাবার-দাবারসহ চার দিনের ছুটি কাটাতে যা যা লাগবে সব গুছিয়ে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হলো পানামা সিটি বিচের দিকে। গাড়ি চলছিল ৭০-৮০ মাইল বেগে, পথে কলম্বাস নামক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে সকালের নাশতাটা সেরে নিলাম সবাই। আবারও আমাদের পথচলা শুরু, দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার পথে আমরা এসে পৌঁছালাম নির্ধারিত হোটেল হলিডে ইন রিসোর্টে।

স্বামী–সন্তানসহ লেখিকা
স্বামী–সন্তানসহ লেখিকা

ছয় ঘণ্টা টানা জার্নিতে সবাই ছিলাম ভীষণ টায়ার্ড। তাই সেদিনকার মতো সি-ভিউ ব্যালকনিতে বসে সমুদ্র দেখলাম। পানামা সিটি বিচ, ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের একটি জনবহুল, নয়নাভিরাম সৈকত এটি। মেক্সিকো সাগরের কূল ঘেঁষা চকচকে সাদা বালির সৈকত। সমুদ্রের পানি যেখানে আকাশের সঙ্গে রং বদলায়, কখনো হালকা নীল কখনোবা গাঢ় নীলের সমাহার। দূর থেকে ভীষণ মোহনীয় যার বালুকাবেলা, সাদা গাঙচিলের ওড়াউড়ি আর সঙ্গে বাসন্তী বাতাস।

লেখিকা
লেখিকা

বাচ্চাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। এই বুঝি তারা সমুদ্রে নামে আবার হয়তো সমুদ্র পাড়ে বসে তৈরি করে স্যান্ডক্যাসল। প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে গেলে হোটেলের পুলের ধারে বসে থিয়েটারে বাচ্চাদের কমেডি সিনেমা দেখে ছেলে বুড়ো সবার হেসে কুটিকুটি হওয়া। সর্বোপরি আমাদের রিসোর্টের ব্যবস্থাগুলো ছিল চমৎকার।
পরের দিন সকাল থেকেই ছিল ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি। মধ্যদুপুরে সূর্যের উঁকি দেওয়া আকাশে খেয়ালি মনে আবারও জেগে ওঠে বালুকাবেলা। রৌদ্র ছাতার নিচে কফির কাপখানা নিয়ে বসে থাকি আর দুই কান পেতে শুনি সমুদ্রের গান।
চলে আসার আগের দিন আলো ঝলমলে এক বিকেলে গিয়েছিলাম ফিশিং পায়ার দেখতে। মাইলখানেক কংক্রিটের রাস্তা ধরে সাগরের বুকে হেঁটে যাওয়া বহুদূর। অনেককেই দেখলাম শখের বসে টোপ ফেলে মাছ ধরছেন।
সন্ধ্যা নামার পথে বিশাল সেই সূর্যটা দেখি আস্তে আস্তে কীভাবে যেন টুপ করে ডুবে গেল সাগরের মাঝে। অদ্ভুত এক নৈসর্গিক অনুভূতি। মনের কোণে আলতো করে যেন রেশ রেখে যায় মন খারাপের অনুভূতি, ইশ্‌ কাল তো আর দেখতে পাব না সবকিছু। সেই সন্ধ্যাটি আমার দেখা অন্য সকল সন্ধ্যার চেয়ে ভিন্ন ছিল।
একটু পরে আকাশের বুক চিড়ে ঝলমলিয়ে ওঠে পূর্ণিমার চাঁদ। সেই ফিনিক ফোঁটা জ্যোৎস্নায় জেগে ওঠে বালুকাবেলা। আমরাও বসে থাকি সঙ্গে আমাদের জ্যোৎস্না বিলাসী মন।
কেন যেন ভয়ানক সুন্দর কিছু দেখলেই বাবা-মা আর পরিবারের সবার কথা খুব মনে পড়ে। কল্পনাবিলাসী মনে যেন শুনতে পাই বহুদূর থেকে কেউ বুঝি গাইতে থাকে—
‘ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া...
বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি হায়রে...
কান্দে রইয়া, রইয়া...।’

রিফাত নওরিন: আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র।