প্রবাস প্রজন্মের শিশু-কিশোর মিলনমেলা ৬ মে

প্রবাস প্রজন্মের অনুষ্ঠানের ফাইল ছবি
প্রবাস প্রজন্মের অনুষ্ঠানের ফাইল ছবি

‘বাংলাটা ওর ঠিক আসে না’, বলা আত্মতৃপ্ত অভিভাবক যারা ইংরেজি কারিকুলামে পড়া কিংবা অভিবাসী দেশের ভাষায় অধ্যয়নরত সন্তানদের ‘বাংলা’ না জানার বিষয়টা অবজ্ঞা করেন, তাদের যুক্তির জবাব জাপানে শিশু-কিশোরদের বাৎসরিক আয়োজন ‘প্রবাস প্রজন্ম’। একমাত্র ঘরেই যাদের শুধু বাংলা বলার সুযোগ সেই শিশু-কিশোরেরা কত সুন্দরভাবে বাংলা গান, আবৃতি, অভিনয়, নাচসহ বাংলা সংস্কৃতিকে কী সুন্দরভাবে লালন করে আসছে। অথচ এই শিশুরা সবাই জাপানি বা ইংরেজি শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা করে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাদের অভিভাবকদের। শত প্রতিকূলতাকে সামাল দিয়ে কেবলমাত্র স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাদের এই অসাধ্যসাধন। ‘বাংলাটা ওর ঠিক আসে না’ বলা অভিভাবক ও এই অভিভাবকদের চিন্তা চেতনায় কী ফারাক?

প্রবাস প্রজন্মের অনুষ্ঠানের ফাইল ছবি
প্রবাস প্রজন্মের অনুষ্ঠানের ফাইল ছবি

গেল রোববার (২২ এপ্রিল) প্রবাস প্রজন্মে অংশগ্রহণকারী শিশুদের শেষ রিহার্সালে উপস্থিত হয়ে শিশুদের আগ্রহ দেখে চমৎকৃত হয়েছি। বাংলা পড়তে না পারলেও জাপানি ও ইংরেজিতে নোট লিখে কী সাবলীল গাইল ওরা। যদিও একজনের মা দুঃখ প্রকাশ করলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই বাঙালি। অথচ আমরা তাকে বাংলা পড়াতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা।’
নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে না এমন কোনো জাপানি, চাইনিজ, আমেরিকান, ইতালিয়ান পৃথিবীতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ? মাত্র পাঁচ বছরে জাপান ছেড়ে ইংল্যান্ডের অভিবাসী ও ২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কাজুও ইশিগুরোও জাপানি জানেন। তিনি জাপানি ভাষাতেও লেখালেখি করেন।
আমার এ প্রশ্নের জবাবে একজন মা, মাচিয়ামা মুনা ইব্রাহীম বললেন, কানাডিয়ান-আমেরিকান শিশুদের একটা ভাষা শিখলেই হবে। সেটা ইংরেজি। জাপানি ও চাইনিজ শিশুদের দুটো শিখলে হবে। ইংরেজি আর মাতৃভাষা। আর আমার ছেলেদের তিনটা শিখতে হয়। জাপানি, ইংরেজি ও বাংলা। তার ওপর আমরা তাদের কোরআন শরিফ পড়া ও নামাজ শিখিয়েছি। এতসব ছেলেদের প্রেশার হয়ে যায়। তাই আমার বাচ্চারা ভালোভাবেই বাংলা বলতে পারে, কিন্তু লিখতে-পড়তে পারে না। তিনি অবশ্য দুঃখ করে বললেন, আমি নজরুল গীতির শিল্পী, কিন্তু আমার ছেলেরা নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎ চন্দ্র, সত্যজিৎ রায়, কাউকে চিনে না। তাদের বই পড়তে পারে না, গান গাইতে পারে না। আফসোস, এটা মা হিসেবে আমার ব্যর্থতা...।

প্রবাস প্রজন্মের অনুষ্ঠানের প্রচারপত্র
প্রবাস প্রজন্মের অনুষ্ঠানের প্রচারপত্র

প্রবাস প্রজন্মের দুটি অনুষ্ঠানে দুজন মা মণি হাকিম ও ববিতা পোদ্দার জাপানে জন্ম নেওয়া তাদের সন্তানদের ঘরে বাংলা বলার জন্য কি কঠিন ছিলেন তা বললেন। ইংরেজি মাম্মা বা জাপানি ওকাসান নয়, বাংলায় ‘মা’ না ডাকলে তারা জবাব দিতেন না। কথাও বলতেন না। তাই তাদের এখনো বাংলাটা আয়ত্তে।
আগামী ৬ মে রোববার প্রবাস প্রজন্মের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে ‘দুই প্রজন্মের মিলনমেলা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। টোকিওর কিতা কুর তাকিনোগাওয়া কুমিন কাইকানে বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিতব্য এই আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। অংশগ্রহণকারী শিশুরা, অভিভাবক ও প্রবাসীরা অধীর আগ্রহে অনুষ্ঠানটা উপভোগের অপেক্ষায়। এবারের আমন্ত্রিত শিল্পী সাদি মোহাম্মদ।

রিহার্সালের দৃশ্য
রিহার্সালের দৃশ্য

অতিথিরা কোনোরকম সম্মানী তো নেনই না বরং নিজরাই শিশুদের জন্য উপহার বয়ে আনেন। প্রবাস প্রজন্মের আয়োজনে ইতিপূর্বে অতিথি হয়ে এসেছিলেন ড. জাফর ইকবাল, ড. ইয়াসমিন হক, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহমিদা নবী, সুবীর নন্দী, বারী সিদ্দিকী, মুস্তাফা মনোয়ার, ফরিদুর রেজা সাগর, গোলাম মোর্তোজা, আবিদা সুলতানা, রফিকুল আলম ও ও জাপানের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল রোলা।

রিহার্সালের দৃশ্য
রিহার্সালের দৃশ্য

জাপানে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতি লালনের প্রত্যয় নিয়েই প্রবাস প্রজন্ম, জাপানের জন্ম ৷ তাই জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশি সকল ব্যবসায়ী, সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন, প্রবাসী শিশুকিশোরদের বাবা-মাসহ বেশির ভাগ প্রবাসী তাদের সহযোগিতার হাত প্রসার করেন ৷ পরম মমতায় বরণ করে নেন প্রবাস প্রজন্মের প্রতি বছরের এই আয়োজনকে। ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখেন বুকের গভীরে। আর প্রতীক্ষায় থাকেন পরের বছরের।

কাজী ইনসানুল হক: টোকিও, জাপান।